ক্যাপসিকাম সবজিটি আজকাল চাইনিজ পদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রান্নাতেই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সবসময় ক্যাপসিকাম আমাদের হাতের নাগালে থাকে না। তবে আপনি চাইলে সহজেই বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় টবে এই সবজির চাষ করতে পারবেন৷ চাইলে বিক্রিও করতে পারেন৷
তবে চাষের পদ্ধতি জানার আগে জেনে নিন এর উপকারিতা কতটা (Health Benefits) -
ক্যাপসিকাম সবুজ, লাল, হলুদ নানা ধরণের হয়ে থাকে৷ ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে ৮৬০ মিলিগ্রাম প্রোটিন, ৪.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, সহ ভিটামিন ই, কে, বি-৬, ফলিক অ্যাসিড বিদ্যমান৷ থাকে আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, কপার, জিংক প্রভৃতিও৷ ক্যাপসিকাম ক্যান্সার প্রতিরোধ থেকে শুরু করে হজমের সমস্যা, আন্ত্রিকের সমস্যা, ব্যাথা মুক্তি, দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে৷ রক্তাল্পতার সমস্যাও কমায়৷ এতে থাকা ভিটামিন এ, সি দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে৷ মাইগ্রেন, দাঁতে ব্যথা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ইত্যাদি ব্যথা দূর করতেও ক্যাপসিকাম কাজ করে। এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হার্টের জন্য ভালো এবং হাড়কে মজবুত করতে এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য৷ ক্যাপসিকামে ভিটামিন এ এবং সি প্রচুর পরিমাণে থাকে। এটি আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এতে ফাইবার, আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ উচ্চ পরিমাণে রয়েছে আর ক্যালরির পরিমাণ সামান্য।
বিভিন্ন জাতের ক্যাপসিকামের বীজ (Capsicum Seed Variety) -
বাজারে বা নার্সারিতে বিভিন্ন জাতের ক্যাপসিকামের বীজ পাওয়া যায়। কয়েকটি উন্নত মানের জাত হল ক্যালিফোর্নিয়া ওয়াণ্ডার, ইয়োলো ওয়াণ্ডার এবং আর হাইব্রিডের মধ্যে ম্যানহাটন, অনুপম ভারত, রতন, মহাভারত, মানহেম-৩০১৯, মানহেম-৩০২০ প্রভৃতি৷ এছাড়াও আরও বহু প্রজাতি রয়েছে।
কীভাবে আপনার বাড়িতে ক্যাপসিকাম উদ্ভিদ করবেন (How To Farming At Home)?
এই গাছ করার জন্য বাজার থেকে ক্যাপসিকাম বীজ না কিনতে চাইলে, খাওয়ার উদ্দেশ্যে যে সবজি আপনি কিনেছিলেন তার অর্ধেক অংশ সংরক্ষণ করুন। অর্ধেক টুকরো থেকে কিছুটা বীজ ফেলে দিন। এরপর মাটি দিয়ে একটি পাত্র পূর্ণ করুন এবং বীজগুলি বপন করুন। আপনি যে কোন পাত্রে এই উদ্ভিদ লাগাতে পারেন, তবে গভীরতা কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি হতে হবে। উদ্ভিদ লাগানোর পরে, আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত জল দিন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এর থেকে বীজ অঙ্কুরিত হবে।
উদ্ভিদের পরিচর্যা (Plant Care) -
অঙ্কুরোদগমের আগে উদ্ভিদটি যেন কম সূর্যালোকে থাকে, এই সময়ে আপনি তা বাড়ির ভিতরে রাখতে পারেন। অঙ্কুরোদগম হওয়ার পরে, আপনি টবটিকে বারান্দায় সূর্যালোকে রাখতে পারেন।
তবে এই উদ্ভিদটি প্রখর সূর্যের আলো যান না পায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। যে টবে বা পাত্রে আপনি এই উদ্ভিদটি রোপণ করেছেন, তার মাটিতে যেন ভাল পরিমাণে আর্দ্রতা বজায় থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ক্যাপসিকামের উদ্ভিদ বৃদ্ধি পেতে প্রায় ৪৫ থেকে ৬০ দিন সময় লাগে।
এছাড়া আপনি চারা কিনে এনেও রোপণ করতে পারেন। মনে রাখবেন, বেলে দোআঁশ মাটি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উপযুক্ত। তবে সেই মাটি অবশ্যই হতে হবে ঝুরঝুরে৷ সব মরসুমেই এখন ক্যাপসিকাম চাষ সম্ভব৷ তবে ভাদ্র ও মাঘ মাসে বীজ বপন করলে ভালো ফলনের সম্ভাবনা বেশি থাকে৷
টবের দোআঁশ মাটিতে এক তৃতীয়াংশ জৈব সার মিশিয়ে নিতে হবে৷ তবে প্রায় সব ধরণের মাটিতেই এর চাষ সম্ভব৷ টবের নীচে ছিদ্র করে দিতে হবে অতিরিক্ত জল নিষ্কাশনের জন্য৷ মোটামুটি এক মাস বয়সের চারা টবে রোপনের জন্য উপযুক্ত৷ ক্যাপসিকাম চাষে ভালোরকম আলো, বাতাস প্রয়োজন হয় চারা রোপনের ক্ষেত্রে রোদ কমে এলেই তবেই তা রোপন করতে হবে, না হলে অতিরিক্ত সৌরতাপে চারার ক্ষতি হতে পারে৷ চারা রোপনের ২০ দিন পর পর পর এক চামচ ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রতিদিন পরিমিত জল দিতে থাকতে হবে৷ কারণ মাটি শুকিয়ে গেলে চলবে না৷
কীটপতঙ্গ এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ (Pest Management) -
কোনও রোগ পোকার আক্রমণ হলে টক্সিন মুক্ত দ্রবণ ব্যবহার করাই শ্রেয়। এক চামচ সাবান গুঁড়া এবং নিম তেল এক টেবিল চামচ নিন, উভয় এক লিটার জলে মিশ্রিত করুন। প্রতি সপ্তাহে এই দ্রবণ একবার স্প্রে করুন।
ঘরে তৈরি সার ব্যবহার করুন (Fertilizer) -
সারের জন্য শাকসব্জী এবং ফলের খোসা পচা জল, পাতা পচা ইত্যাদি মাটিতে প্রয়োগ করতে পারেন। এগুলি মাটির গুণমানকে উন্নত করে এবং উদ্ভিদকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
আরও পড়ুন - Pomegranate Cultivation: শুধু বেদানা চাষে আপনি হয়ে উঠতে পারেন বিশাল অর্থের মালিক
ফসল সংগ্রহ:
বেশিরভাগ উদ্ভিদে একবারে প্রায় ৪ থেকে ৫ টি ক্যাপসিকাম আসে। একবার উদ্ভিদ ভালো করে বিকশিত হয়ে গেলে প্রথম যখন ফল আসবে তখন তা সংগ্রহ না করাই ভালো। এতে উদ্ভিদ দৃঢ় হয়। দ্বিতীয়বার থেকে ফল সংগ্রহ করাই ভালো।
আরও পড়ুন - বাড়ির টবে সহজ পদ্ধতিতে করুন রসুন চাষ
Share your comments