অনুকূল পরিবেশ ও প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি ধান উৎপাদনে এগিয়ে আছে। বিশ্বে ধান উৎপাদনে চিনের (৬২%) পরেই ভারতের (২৩%) স্থান। পশ্চিমবঙ্গের কর্ষিত ভূমির প্রায় ৭১ শতাংশে ধান চাষ হয়ে থাকে। আমাদের রাজ্যবাসির প্রধান খাদ্য ধান। একবেলা ভাত খাওয়া না হলে বাঙালির খাওয়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই ধান চাষ এরাজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দার্জিলিঙ, পুরুলিয়া ও কোলকাতা বাদে রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই ধান চাষ হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ধান উৎপাদনের জন্য পূর্ব বর্ধমান জেলাকে রাজ্যের ‘ধানের গোলা’ বলা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা মূলত নিজেদের খাবার প্রয়োজনের ধানটুকু চাষ করেন আর উদ্বৃত্ত অংশটি বিক্রি করেন যাতে লাভের পরিমান থাকে খুবই কম। রাজ্যের কৃষকরা ধান চাষে লাভের পরিমান বাড়াতে জৈব উপায় উচ্চফলনশীল ধান চাষের সাথে দেশীয়, সুগন্ধী ধান চাষ করতে পারেন যার অন্তর্দেশীয় বাজারে চাহিদা ও মূল্য যথেষ্ট্ বেশী। তবে যে সমস্ত অঞ্চলে জমি ধানচাষের যোগ্যতা হারিয়েছে সেখানে আধুনিক লাভজনক ফল যেমন ড্রাগনফ্রুটের চাষ করলে একদিকে যেমন জমি ফেলে রাখতে হবেনা উপরন্তু অধুনিক ফল রপ্তানি করে কৃষকরা লাভবান হতে পারবেন।
বর্তমানে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে মৌসুমি বৃষ্টিপাত খামখেয়ালী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিপাত কোথাও খুব বেশী আবার কোথও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হওয়ার কারণে ধানচাষে বৃষ্টি নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। বিভিন্ন আধুনিক ধান চাষ পদ্ধতি যেমন শ্রী পদ্ধতি, সুধা পদ্ধতি ও ড্রাম সিডারের মত কৃষি যন্ত্রগুলি ব্যবহার করে কম সময়ে ও প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় কম জল ব্যবহার করে উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ও প্রশিক্ষণ দিতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কৃষি দপ্তরগুলি। বিগত কয়েক দশক ধরে অতিরিক্ত কৃষিবিষ প্রয়োগে অনুর্বর হয়ে যাওয়া জমিকে পুনরায় উৎপাদনশীল ও উচ্চফলনশীল করতে প্রচুর জৈব সারের প্রয়োজন, তাছাড়া উৎপাদন বাড়াতে উচ্চফলনশীল বীজ ও রাসায়নিক সারেরও প্রয়োজন যে কারণে ধানচাষে খরচ ক্রমশ বেড়েছে আর লাভের পরমান কমেছে। তবে একথা অনস্বীকার্য যে খাদ্যশস্যের ঘাটতি জনিত সমস্যা দূর করতে ও শস্যভান্ডার পরিপূর্ণ রাখতে ধান চাষকে লাভজনক করতে ধানচাষীদের ব্যবহার করতে হবে অধুনিক জৈব প্রযুক্তি।
রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)
Share your comments