Fruit Bagging Technique: ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির সাহায্যে করুন আম চাষ

গুণমান সম্পন্ন ও বিষমুক্ত আম উৎপাদনে এই প্রযুক্তি বেশ কার্যকর | কৃষকদের সুবিধার্থে, কৃষি বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার করেই থাকে | আম উৎপাদনে অর্থাৎ গুণগত মানসম্পন্ন, নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিটি (Bagging technology) একটি নতুন ও সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি হিসেবে মাঠপর্যায়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।

রায়না ঘোষ
রায়না ঘোষ
Fruit bagging technique
Fruit bagging technique (image credit- Google)

গুণমান সম্পন্ন ও বিষমুক্ত আম উৎপাদনে এই প্রযুক্তি বেশ কার্যকর | কৃষকদের সুবিধার্থে, কৃষি বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার করেই থাকে | আম উৎপাদনে অর্থাৎ গুণগত মানসম্পন্ন, নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিটি (Bagging technology) একটি নতুন ও সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি হিসেবে মাঠপর্যায়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।

এই প্রযুক্তিটি শুধু সাশ্রয়ীই নয় পরিবেশ বান্ধবও বটে। প্রকৃতপক্ষে মাঠ পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদন করতে গিয়ে চাষিদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রোগ, পোকামাকড় ও প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট সমস্যা। ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজেই সকল সমস্যাগুলোকে সমাধান করে ভালোমানের আম উৎপাদন (Mango farming) করা সম্ভব। এতে কৃষকদের আর্থিক দিক থেকেও সচ্ছলতা আসে |

ফ্রুট ব্যাগিংপ্রযুক্তি কি(What is fruit bagging technique)?

ফল গাছে থাকা অবস্থায় বিশেষ ধরনের কাগজের তৈরি ব্যাগ দ্বারা ফলকে আবৃত করা হয় এবং এর পর থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত ব্যাগটি গাছেই লাগানো থাকে | এই ব্যাগ বিভিন্ন ফলের জন্য বিভিন্ন রং এবং আকারের হয়ে থাকে। তবে আমের জন্য দুই ধরণের ব্যাগ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রঙিন আমের জন্য সাদা রঙের ব্যাগ এবং অন্য সকল আমের জন্য দুই আস্তরণের বাদামি ব্যাগ।

বর্তমানে আম চাষিরা দুই আস্তরণের বাদামি ব্যাগ বাণিজ্যিকভাবে আম উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করছেন এবং লাভবান হয়েছেন। তবে আগাম জাতসমূহে ১ আস্তরণের সাদা রঙের ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদিত ফলসমূহ নিরাপদ এবং  স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রপ্তানিযোগ্য হয় |

ব্যাগিং করার সময়(Time):

আমের প্রাকৃতিকভাবে ঝরা বন্ধ হলেই ব্যাগিং শুরু করতে হবে। গোপালভোগ, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, বারি আম-২, বারি আম-৬ এবং বারি আম-৭ জাতের ক্ষেত্রে ব্যাগিং করা হয় ৪০-৫৫ দিন বয়সে। এই সময়ে আম জাতভেদে মার্বেল আকারের বা এর চেয়ে বড় হয়ে থাকে। তবে ফজলি, হাড়িভাঙ্গা, আশ্বিনা এবং গৌড়মতি আমের ক্ষেত্রে গুটির বয়স ৬৫ দিন হলেও ব্যাগিং করা যাবে। ব্যাগিং করার পূর্বে অবশ্যই কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক নির্দেশিত মাত্রায় ভালোভাবে মিশিয়ে শুধুমাত্র ফলে স্প্রে করতে হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ফল ভেজা অবস্থায় ব্যাগিং করা ঠিক নয়।

আরও পড়ুন - Rabbit rearing at home: জেনে নিন বাড়িতে খরগোশ পালনের পদ্ধতি

পরিচর্যা:

আমের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৩ টি স্প্রে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন প্রথমবার আম গাছে মুকুল আসার আনুমানিক ১৫-২০ দিন আগে, দ্বিতীয়বার মুকুল আসার পর অর্থাৎ আমের মুকুল যখন ১০-১৫ সেমি লম্বা হবে কিন্তু ফুল ফুটবেনা এবং আম যখন মটর দানার মতো হবে তখন তৃতীয়বার দিতে হবে। সুতরাং এর পরপরই আমে স্প্রে করে ব্যাগিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্যাগিং করার আগেই মরা মুকুল বা পুষ্মমুঞ্জুরীর অংশবিশেষ, পত্র, উপপত্র অথবা এমন কিছু যা ফলের ক্ষতি করতে পারে সেগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে।

যেসব আম গাছে ফলন হয়না বা রোগ পোকার আক্রমণে ফল নষ্ট হয়ে যায় সেইসব গাছে এই প্রযুক্তি বেশ কার্যকর | এছাড়াও যে সকল এলাকায় বৃষ্টিপাত বেশি হয় এবং আম দেরিতে পাকে সেসব আমের জাতগুলো বিবর্ণ বা কালো রং ধারণ করতে দেখা যায় এবং মাছি পোকার আক্রমণ দেখা যায়। সেইসব গাছেও এই প্রযুক্তি বেশ লাভজনক |

রোগ দমনে ব্যাগিং প্রযুক্তি(Disease management system):

যেসব বাগানে ঘন করে আম লাগানো হয়েছে এবং বর্তমানে গাছের ভিতরে সূর্যের আলো পৌছায় না সেসব গাছে আমের মাছি পোকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। এখন পর্যন্ত মাছি পোকা দমনের জন্য যত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বা প্রচলিত আছে কোনটিতেই এই মাছি পোকাকে শতভাগ দমন করা সম্ভব নয় বরং আক্রমণের হার কিছুটা কমিয়ে রাখা যায়।

কিন্তু, এই ব্যাগিং প্রযুক্তির মাধ্যমে শতভাগ রোগ ও পোকামাকড় দমন করা যায়। আম রপ্তানির জন্য ভালো মানসম্পন্ন, রঙিন ও রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ মুক্ত আম প্রয়োজন। কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে এই ৩ বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় ঘটানো সম্ভব নয়। বিভিন্ন আম রপ্তানিকারক দেশে বহুল পরিচিত ও ব্যবহৃত পদ্ধতি হচ্ছে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি দ্বারা সবচেয়ে কম পরিমাণে কীটনাশক  ব্যবহার করে ১০০% রোগ ও পোকামাকড় মুক্ত আম উৎপাদন করা সম্ভব। এছাড়াও ব্যাগিং করা আম সংগ্রহের পর ১০-১৪ দিন পর্যন্ত ঘরে রেখে খাওয়া যায়। সেই সাথে ভালো মানসম্পন্ন আমও পাওয়া যায়।

সতর্কতা:

এই ব্যাগিং প্রযুক্তি থেকে  ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে | যেমন,

১) নির্দিষ্ট সময়ে ফলকে ব্যাগিং করতে হবে।

২) ব্যাগিং করার আগে আমগুলিকে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে শুধুমাত্র ফলে স্প্রে করতে হবে।

৩) ব্যাগিং করার কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা আগে স্প্রে করতে হবে । তবে স্প্রে করার পরের দিনও ব্যাগিং করা যাবে যদি বৃষ্টিপাত না হয়।

৪) ফল ভেজা অবস্থায় ব্যাগিং করা যাবেনা |

সঠিক নিয়মকানুন ও পদ্ধতি অনুসরণ করে যেসব চাষি ফ্রুট ব্যাগিং করছেন তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন। এই প্রযুক্তিটি একটি সহজ, সাশ্রয়ী ও লাভজনক প্রযুক্তি যার সাহায্যে কৃষকরা ভালো মানের আম উৎপাদন করে আর্থিক দিক থেকে লাভবান হতে পারেন |

আরও পড়ুন - Successful farming tips: সফল কৃষিকাজের চাবিকাঠি কি? জেনে নিন কিছু টিপস

Published On: 24 August 2021, 02:41 PM English Summary: Fruit Bagging Technique: Cultivate mango with the help of fruit bagging technology

Like this article?

Hey! I am রায়না ঘোষ . Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters