সৌদি আরব ও বাংলাদেশ এই ফলকে ত্বীন নামে ডাকলেও অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে ভারত, তুরস্ক, মিসর, জর্দান ও যুক্তরাষ্ট্রে এটি আঞ্জির নামে পরিচিত। মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম এশিয়ায় এ ফলের উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে করা হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল (Cash crop)।
ভারত, আমেরিকা ও আফ্রিকা সহ অনেক দেশে ডুমুরের চাষ হয়। এই ফলটি সতেজ এবং শুকনো উভয় রূপেই ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, পাকা ডুমুর মোরব্বা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত শীতকালীন এবং শুষ্ক জলবায়ুতে ডুমুর চাষ হয়ে থাকে। ভারতে তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাট এবং উত্তর প্রদেশের কয়েকটি অঞ্চলে এর চাষ হয়।
ডুমুর উন্নত জাত (High yield) –
ডুমুর বিভিন্ন ধরণের আছে। ভারতে, প্রধান জাতগুলি নিম্নরূপ যেমন ইন্ডিয়ান রোক, এলিফ্যান্ট ইয়ার, কৃষ্ণা, ওয়েপিং ফিগ, হোয়াইট ফিগ। অন্যান্য দেশের জাতের মধ্যে ব্রাউন টার্কি, ব্রান্সউইক এবং ওসবার্ন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
কোন মরসুমে চাষের উপযোগী -
অনেক জাতের বহু ডুমুর সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। কিছু ডুমুর বেগুনি রঙের, কিছু সবুজ বা বাদামী। উষ্ণ আবহাওয়া ডুমুর চাষের পক্ষে অনুকূল বলে বিবেচিত হয়। মরুভূমির জলবায়ু এটির চাষের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। এর চাষের জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই উদ্ভিদ সাধারণত বসন্তে বপন করা উচিত। সাধারণত ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে উদ্ভিদ ফলধারণে প্রস্তুত হয়ে যায়। গ্রীষ্মের শেষার্ধে অথবা শরতে এই উদ্ভিদে ফল ধরতে শুরু করে।
মাটির প্রস্তুতি -
যদিও এর চাষের জন্য কোনও বিশেষ মাটির প্রয়োজন হয় না, তবে বেলে মাটি ডুমুর চাষের জন্য উপযুক্ত, মাটির পিএইচ মান ৭ বা তার থেকে কিছুটা কম হওয়া উচিত। ডুমুর গাছ রোপণের জন্য একটি গর্ত খনন করতে হবে, যার গভীরতা হবে ১ থেকে ২ ইঞ্চি। সার ৪-৮-১২ অনুপাতে ব্যবহার করতে হবে। রোপণকালে অতিরিক্ত শিকড়গুলি ছাঁটাই করে নিন। রোপণের পর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী উদ্ভিদের পরিচর্যা করতে হবে। মনে রাখবেন, ডুমুর গাছে বেশি পরিমাণে জলের প্রয়োজন হয় না, সপ্তাহে প্রয়োনানুযায়ী একবার বা দুবার জল দেওয়া যেতে পারে। আগাছা সময়ে পরিষ্কার করতে হবে।
উদ্ভিদ পরিচর্যা -
ডুমুর গাছের চারপাশে ঘাস লাগাতে হবে। এই ঘাস গ্রীষ্মের মরসুমে গাছের চারপাশে আর্দ্রতা বজায় রাখবে এবং শীতকালে এটি হিম থেকে উদ্ভিদটিকে রক্ষা করবে। দ্বিতীয় বছর গাছ ছাঁটাই করা প্রয়োজন। ৪-৫ টি শক্তিশালী ডাল রেখে উদ্ভিদের ছাঁটাই করা উচিত। ছাঁটাই গ্রীষ্মে করা উচিত।
আরও পড়ুন - কৃষিক্ষেত্রে জৈব কীটনাশক কেন ব্যবহার করবেন কৃষকবন্ধুরা
ফল সংগ্রহে সতর্কতা -
ফল সংগ্রহের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। উদ্ভিদ থেকে একবার ফল পেড়ে ফেলার পরে তা একবারে পাকা হয় না। অতএব, কেবল পাকা ফলগুলিই সংগ্রহ করা উচিত। এর পাকা ফল কিছুটা নরম হবে। ফল তোলার সময় হাতে গ্লাভস ব্যবহার করবেন, কারণ ফল তোলার সময় এর থেকে বের হওয়া রস আপনার হাতে লাগলে ত্বকে চুলকানির মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়।
চাষে লাভ –
আঞ্জিরের দুই মাস বয়সী চারার পাইকারি মূল্য ৫২০ টাকা ও খুচরা মূল্য ৭২০ টাকা। সুতরাং, এই উদ্ভিদের চারা বিক্রি করলেও লাভের পরিমাণ বেশ ভালোই।
আর বড় জায়গায় চাষ করলে ফার্ম থেকে আয় হবে যথেষ্টই। কারণ এতে রোগপোকার আক্রমণ খুব একটা বেশী হয় না। এক একর জায়গায় চাষ করলে চাষের খরচ বাদে লাভ হবে- মোট ফলন * প্রতিটি ইউনিট খরচ (৪০৪৭ x ১০০) = ৪,০৪,৭০০ টাকা = (৪,০৪,৭০০ – ৪০,১১৩ টাকা) = ৩,৬৪,৫৮৭ টাকা।
আরও পড়ুন - সার্টিফায়েড সীড কি? কীভাবে চিনবেন কৃষকবন্ধুরা সার্টিফায়েড সীড, রইল বিস্তারিত