ব্যবসার প্রতি আগ্রহ তো অনেকেরই রয়েছে, কিন্তু এই প্রতিযোগিতার বাজারে ঠিক কিসের ব্যবসা করলে বেশী লাভ হবে? অনেকে আবার উদ্বিগ্ন থাকেন এই ভেবে যে, ব্যবসায় পুঁজি তো বিনিয়োগ করবেন, কিন্তু তিনি লোকসানের সম্মুখীন হবেন না তো? দ্বন্দের মধ্যে থাকেন, কীসের ব্যবসা শুরু করবেন। সেই সকল মানুষদের জন্য রয়েছে একটি অনন্য লাভজনক ব্যবসায়িক ধারণা।
বাজারে গো-বর্জ্য (Cow Dunk) থেকে তৈরি পণ্যের চাহিদা বাড়ছে এবং ভবিষ্যতে দেশে এর চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে। এই ব্যবসার (Business Idea) প্রতি মানুষের আগ্রহ ক্রমশই বাড়ছে। গো-বর্জ্য থেকে তৈরি বিভিন্ন জিনিসের ব্যবসায় প্রথম মাসে আপনি সহজেই ন্যূনতম ১০,০০০০ টাকা এবং ষষ্ঠ মাস থেকে প্রায় ৬০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। আর এই নতুন ব্যবসা আপনি শুরু করতে পারবেন মাত্র ৫০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেই।
চলুন দেখে নেওয়া যাক গো-বর্জ্য থেকে কি কি তৈরি করা যায়?
১) গোবর থেকে জৈব সার -
গোবর ও গোমূত্র দিয়ে নানান জৈব সার তৈরি করা যেতে পারে। গোমূত্র ১ লিটার, কাঁচা গোবর ১ কেজি, মিছরি ১০০ গ্রাম ও জল ১০ লিটার একত্রে মিশিয়ে ছেঁকে নিয়ে ফসলের পাতায় স্প্রে করলে ফসল ভালো হয় ও রোগ থেকে রক্ষা করে। গোমূত্র, কাঁচা গোবর, সর্ষের খোল, চিটে গুড়, নিম খোল, বেসন, ছানাকাটা জল, ফেলে দেওয়া টক দইয়ের সাথে পরিমাণ মতো জল মিশিয়েও তরল জৈব সার তৈরি করা যায়। এই সার ছেঁকে নিয়ে স্প্রে করলে ফসলে পোকা ও রোগ হয় না।
২) গোবর থেকে তৈরি কাগজ -
অনেকেই হয়তো জানেন না কাগজ তৈরির ক্ষেত্রে গোবরের প্রয়োজন হয়৷ তাই কাগজ তৈরির ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে৷ গোপালক হলে এই ব্যবসার ক্ষেত্রে আরও সুবিধা হয়৷ গোবর থেকে তৈরি কাগজের মান বেশ উন্নত। তৈরি করা যেতে পারে ক্যারি ব্যাগও৷ দেশে যখন প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধ করা হচ্ছে, সেখানে জৈব উপাদানে তৈরি ক্যারি ব্যাগের চাহিদা বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে এটি পরিবেশ বান্ধবও৷
৩) ভেজিটেবল ডাই –
গোবর কাজে লাগানো হয় ভেজিটেবল ডাই-এর ক্ষেত্রে৷ এটি রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় ভেজিটেবল ডাই এবং উদ্ভিজ্জ রঙ হিসেবে এর ব্যবহার প্রচলিত৷ অবিশ্বাস্য মনে হলেও, বড় পাত্রে গোবর এবং জল দিয়ে সারারাত সুতির কাপড় ভিজিয়ে রেখে তা ব্লিচ করেন অনেকে৷ এই ভেজিটেবল ডাই-এর চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে৷
আরও পড়ুন - কম সময়ে অতিরিক্ত উপার্জন করতে চান? বাঁশের তৈরি পণ্যের ব্যবসায় আয় করুন প্রচুর অর্থ (Bamboo Products Business)
৪) গোবর থেকে কাঠ –
গোবর দিয়ে তৈরী কাঠ পরিবেশবান্ধব। এই কাঠ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যজ্ঞ-পূজা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে এর চাহিদা। এই কাঠ তৈরি করতে, আপনাকে একটি মেশিন নিতে হবে। তারপরে আপনাকে এটিতে গোবর, শুকনো খড় এবং ঘাস দিতে হবে। যা দিয়ে এই কাঠ তৈরী হবে। প্রাকৃতিক কাঠের থেকে এটি প্রতি কুইন্টাল ৬০০ টাকায় বিক্রি হবে।
কাঠের জন্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স -
গোবর তৈরীর এই লাভজনক ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার কয়েকটি লাইসেন্সের প্রয়োজন -
ট্রেড লাইসেন্স (Trade License) -
যে কোনও ব্যবসা শুরু করতে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে, তবেই আপনি ট্রেড লাইসেন্স পাবেন।
এমএসএমই নিবন্ধকরণ (MSME Registration) -
আপনি যদি এমএসএমই-এর আওতায় ব্যবসায়িক নিবন্ধন করেন, তবে আপনি ব্যবসায় ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য সহজেই লোণ পাবেন। এজন্য ব্যবসায়ের জন্য এমএসএমই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এনওসি (Pollution Control Board NOC):
আপনি যদি গোবর কাঠ তৈরির জন্য কোনও ধরণের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন তবে এর জন্য আপনাকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কাছ থেকে এনওসি পেতে হবে, এটি কোনও বাধ্যবাধকতার শংসাপত্র নয়।
গোবর কাঠ কোথায় বিক্রি করবেন -
-
আপনি এই কাঠ ধর্মীয় জায়গায় বিক্রি করতে পারেন।
-
এর তৈরী টালিও এখন বাজারে চলছে, সুতরাং তার অর্ডার নিতে পারেন।
-
আরও ভাল লাভের জন্য আপনি অনলাইনেও এর বিপণন করতে পারেন।
-
এর পাশাপাশি, গোবর থেকে তৈরি অন্যান্য পণ্য যেমন মূর্তি, ফেসপ্যাক এবং বিভিন্ন ঔষধি ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার হয়।
আরও পড়ুন - সয়া পনির থেকে উপার্জন করুন লক্ষ লক্ষ টাকা, কীভাবে জানুন বিস্তারিত (Tofu Business)