আখ গাছ খুব বৈষয়িক একটি গাছ। প্রায় ৩৬ থেকে ৩৭ ধরণের আখ গাছ দেখতে পাওয়া যায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। রস এমন একটি খাদ্য যা সাধারণত আমরা বিভিন্ন ফলের মধ্যে উৎপন্ন প্রাকৃতিক রস নিঙরে পেয়ে থাকি। আখ গাছের রস সাধারণত ক্ষারকীয় প্রকৃতির হয় কারণ আখ গাছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ও ম্যাঙ্গানিজ থাকে। আখ গাছ হলো প্রধান গাছ যা থেকে আমরা চিনি উৎপাদন করতে পারি। পৃথিবীর প্রায় ৭০% চিনি আখের রস থেকে তৈরী হয়, ৩০% চিনি তৈরী হয় বীট থেকে।
আখের রস হল ডাইউরেটিক যার অর্থ হল এটি মূত্র নালী সংক্রান্ত সকল প্রকার সংক্রমণকে ব্যাহত করতে সক্ষম। আখের রস আমাদের কিডনি পরিষ্কার রাখে এবং বৃক্কে পাথর সংক্রান্ত রোগভোগকে প্রতিহত করে। এছাড়া আখের রস যকৃৎকে সুস্থ রেখে জন্ডিস এর মতো ক্ষতিকারক রোগ প্রতিহত করতে পারে। জন্ডিস হল সেই রোগ যা আমাদের চামড়া ও বিভিন্ন প্রকারের পর্দা হলুদ করে দেয় কারণ জন্ডিস হলে আমাদের রক্তে বিলিরুবিন এর মাত্রা বেড়ে যায়, যেটি আমাদের যকৃৎ এর স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা বিনষ্ট করে।
আখের রসে সুষম শর্করা, প্রোটিন, আয়রন, পটাশিয়াম, ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিদ্রব্য বর্তমান থাকে যা আমাদের ক্ষেত্রে একটি শক্তিপ্রদায়ী পানীয় হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রখর গ্রীষ্মে এক গ্লাস ঠান্ডা আখের শরবৎ আমাদের শরীর ও মনের মধ্যে স্ফূর্তি এনে দেয় যা আমাদের শরীরে ক্রমহ্রাসমান শক্তিকে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম ফলে পরিশ্রমে মন আসে। আয়ুর্বেদের মতে আখের রসে একধরণের লোধযুক্ত পদার্থ থাকে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের স্বস্তি প্রদান করে। এই রসে ক্ষারীয় ধর্ম থাকার কারণে, এটি পাকস্থলীর অম্লভাবকে কাটাতে পারে এবং পাকস্থলীর প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয়। এই রসের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স খুব কম থাকায় ডায়াবেটিক রোগীর পক্ষে খুব উপযোগী হিসাবে পরিগণিত হয়। এছাড়াও আখের রসে এমন কিছু বস্তুগত ক্ষমতা রয়েছে যা দাঁতের ক্ষয় ও নিশ্বাসে দুর্গন্ধ আটকায়।
সমস্ত মানুষের আখের রসের উপকারী গুণাগুণগুলি সম্পর্কে অবহিত থাকা উচিত। এটি আমাদের অনেক অযাচিত দৈহিক সমস্যাকে প্রতিহত করে। আসলে আখের রস আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে রোগভোগ ও ইনফেকশনগত সমস্যা শরীর অনেকটাই নিজে থেকে প্রতিহত করতে পারে কারণ এই রস একধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই নিশ্চিন্ত আখের রস খান ও সুস্থ থাকুন।
- প্রদীপ পাল
Share your comments