আমলকি প্রত্যেক বাঙালির ঘরে ঘরে এক প্রয়োজনীয় ওষধি ফল। আমলকি ছাড়া বাঙালিদের যেন কিছুতেই চলে না। কৃষকরাও বর্তমানে আমলকি চাষ নিয়ে ভীষণই আশাবাদী। আমলকী বা আমলা একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ ফুট পর্যন্ত উচ্চতা বিশিষ্ট হয়। গাছের পাতা পালকের মতো লম্বা, দেখতে অনেকটা তেঁতুল পাতার মতো। ফুল ছোট এবং সবুজাভ-হলুদ রঙের। পরিণত ফল গোলাকার, অম্ল স্বাদ যুক্ত।প্রতিটি ফলে ৬ টি করে ভাগ থাকে। শীতের শেষে গাছের সমস্ত পাতা ঝরে যায়। বসন্তে নতুন পাতা বের হয় এবং ফুল ফুটতে শুরু করে। স্বল্প বিনিয়োগে এই চাষ হয় বলে আমলকি চাষে প্রচুর পরিমাণে লাভও থাকে।
আমলকী ফল সাধারনত ভিটামিন সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদীয় চবনপ্রাস এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো আমলকী। এই ফল হাঁপানি, রক্তশূন্যতা, জন্ডিস, আমাশয, পাইরিয়া, দৃষ্টিহীনতা, নিদ্রাহীনতা, অম্লরোগ ইত্যাদি উপশমে ব্যবহৃত হয়। গাছের ছাল ও পাতা উদারাময়ে ব্যবহার করা হয়। আয়ুর্বেদীয় ত্রিফলার অন্যতম প্রধান উপাদান হলো আমলকি।
মাটি (Soil)
দোআঁশ মাটি এই উদ্ভিদ চাষের পক্ষে উপযুক্ত। জল জমা মাটিতে চাষ সম্ভব নয়। অত্যন্ত গরম সহ্য করার ক্ষমতাও আমলকীর আছে। ভালো বৃষ্টিপাত হলে ফলন ভালো হয়। উষ্ণআর্দ্র আবহাওয়া আমলকি চাষ উপযুক্ত। সর্বত্রই এর চাষ করা যেতে পারে।
চারা তৈরী
বীজ থেকে চারা তৈরির পদ্ধতি খুব ভালো কিন্তু বীজজাত গাছে ফল দেরিতে আসে। ভালোভাবে বীজতলা তৈরি করে গ্রীষ্মকালে বীজ বোনা হয়। বীজ ঠান্ডা জলে ভিজিয়ে রেখে বীজতলাতে বীজ বোনা উচিত। বীজতলাতে প্রয়োজন মতো জলসেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বীজতলা আগাছা মুক্ত রেখে সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলে ৯০ দিনের মধ্যেই মূল জমিতে বসানোর উপযোগী চারা তৈরি হয়ে যাবে। তবে প্রথম বর্ষায় তৈরি চারা বীজতলায় রেখে বড়ো করে তার পরের বর্ষায় বসানো হয়।
পলিথিন ব্যাগেও জৈব সার যুক্ত মাটি ভরে চারা গাছ তৈরির পদ্ধতি অনেকে অবলম্বন করে থাকেন। চোখ-কলম মাধ্যমেও আমলকি গাছের চারা তৈরি করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া গাছের শেকড় থেকে অনেক সময় চারাগাছ বের হয় এবং এই চারাগাছ প্রধান শিকড় থেকে পৃথক করে সরাসরি জমিতে বসানো হয়।
রোপন (Planting)
মূল জমিতে 15 ফুট × 15 ফুট দূরত্বে 2 ফুট × 2 ফুট × 2 ফুটের গর্ত করে এই গর্তে পচা জৈব সার, মাটি ও বালি মিশিয়ে ভর্তি করে চারাগাছ লাগাতে হবে।
পরিচর্যা (Caring)
আমলকি গাছেরও যথেষ্ট পরিচর্যার দরকার পড়ে। কোনও গাছই পরিচর্যা ছাড়া বাড়তে পারে না। তাই আমলকি গাছ ভালো রাখতে হলে প্রয়োজনমতো জল সেচ দিতে হবে। জমি আগাছামুক্ত করাও একান্ত কর্তব্য। সময় মতো গাছের গোড়ায় মাটি ধরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বছর দুই ভালোভাবে পরিচর্যা করলে পরবর্তী বছরগুলিতে বেশি পরিচর্যার দরকার পড়বে না।
আরও পড়ুন: Gladiolus Flower Farming: জেনে নিন আকর্ষণীয় গ্ল্যাডিওলাস ফুলের চাষ পদ্ধতি
ফসল সংগ্রহ (Harvest)
আমলকী গাছ থেকে ফল পেতে সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় বছর সময় লাগে। তবে প্রথম প্রথম ফলের উৎপাদন বেশ কম হয় এবং সব গাছে ফলও আসে না। পরিণত বা পাকা ফল সবুজাভ বা হলুদ রঙের হয়। ফল সংগ্রহের উপযুক্ত সময় অগ্রহায়ণ-মাঘ মাস, এই সময় সমস্ত ঔষধি গুণ আমলকিতে পূর্ণমাত্রায় পাওয়া যায়।
ফলন
প্রতি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ কেজি ফল পাওয়া যায়। এক একটি ফলের ওজন সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম হয়। সঠিক পরিচর্যা করলে একটি আমলকি গাছ থেকে প্রায় ৫০ বছর পর্যন্ত ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলন শুরু হওয়ার পর থেকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলন ক্রমশ বাড়তে থাকে। আট থেকে দশ বছর বয়স্ক গাছ থেকে হেক্টর প্রতি প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ কুইন্টাল শুকনো ফল পাওয়া যায়। ফলের আকার অনুযায়ী দাম নির্ধারিত হয়।
আরও পড়ুন: Jujube Farming Process: কুল চাষ করে হয়ে উঠুন সমৃদ্ধশালী কৃষক
Share your comments