কখনও মুশলধারে বৃষ্টি আবার কখনো প্যাচপ্যাচে গরম। এই বৈপরীত্যই বর্ষার চরিত্র। কিন্তু এই কখনও গরম কখনও ঠান্ডা জন্ম দেয় নানান অসুখ-বিসুখের। এদের প্রতিকারের জন্য আয়ুর্বেদে আছে বর্ষার ঋতুচর্যা। চরক সংহিতায় এই প্রসঙ্গে বলা আছে যে বর্ষায় ঠান্ডা কনকনে জলে স্নান বা খুব রোদে বেরনো অনুচিত। দিবানিদ্রা একেবারেই চলবে না। বর্ষার কখনও গরম, কখনও ঠান্ডা আবহাওয়া হজমের গণ্ডগোল এবং অ্যাসিডিটির কারণ হতে পারে। এই সময় ঘৃত দ্বারা প্রস্তুত খাদ্য খাওয়া ভালো। রোজ অল্পমাত্রায় মধু খেতে পারেন। এই সময় বাতদোষের বৃদ্ধি হয়। এই কারণে টক এবং লবণ স্বাদের খাদ্য খেতে হবে। গমজাত খাবার, ভাত, গরম মাংসের ঝোল খাওয়া যায়। পানীয় জল হবে বিশুদ্ধ। নিয়মিত স্নান, ভেষজ দ্রব্য দিয়ে গাত্র মার্জন, হালকা সুতির পোষাক ব্যবহার বর্ষায় চর্মরোগকে দূরে রাখে। এই সময় ড্যাম্প ফ্রি ঘরে থাকা একান্ত প্রয়োজনীয়।
বর্ষাকালের রোগগুলির মধ্যে জ্বর, কমন কোল্ড বা সর্দি, কাশি, টাইফয়েড, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া হেপাটাইটিস, ফাঙ্গাল ইনফেকশন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
জ্বর: জ্বরের প্রথম অবস্থায় যতটা সম্ভব হালকা খাবার এবং সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত জল খেতে হবে। বমিভাব না থাকলে অন্যান্য তরল পানীয় যেমন ডাবের জল, ফলের রস, চলতে পারে। দারচিনি অথবা যষ্টিমধু জলে ফুটিয়ে ছেকে সেই জল পান করতে পারেন। এছাড়া গরম জলে সামান্য মধু ও মরিচ চূর্ণ মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।
মাথাব্যথা: যাদের প্রায়ই মাথাব্যথা হয়, তাদের জন্য বর্ষাকালে খুব ঠান্ডা জলে স্নান এবং অতিরিক্ত রোদের তাপ ক্ষতিকর। অনুতৈল বা দশমূল তৈলের ন্যাসাল ড্রপ ব্যবহার করলে উপকার হয়।
সর্দি-জ্বর: অল্প গরম জলে পিপুল চূর্ণ, ত্রিকুটচূর্ণ অথবা যষ্টিমধু চূর্ণ নিয়মিত খেলে এই সমস্যা দূরে থাকে। সর্দি-জ্বরে অরুচি ও বমিভাব থাকলে অল্প গরম জলে মধু-লেবুর রস দারচিনি চূর্ণ মিশিয়ে খেলে কাজ হবে। এছাড়া তুলসী ও আদার রস এই জ্বরে বেশ উপকারি।
টাইফয়েড: আয়ুর্বেদে একে বলা হয় বিষম জ্বর। ছাতিম ছালের ক্বাথ এতে খুব উপকারী। আমলকী, শুঁঠ, গুলঞ্চ সমমাত্রায় নিয়ে ক্বাথ তৈরি করতে হবে (অর্থাৎ চারগুণ জলে ফুটিয়ে একভাগ জল অবশিষ্ট থাকতে নামাতে হবে)। এই ক্বাথ ছেকে নিয়ে পিপুল চূর্ণ ও মধু দিয়ে পান করলে বিষম জ্বরে উপকার হয়।
ডেঙ্গু: এতে গুলঞ্চের ক্বাথ, তুলসীর রস, গুলঞ্চ সত্ত্ব প্রভৃতি উপকারি। প্রতিদিন ৫ মিলি মাত্রায় পেঁপে পাতার রস হেমারেজ প্রতিহত করতে সাহায্য করে। আবার অতিরিক্ত পেঁপে পাতার রস ও শরীরের পক্ষে ভালো না, বেশী মাত্রায় খেলে ডাইবিয়া হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
ম্যালেরিয়া: শুঁট চূর্ণ, ছাতিম ছালের ক্বাথ, গুলঞ্চ সত্ত্ব, ধনে চূর্ণ, হরিতকি চূর্ণ এই রোগে উপকারি।
ডায়েরিয়া ও ডিসেন্ট্রি: এই সমস্যায় বিশুদ্ধ পানীয় জল ব্যবহার করতে ।হালকা খাবার বা তরল খাবার খাওয়াই ভালো। বেল ফলের মজ্জা, পিপুল, শুঁট একসঙ্গে বেঁটে গুড় দিয়ে খেলে ডিসেন্ট্রিতে উপকার হয়। এছাড়া ঘট বটি, লবঙ্গাদি বটি, রামবান রস প্রয়োগ করলে উপকার হয়।
বাচ্চাদের কাশিতে বেদানার রস খাওয়ালে উপকার হয়। সামান্য আদা, মরিচ এবং নুন জলে ফুটিয়ে ছেঁকে ওই জল পান করলে বর্ষাকালীন কাশিতে খুব উপকার হয়। নিয়মিত আমলকি খেলে বর্ষাকালীন সর্দি কাশি থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
হেপাটাইটিস এ: এটি দূষিত জল ও খাদ্যের মাধ্যমে ছড়ায় এবং বর্ষাকালে এর প্রকোপ বাড়ে। ভূমি আমলকী, কালমেঘ, ত্রিফলা এই রোগের উপকারি ভেষজ।
ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণ বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন: নিমপাতা ও তিল একসঙ্গে পেস্ট করে লাগালে উপকার হয়। এছাড়া স্নানের পর পুরো সরিরে চন্দন মাখলেও ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে ত্বককে রক্ষা করা জায়। এছাড়া স্নানের জলে কর্পূর মিশিয়ে স্নান করলে শরীরের ব্যাকটেরিয়া মরে যাই ও সারাদিন বেশ তরতাজা অনুভূতি হয়।
- Sushmita Kundu
Share your comments