সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ঘৃতকুমারী চাষের কৌশল (Aloevera Cultivation)

(Aloevera Cultivation) সবরকম জমিতেই ঘৃতকুমারী চাষ সম্ভব; তবে দোঁ-আশ ও অল্প বালু মিশ্রিত মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় । সুনিষ্কাশিত জমি যেসব জমিতে পানি জমে না এরূপ উঁচু জমিতে ঘৃতকুমারীর চাষ করা যায়। তবে লবণাক্ত ও চরম অম্লীয় মাটিতে ভালো হয় না। নিচু ও পানি জমা জমিতে গাছ পচে যায়। যেকোনো দোআঁশ মাটিতে চাষ ভালো হয় তবে বেলে দোআঁশ মাটি উত্তম। এঁটেল মাটিতে চাষ না করা ভালো। ছায়া জায়গায় হবে না, ঘৃতকুমারীর জন্য দরকার সারা দিন রোদ।

KJ Staff
KJ Staff
Aloevera Cultivation
Aloevera (Image Credit - Google)

ঘৃতকুমারী ,বৈজ্ঞানিক নাম Aloe vera একটি রসালো উদ্ভিদ প্রজাতি।  অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী সুপরিচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ ওষধি গাছ। ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মতো। অ্যালোভেরা গাছের গোড়া থেকেই সবুজ রঙের পাতা হয় এবং পাতাগুলো পুরু ধরনের হয় যার দুই পাশেই করাতের মতো ছোট ছোট কাঁটা থাকে। পাতার ভেতরে স্বচ্ছ পিচ্ছিল ধরনের শাঁস থাকে যাকে অ্যালোভেরা জেল বলা হয়।

সঠিক পদ্ধতিতে ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরার চাষ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

ঘৃতকুমারীর চাষ (Aloevera Cultivation) :

মাটি ও জলবায়ুঃ সবরকম জমিতেই ঘৃতকুমারী চাষ সম্ভব; তবে দোঁ-আশ ও অল্প বালু মিশ্রিত মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় । সুনিষ্কাশিত জমি যেসব জমিতে পানি জমে না এরূপ উঁচু জমিতে ঘৃতকুমারীর চাষ করা যায়। তবে লবণাক্ত ও চরম অম্লীয় মাটিতে ভালো হয় না। নিচু ও পানি জমা জমিতে গাছ পচে যায়। যেকোনো দোআঁশ মাটিতে চাষ ভালো হয় তবে বেলে দোআঁশ মাটি উত্তম। এঁটেল মাটিতে চাষ না করা ভালো। ছায়া জায়গায় হবে না, ঘৃতকুমারীর জন্য দরকার সারা দিন রোদ।

জমি তৈরি (Land Preparetion) :

ঘৃতকুমারী চাষ করতে হলে জমি প্রথমে ভালোভাবে পরিষ্কার করে চাষ দিতে হবে। চাষের সময় হেক্টরপ্রতি ১০ থেকে ১২ টন গোবর মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া এ সময় হেক্টরপ্রতি ২২৫ থেকে ২৫০ কেজি টিএসপি ও ৭৫ থেকে ১০০ কেজি এমওপি সার দিতে হবে। অ্যালোভেরা চাষিরা সাধারণত বেশি করে গোবর সার দিয়ে এর চাষ করেন, খুব কম চাষিই রাসায়নিক সার দেন। অনেক চাষি প্রচুর ছাই ব্যবহার করে থাকেন। তবে কেউ কেউ বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ কেজি টিএসপি এবং ১০ কেজি এমওপি সার জমি প্রস্তুতের সময় ব্যবহার করেন। সার মেশানোর পর জমিতে চারা লাগানোর জন্য বেড তৈরি করতে হবে। বেড হবে ১.৫ থেকে ২.২৫ মিটার চওড়া। প্রতি দুই বেডের মাঝে ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে।

চারা রোপণ (Plantation) :

ঘৃতকুমারীর তিন রকম চারা লাগানো হয়। রুট সাকার বা মোথা,গাছের গোড়া থেকে গজানো চারা ও গাছের গোড়ার অংশ কেটে ফেলে পুরো গাছ। বাণিজ্যিকভাবে রুট সাকার লাগানো লাভজনক নয় বিধায় এটি লাগানো হয় না। পুরনো গাছের গোড়া থেকে গজানো চারা মাতৃগাছ থেকে আলাদা করে প্রথমে একখণ্ড জমিতে বা বেডে লাগানো হয়। সেখানে এসব চারা দুই থেকে তিন মাস লালন পালন করে বড় করা হয়। পরে মূল জমি চাষ দিয়ে এসব চারা তুলে সেখানে লাগানো হয়। এতে চারার প্রতিষ্ঠা ভালো হয়। তবে এরূপ চারা লাগিয়ে পাতা তোলার জন্য ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়। তাই বাণিজ্যিক চাষের জন্য এরূপ চারা লাগানোর চেয়ে মোথা কেটে বাদ দিয়ে সরাসরি পুরনো গাছ লাগাতে বেশি পছন্দ করে থাকেন। এতে দ্রুত পাতা তোলা যায়। এ রকম গাছ লাগানোর তিন মাসের মাথায় পাতা তোলা যায়। অনেক দিন জমিতে থাকার পর একই গাছ থেকে উপর্যুপরি পাতা তোলার পর গাছের গোড়া যখন লম্বা হয়ে যায় এবং গাছ যখন খাড়া থাকতে পারে না, তখন গাছ কেটে ২-৩টি পাতা বাদ দিয়ে সেসব গাছ লাগাতে হবে। লাগানো গাছ সুস্থ সবল আছে কিনা তা দেখতে হবে।

রোপণ সময়ঃ

বছরের যেকোনো সময় ঘৃতকুমারীর চারা লাগানো যায়। জুন/আষাঢ় মাসের শুরুতে গাছ লাগালে তা বাড়ে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি। তবে শীত ও বর্ষাকালে চারা না লাগানো ভালো। সাধারণত কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে চারা বেশি লাগানো হয়। কেননা এ সময় চারা লাগালে শীতের মধ্যে গাছ মাটিতে লেগে যাওয়ার চেষ্টা করে। শীতের সময় বাজারে অ্যালোভেরার পাতার চাহিদা থাকে না। তাই চাষিরা এ সময় পাতা সংগ্রহ থেকে বিরত থাকেন। পক্ষান্তরে এই ২-৩ মাসের মধ্যে চারা জমিতে ভালোভাবে লেগে যায়।শীত শেষে বসন্তে নতুন পাতা ছাড়তে শুরু করলে পাতা সংগ্রহ করা শুরু হয়। এ পদ্ধতিতে চাড়া রোপণ করলে বেশি পাতা পাওয়া যায়।

রোপণ দূরত্বঃ

চারা সারি করে লাগানো হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব সাত ইঞ্চি ও প্রতি সারিতে ছয় ইঞ্চি পর পর চারা লাগানো হয়। ১.৫ মিটার চওড়া বেডে দুই সারিতে ও ২.২৫ মিটার চওড়া বেডে তিন সারিতে চারা রোপণ করা হয়। এক বিঘা জমিতে প্রায় তিন হাজার ছয়শোটি গাছ লাগানো যায়।

সার ও সেচ প্রয়োগঃ

সাধারণত কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে খৈল বা নিম খৈলের মত জৈব সার। জমি প্রস্তুত করে নিয়ম অনুযায়ী ঘৃত কুমারি চাষ করতে হয়। সাধারনত ভেজা জমিতে ঘৃত কুমারি ভালো বাড়ে। নিয়মিত সেচের দরকার হলেও গাছের গোড়ায় যাতে পানি থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি ইউরিয়া সার দিতে হয় তাহলে বছরে একবার সবটুকু ইউরিয়া সার জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে জমিতে ছিটিয়ে দিলেই চলে। সার ছিটানোর পর আগাছা নিড়িয়ে মাটির সাথে সার মিশিয়ে দিতে হয়। বেশি ইউরিয়া সার দিলে রোগের আক্রমণ ও প্রকোপ বেড়ে যায়। শুষ্ক মওসুমে জমিতে প্রয়োজন মাফিক সেচ দিতে হবে। মাঝে মাঝে জমির আগাছা নিড়িয়ে দিতে হবে। ঘৃতকুমারী গাছ জমিতে প্রায় দুই বছর থাকে। তাই দ্বিতীয় বছরেও প্রথম বছরের মতো একই হারে জমিতে সার ও সেচ দিতে হবে।

রোগ ও পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনাঃ

পাতার দাগ রোগঃ

ঘৃতকুমারী গাছে পাতায় দাগ পড়া এক প্রধান সমস্যা। শীতকালে এ রোগ কম থাকে। কিন্তু শীত শেষে ফাল্গুন মাসে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় এবং পাতার ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ রোগের আক্রমণে পাতার অগ্রভাগে আলপিনের মাথার মতো ক্ষুদ্র এক বিন্দুর মতো দাগ পড়ে, সেখান থেকে আঠার মতো কষ বের হয়। ওই আঠা শুকিয়ে বাদামি দাগের সৃষ্টি করে। এভাবে আক্রান্ত গাছের পাতায় ধীরে ধীরে দাগ বড় হতে থাকে ও দাগের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এটি ধারণা করা হয় ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, তাই ছত্রাকনাশক প্রয়োগে তেমন ফল পাওয়া যায় না। এ রোগের কারণে পাতার চেহারা নষ্ট হয়ে যায়। বাজারমূল্যও কমে যায়। তবে যারা বাণিজ্যিকভাবে ঘৃতকুমারী চাষ করেন তারা ১৫ দিন পরপর চুন পানিতে গুলে স্প্রে করে থাকেন।

গোড়া পচা রোগঃ

গোড়া পচা রোগে গাছের গোড়া পচে যায়। পরে গাছ মারা যায়। বর্ষাকালে ও গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলেও বা ভেজা থাকলে গোড়া পচা রোগ হয়। ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে এ রোগের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।

পোকামাকড়ঃ

ঘৃতকুমারী গাছে সাধারণত কোনো পোকামাকড় দেখা যায় না। তবে মাঝে মাঝে ছাতরা পোকা, জাব পোকা, স্কেল পোকা, লাল মাকড় ইত্যাদির আক্রমণ হতে পারে।

ফসল সংগ্রহ ও ফলনঃ

ঘৃতকুমারী চারা লাগানোর দুই তিন মাস পর থেকেই গাছের পাতা পাতা তোলা শুরু করা যায়। একটি গাছে থেকে ৬০- ৭০ টি পাতা বিক্রি করা যায় এবং সারা বছর জুড়ে এর থেকে নতুন নতুন পাতা জন্মে । বছরে ৯-১০ মাস পাতা তোলা যায়। শীতকালে পাতা তোলা বন্ধ থাকে। সাধারণত প্রতি ১৫ দিনে একটি পাতা বের হয়। তবে চাষিরা মাসে একটি গাছ থেকে ১-২টি পাতা সংগ্রহ করে। গাছের বৃদ্ধি ও পাতা বড় হলে প্রতি মাসে দু’টি পাতা তোলা যায়। পাতা তোলার পর পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে ছায়ায় শুকিয়ে আঁটি বেঁধে বাজারে বিক্রি করা যায়।

চাষাবাদের খরচ ও বাজারজাতকরণঃ

এক বিঘা জমিতে বছরে খরচ প্রায় ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। প্রচুর চাহিদার থাকার কারনে বাজারজাত করতে সমস্যা হচ্ছে না। ৫০ থেকে ৫৫ কেজি পাতার একটি আটিকে গাইট বলে। প্রতি ৬ গাইট ঘৃতকুমারীর বাজার দর ১৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা। এ হিসাবে ১ বিঘা হতে ১.৫ থেকে ২ লাখ টাকার পাতা বিক্রি হয়।

আরও পড়ুন -  তুলসী চাষে আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ-পোকা ব্যবস্থাপনা (Pest Management In Tulsi Farming)

Published On: 28 February 2021, 05:49 PM English Summary: Aloevera Cultivation in prpper wasy

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters