আমাদের দেশে অনেকেই মৎস্য চাষ করে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু সঠিক তথ্যের অভাবে অনেক সময়ই চাষীভাই ও বোনেরা লাভের পরিবর্তে প্রভুত লোকসান করে থাকেন। তবে চাষের ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে যেমন জলের ভৌত গুণাগুণ, মাটির ক্ষারের মাত্রা ইত্যাদির মাত্রা নির্ধারণ করে চাষ করলে লাভের মুখ দেখবেন সহজেই।
কীভাবে পোনা চাষ করবেন? তাপমাত্রা, জলের গভীরতা, অক্সিজেনের পরিমাণ কতটা হলে মাছ সুস্থ থাকবে? দেখে নেওয়া যাক।
এক নজরে পোনা মাছ চাষের জন্য জল ও মাটির ভৌত – রসায়ন গুণাগুণ কেমন হলে ভালো হয়?
নীচে উল্লেখিত টেবিলের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করা হল –
মাপদন্ড |
অনুকূল মাত্রা |
মন্তব্য |
১) তাপমাত্রা |
২০-৩০° C |
তাপমাত্রা ২০° C –এর নীচে রাখলে ও ৩৫° C -এর ওপরে গেলে মাছের বৃদ্ধি ভালো হয় না। মাছ অস্বস্তি বোধ করে। |
২) জলের গভীরতা |
আঁতুড় পুকুর – ১ মি. পালন পুকুর – ১.৫ মি. মজুত পুকুর – ১.৫ - ২ মি. |
মজুত পুকুরের জলের গভীরতা যেন এক মিটারের কম কোন অবস্থাতেই না হয়। |
৩) স্বচ্ছতা |
৩০ – ৪০ সেমি. |
জলের স্বচ্ছতা ২০ সেমি.-র নীচে গেলে ভোরের দিকে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যেতে পারে আর ৫০ সেমি.-র ওপরে গেলে প্রাকৃতিক খাদ্যের ঘাটতি হবে। |
৪) দ্রবীভূত অক্সিজেন |
প্রতি লিটার জলে ৫ – ৮ মিলিগ্রাম |
প্রতি লিটার জলে অক্সিজেন ৩ মিলিগ্রামের নীচে বাঞ্ছনীয় নয়। |
৫) দ্রবীভূত কার্বন ডাই অক্সাইড |
প্রতি লিটার জলে ৫ – ১৫ মিলিগ্রাম |
১৫ মিলিগ্রামের বেশী হলে জলে মাছের শ্বাসকার্য চালাতে অসুবিধা হয়। |
৬) pH |
৭.০ – ৮.০ |
৬.৫ বা তার কম কিংবা ৯ ও তার বেশী হলে মাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। |
৭) মোট অ্যালকালাইনিটি (বা ক্ষারকীয়তা) |
প্রতি লিটার জলে ৮০ – ২৫০ মিলিগ্রাম |
প্রতি লিটার অলে ৩০ মিলিগ্রামের কম বা ৩০০ মিলিগ্রামের বেশী হলে চাষ ব্যাহত হয়। |
৮) মাটির Ph |
৬.৫ – ৭.০ |
৫.৫ বা তার কম বা ৮.৫ –এর ওপরে হলে মাছ চাষ ব্যাহত হয়। তখন প্রয়োজন মাফিক চুনের প্রয়োগ করে তবেই চাষ করতে হবে। |
৯) ব্যবহারযোগ্য ফসফরাস |
প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে ৬ মিলিগ্রাম |
১০০ গ্রাম মাটিতে ৩ মিলিগ্রামের কম ফসফরাস থাকলে চলবে না। |
১০) ব্যবহারযোগ্য নাইট্রোজেন |
প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে ৫০ – ৭৫ মিলিগ্রাম |
১০০ গ্রাম মাটিতে ২৫ মিলিগ্রামের কম নাইট্রোজেন থাকলে পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যকণা তৈরী বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। |
মাসে একবার করে পুকুরে জাল টানা, অতিরিক্ত পাঁক থাকলে রেকিং পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা ও মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, জলে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমাণ, জলের স্বচ্ছতা, তার গভীরতা ইত্যাদি বিষয়গুলির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে উপরোক্ত পদ্ধতি মেনে পোনা মাছের চাষ করলে চাষীভাই-বোনেরা যথেষ্ট লাভবান হবেন।
স্বপ্নম সেন(swapnam@krishijagran.com)
তথ্যসূত্র - ড. প্রতাপ কুমার মুখোপাধ্যায়
Share your comments