ত্রিশালের আলিমুজ্জামান, পেশায় ছিলেন গার্মেন্টসে অপারেটর | তিনি ঢাকায় চাকরি করতেন | কিন্তু, করোনা তার চাকরি খেয়ে নেয়, কাজ হারিয়ে ফিরে আসেন নিজের গ্রামে | বেকার হয়ে গ্রামে ফিরে গিয়ে তিনি তার বাবার ৩০ শতক জমিতে করলার চাষ (Bitter Gourd farming) করেন। পাশাপাশি মুরগি পালন (Poultry farming) শুরু করেন। এ পর্যন্ত সংসার খরচ চালিয়ে এক বছরে ৫০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছেন। বর্তমানে তার ইচ্ছা বড় করে মুরগির খামার গড়ে তুলবেন। পাশাপাশি সবজি চাষও অব্যাহত রাখবেন।
বাংলদেশের তরুণ সমাজের করোনা আবহে চাষের (Agriculture) প্রতি আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে | বেশিরভাগ যুবক কাজ হারিয়ে বেকার হয়েছেন | আলিমুজ্জামান-র মতো অনেককেই দেখে এগিয়ে আসছে বাকি যুবকরা | ফলত, কৃষিখাতে এসেছে ব্যাপক সাফল্য।
করোনা মহামারিতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতি যেখানে বিপর্যস্ত সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটাই স্থিতিশীল। মূলত কৃষিখাতই করোনাকালে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। করোনার কারণে পোশাক শিল্প ও অন্যান্য অনেক শিল্পকারখানার শ্রমিক চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছে। তারা এখন শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে কৃষি কাজে নিয়োজিত হয়েছে। কেউ মাছ চাষ করছেন, কেউবা পল্ট্রি খামার করেছেন, কেউবা লাউ, শসা, বেগুন, করলা ইত্যাদি সবজি চাষ করে সফল হয়েছে। বেকার তরুণরা নিজেদের কৃষি কাজে নিয়োজিত করায় এ খাতে ইতোমধ্যে ব্যাপক সাফল্য এসেছে।
ধান ও সবজি উৎপাদনের পরিমান (Paddy and vegetable farming):
চলতি বছরে দেশে ৩৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ৩৬ দশমিক ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এবছর ২ মিলিয়ন মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন হয়েছে। শুধু ধান নয় অন্যান্য খাদ্যশস্য, সবজি ও ফল ইত্যাদিতে বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ । চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে চতুর্থ। একইভাবে গমে উৎপাদন দ্বিগুণ আর ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। ২০২০ সালে গম উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার টন |
আরও পড়ুন - Paddy Seed Bed: ধানের বীজতলা ব্যাবস্থাপনা ও বীজ উৎপাদন পদ্ধতি
গত বছর সবজি উৎপাদন বেড়ে ১ কোটি ৭২ লাখ ৪৭ হাজার টনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ উদ্বৃত্ত এবং বিশ্বে সপ্তম। দেশে এখন ৬০ ধরনের ও ২০০ জাতের সবজির মধ্যে বেশির ভাগের বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। কয়েক দশক আগেও হাতেগোনা কিছু সবজির বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন হতো।
ফল উৎপাদনে (Fruit cultivation) বড় সফলতা এসছে। দেশ মোট ফল উৎপাদনে বিশ্বে ২৮তম। কিন্তু মৌসুমি ফল উৎপাদনে গত বছর বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। এফএওর হিসাবে, ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। একই সঙ্গে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ চারটি ফলের মোট উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় উঠে এসেছে।
কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বের দ্বিতীয়, আমে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে বাংলাদেশ। অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, বছরে ১০ শতাংশ হারে ফল চাষের জমি বাড়ছে। এক দশকে দেশে আমের উৎপাদন দ্বিগুণ, পেয়ারা দ্বিগুণের বেশি, বড়ই দিগুণ, পেঁপে আড়াই গুণ এবং লিচু উৎপাদন ৫০ শতাংশ হারে বেড়েছে।
সফল কৃষকের গল্প:
জামালপুরের সাব্বির আহমদ ঢাকায় একটি ডেভেলাপার কোম্পানিতে চাকরি করতেন। করোনার কারণে কোম্পানি থেকে ছাঁটাই হয়ে তিনিও এখন গ্রামে গিয়ে মাছ চাষ করছেন। প্রথমে পাঙ্গাশ মাছের চাষ করে ৬ মাসের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ করেছেন।
এখন আরও দুটি পুকুর সংস্কার করে সেখানে শিং ও পাবদা মাছের চাষ করেছেন। একই সাথে পুকুর পাড়ে হাঁসের খামার ও পেঁপে চাষ করেছেন।
প্রধান খাদ্যশস্যের বাইরে নিবিড় চাষের মাধ্যমে দেশে সবজি উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। সব মিলিয়ে এই করোনাকালে দেশে কৃষিতে আশাতীত সাফল্য এসেছে। তরুণদের চাষের প্রতি যেভাবে আগ্রহ বেড়েছে তাতে কৃষি দপ্তর সাহায্য করছে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Shahi Papaya Farming: শাহী পেঁপের চাষ পদ্ধতি ও উৎপাদন তথ্য
Share your comments