আমাদের রাজ্যে পোল্ট্রি পালন এক লাভজনক ব্যবসা রূপে পরিচিত। পোল্ট্রি পালনের মধ্যে ৯০% মুরগী পালন করা হয়। কারণ প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের উৎস বলে মুরগীর মাংস ও ডিমের চাহিদা যথেষ্ট বেশী। তবে ইদানিং কোয়েল, টার্কি, এমু ইত্যাদির চাহিদা বেড়েছে। আমাদের দেশে পোল্ট্রি পালন যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত এটি গ্রামীণ যুবক যুবতিদের কর্মসংস্থান যোগাতে সহায়তা করে।
মুরগী পালন পদ্ধতি প্রধানত তিন প্রকারের হয়, যেমন –
(১) মুক্তাঙ্গন পদ্ধতি -
এই পদ্ধতিতে সাধারণত দেশি মুরগীই চাষ করা হয়। তবে প্রতি মুরগীকে গড়ে ৩৫ -৫০ গ্রাম করে প্রতিদিন সুষম দানা খাদ্য খাওয়ালে ডিমের পরিমাণ বাড়ে। এই খাবার বাজারে কিনতে পাওয়া যায় আবার স্থানীয় ভাবে তুলনামূলকজ কম খরচে বাড়িতেও বানানো যায়, এর জন্য প্রয়োজন –
খুদ বা গম ভাঙ্গা বা ভুট্টা ভাঙ্গা – ৩২%
চালের কুড়ো – ২৫%
সরষের খোল – ৪০%
খনিজ পদার্থ – ২%
খাদ্য লবণ – ১%
মোট – ১০০%
এই ১০০ কেজি মিশ্রণের সঙ্গে ভিটামিন (A,B2,D2) ২৫ গ্রাম করে মেশাতে হবে।
(২) অর্ধ-আবৃতাঙ্গন পদ্ধতি –
এই পদ্ধতিতে মুরগী স্বাধীনভাবে বিচরণ করলেও একটা নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের বাইরে যেতে পারে না। এই পদ্ধতিতে মুরগীর ঘর তৈরী করতে হয় ও ঘর সংলগ্ন কিছুটা জায়গা ঘেরা থাকে যাতে মুরগীগুলি স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারে।
(৩) আবৃতাঙ্গন পদ্ধতি, এই পদ্ধতি আবার দুই প্রকারের –
(ক) ডিপলিটার পদ্ধতি
(খ) খাঁচায় মুরগী পালন
মুরগী পালন লাভজনক করতে খাবারের দিকে বিশেষ নজর প্রয়োজন। মুক্তাঙ্গনে ও খামারে পালিত মুরগীকে খাবারের উচ্ছিষ্ট, পোকামাকড়, সবজির খোসা, মুড়ি, চাল, ক্ষুদ - কুঁড়ো, ভাতের মাড় ইত্যাদির সঙ্গে ভিটামিন ও খনিজ লবন মিশিয়ে দিলে ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। মুরগীর খাবারে গেঁড়ি গুগলি থাকলে মুরগীর প্রাণিজ প্রোটিনের চাহিদা মেটে ও ডিমের খোসা মোটা হয়, সহজে ভাঙে না ।
মুরগীকে নিয়মিত সবুজ খাদ্যের সরবরাহ দিলে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়।
খামারের মুরগীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিয়মিত ভ্যাকসিন দেওয়া প্রয়োজন।
মুরগীর খাবারের পাত্র সপ্তাহে একদিন পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও জলের দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত।
মুরগীকে সবসময় বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ করা উচিত। গরমের সময় অবশ্যই ঠান্ডা বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করা উচিত। জলের সাথে অনেক সময় জীবাণুনাশক মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। মুরগীর জলের জায়গা উলটে মেঝে বা লিটার যাতে ভিজে না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
মুরগীর কিছু রোগ -
ব্যাকটেরিয়া রোগ:
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগগুলি ব্যাকটেরিয়া রোগ হিসাবে পরিচিত, যেমন - কলেরা, পুলোরাম ইত্যাদি।
ছত্রাকের রোগ:
এই ধরনের রোগ ছত্রাকের মাধ্যমে হাঁস-মুরগীদের আক্রমণ করে। স্পারজিলিসিস, ফিভাস, থ্র্যাশ, ইত্যাদি।
পরজীবী রোগ:
মাইক্রোপ্লাজোসিস, কোলবিসিলিসিস, স্টেপটোক্যাকিচ, কোকিসিওডিসিস, এস্পিজিলিসিস, ওয়ার্মস ইত্যাদি পরজীবী হাঁস ও মুরগীর রোগ।
ব্রয়লার মুরগীর কিছু ঔষধ –
১ দিন – গ্লুকোজ (৫০গ্রাম), ইলেকট্রোলাইট (২০ গ্রাম) ও ডিসট্রেস পাউডার (০.৫)গ্রাম – ১০০ টি পাখির জন্য পানীয় জলে মেশাতে হবে।
২-৪ দিন – সকালে জলে ভিটামিন ও বিকেলে জলে অ্যান্টিবায়োটিক।
৫-৭ দিন – পানীয় জলে ভিটামিন-A ও ভিটামিন-B কমপ্লেক্স।
১২-১৪ দিন - পানীয় জলে ভিটামিন।
১৫-২১ দিন – খাদ্য বা পানীয় জলে লিভার টনিক।
২৯-৩২ দিন – সকালের জলে ভিটামিন ও বিকেলের জলে বা খাবারে লিভার টনিক।
৩৩-৩৫ দিন – জলে বা খাদ্যে লিভার টনিক।
টীকা –
প্রথম বা দ্বিতীয় দিন – মরেক্স রোগের টীকা।
ষষ্ঠ বা সপ্তম দিন – রানীক্ষেত রোগের টীকা
চোদ্দ তম দিন – গামবোর রোগের টীকা।
একুশ-তেইশ তম দিন – রানীক্ষেত রোগের প্রতিষেধক টীকা।
আঠাশ তম দিনের মধ্যে – ককসিডিয়া নাশক ঔষধ প্রতিষেধক হিসেবে।
Share your comments