সমগ্র দেশে করোনভাইরাসের বিরূপ ক্রমবর্ধমান ঘটনায় লকডাউনের সম্প্রসারণ হচ্ছে, কেন্দ্র কৃষকদের জন্য উদ্বিগ্ন, ন্যায্য দামে কৃষকরা তাদের পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। কৃষকদের বেশীরভাগ পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পচনশীল জিনিসগুলির দাম হ্রাস করতে তারা বাধ্য এবং এর ফলে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। তাদের যাতে আর ক্ষতি না হয়, তার জন্যে কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য সরকার বেশ কয়েকটি অ্যাপ্লিকেশন এবং প্রকল্প প্রচলনের মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা করার চেষ্টা করে চলেছেন।
কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে, তাদের সাহায্যার্থে বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলিও সহযোগিতা করে চলেছে। প্রধান ফসলের সাথে সাথী ফসল/নগদ ফসল ইত্যাদি চাষের মাধ্যমে কীভাবে লকডাউনেও বেশী অর্থ উপার্জন করা যায়, তার জন্য প্রতিটি জেলায় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রগুলি কৃষকদের সহায়তা করে চলেছে।
সুতরাং, কোন কৃষক যদি স্বল্প ব্যয়ে বেশী মুনাফা অর্জন করতে চান, তবে ঐতিহ্যবাহী ফসলের পাশাপাশি নগদ ফসলের চাষ করতে পারেন। হ্যাঁ, নগদ ফসলে লাভের সম্ভাবনা সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরে বসবাসকারী কত কৃষক আজ ফুলচাষ থেকে ভাল আয় করছেন। এখানে কৃষকরা এই সময়ে ফুলের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। বিশেষ বিষয়টি হ'ল কেবল পুরুষরা নয়, মহিলা কৃষকরাও এই ফুলের চাষাবাদ করে থাকেন। এখানকার ফুলের ক্ষেত সকলকেই মুগ্ধ করে। সারা বছরই এখান থেকে ফুল বাইরে রপ্তানি করা হয়। শুধু আমাদের রাজ্যেই নয়, বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় বসবাসকারী অনেক কৃষক আজ ফুলের চাষ থেকে অতিরিক্ত মুনাফা আয় করছেন। পূর্ণিয়া জেলার ধামদহ ব্লকে ডুমারিয়া গ্রামের অর্ধশতাধিক কৃষক (পুরুষ ও মহিলা উভয় কৃষকরা) ৪০ একর জমিতে কেবল লিলির চাষ করছেন।
অতিরিক্ত মুনাফার উপায় -
এখানকার কৃষকদের মতে, কৃষিকাজ বাদে এর সাথে কিছু কাজ সংযুক্ত করায় প্রচুর লাভ হচ্ছে। তারা গাঁদা চাষ করে বাজারে বিক্রি করেন। মূল্য সংযোজনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে স্থানীয় কৃষকরা নিজেরাই এই ফুল থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন। খুচরো ফুল, তোড়া এবং মালা আকারে বাজারে ফুল বিক্রি করলে বেশী লাভ হয়। কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এক বছরে সাধারণত চার প্রকারের চাষ করে থাকেন এই কৃষকরা।
অনলাইনে পণ্য বিক্রয় করে লাভবান কৃষক-
অনলাইনে এখন আমরা বেশীরভাগ মানুষ পণ্য ক্রয় করে থাকি। কৃষকদের জন্যও এই অনলাইনে রয়েছে বিভিন্ন সুবিধা। লকডাউনে পরিবহন ব্যবস্থায় বিধিনিষেধ থাকায় অনেক কৃষকই নিজের পণ্য নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু এখানকার কৃষকরা দেখিয়েছেন, লকডাউনেও পণ্য বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করা যায়। তাদের মতে আজ অনলাইন ব্যবসার সময় এসেছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় আমাদের প্রাথমিকভাবে বাঁধা এলেও তা অতিক্রম করতেই হয়। আর এই কৃষকরা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই কৃষকরা তাদের ফুল বিক্রয় করতে বিভিন্ন ধরণের সোশ্যাল মিডিয়ায় এসেছেন। তাদের বাড়ি থেকেই অনলাইনের মাধ্যমে ফুল ক্রেতাকে বিক্রয় করা হয়। তাদের মতে এতে বিশেষ সুবিধাও হয়েছে, বাইরে বাইরে পণ্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাদের ঘুরতে হচ্ছে না, উপরন্তু এতে সংক্রমণের ভয়ও নেই। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হল, অনলাইনে বহু মানুষ তাদের পণ্য দেখতে পাওয়ায় স্থানীয় অঞ্চল ছাড়া পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতেও ক্রেতা রয়েছেন, স্বাভাবিকভাবেই এতে তাদের বিক্রয়ের পরিমাণ বেড়েছে, মুনাফাও হচ্ছে অনেকটাই।
Related Link -