নন্দীগ্রামের হোসেনপুর গ্রামের কৃষক হাজি আলমগির হোসেন হয়েছেন "উদ্ভাবনী কৃষক"| বস্তা পদ্ধতি বা "স্যাক কালটিভেশন" উপায়ে তিনি সব্জি চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সকলকে | অনেকেই চাষ করতে পারেননা, কারণ পর্যাপ্ত জমির অভাব | কিন্তু, তাতে কি, বাড়ির ছাদে, উঠোনে এমনকি কার্নিশেও আপনি এই পদ্ধতি অবলম্বনে চাষ করতে পারেন | সেই চাষেরই নতুন দিশা দেখিয়েছেন কৃষকভাই হাজি আলমগির হোসেন | আপনিও কি এই পদ্ধতিতে চাষ করতে চান, তবে দেখে নিন কিভাবে তিনি বস্তা পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে সব্জি চাষে পেয়েছেন ব্যাপক সাফল্য |
বস্তা পদ্ধতি (Sack farming method):
প্রথমত, চাষের প্রাথমিক পর্বে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে মাটি তৈরিকে। এই চাষে মাটি তৈরী করাই হলো সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় | মাঠ কিংবা জমির উপরের স্তরের ‘এক কোদাল মাটি’, অর্থাৎ এক কোপে যতটা গভীর পর্যন্ত কোদাল যেতে পারে প্রায় চার-ছয় ইঞ্চি গভীর সেই মাটি সংগ্রহ করতে হবে৷ এইবার, পরিমান অনুযায়ী একটি স্পষ্ট ধারণা করতে হবে | যেমন, ১৫ কিলোগ্রাম মাটির সঙ্গে দু’শো গ্রাম চুন মিশিয়ে রোদে শুকনো করতে হবে। পরে প্রায় আড়াই কিলোগ্রাম শুকনো গোবর, দুই কিলোগ্রাম কচুরিপানা এবং ৫০ থেকে ৮০ গ্রাম গুঁড়ো সরষে খোল মিশিয়ে মাটি রোদে শুকনো করতে হবে৷ এগুলিকে একসঙ্গে মিশিয়ে, সেই মিশ্রণই হবে আপনার চাষের মাটি | এরপর সিমেণ্ট কিংবা মাছের ফিড, সারের পরিষ্কার বস্তার মুখ পর্যন্ত (অর্থাৎ বস্তার তিন ভাগ) মাটি ভরতে হবে।
রোপণ পদ্ধতি (Planting Process):
প্রথমত, বীজ ফেলার আগে তা দু-তিন ঘণ্টা ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে | ঘণ্টাখানেক পর, বস্তার উপরের মাটি নিড়ানি দিয়ে নাড়িয়ে বীজ ছড়াতে হবে । তারপর বীজের চারপাশে, বীজের সুরক্ষায় কীটনাশক হিসেবে, বীজ থেকে তিন ইঞ্চি দূরে, মাটির দুই ইঞ্চি গভীরে শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো দিতে হবে। এরপর মাটি কিংবা খড়কুটো দিয়ে বীজ ঢাকা দিয়ে দিতে হবে । এভাবে থাকা অবস্থায় বীজের উপর ১৫ দিন পরিমান অনুযায়ী জল দিতে হবে। তিন-চারটি পাতা গজানোর পর, জৈবিক সার মিশ্রিত শুকনো মাটি গাছের চারপাশে যত্ন করে দিতে হবে৷ মাসখানেক পরে পচানো সরষে খোলের উপরের জল পরিমান মতো দিতে হবে । পরেরদিন আবার স্বাভাবিকভাবে জল দিতে হবে |
গাছের পরিচর্যা:
৪০ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় গাছে ফল ধরতে শুরু করবে। ফলন শুরুর আগে কিংবা পরে, গাছের পাতা কুঁকড়ে গেলে, পোকায় কাটলে ভেজানো লঙ্কা গুঁড়োর জল কিংবা নিম পাতা বেটে তার রস মিহি কাপড়ে ছেঁকে, তার সঙ্গে যেকোনও শ্যাম্পু মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। শ্যাম্পু কোনও ক্ষতি করবে না।তবে, শ্যাম্পুর পরিমান সামান্য নিতে হবে | বরং কীট, পোকার হাত থেকে গাছ রক্ষার জন্য কীটনাশক নষ্ট করতে স্প্রে করা লঙ্কা কিংবা নিমপাতার জল বেশ কিছুদিন গাছের গায়ে লেপটে থাকতে সাহায্য করবে এই শ্যাম্পু।
আরও পড়ুন - মালচিং পদ্ধতিতে ধান চাষে ব্যাপক অর্থলাভ বালুরঘাটের তিন যুবকের
এই পদ্ধতিতে সব্জি চাষ করে, ঘরে লাভও তোলা যায় | কৃষক আলমগির হোসেন জানান,চাষের কাজে নতুন পদ্ধতি খুঁজে বের করা তার নেশা। ধান চাষে তিনি বস্তা পদ্ধতি ব্যবহার করে খুবই সফল৷ প্রায় ৪০০ বস্তায় তিনি চাষ করেছেন৷ তার এই অভাবনীয় সাফল্য দেখে অনেকেই উৎসাহিত হয়েছেন এবং এগিয়ে আসছেন এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - আমের এক নতুন জাতের উদ্ভাবন করল এই সাধারণ কৃষক, জানুন তার সাফল্যের কাহিনী
Share your comments