পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৪০ লক্ষ্য হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয় যার মাত্র ৩% অর্থাৎ প্রায় ১ লক্ষ্য হেক্টর জমিতে সুগন্ধী ধানের চাষ হয়। অন্তর্দেশীয় বাজারে এই সব সুগন্ধী চালের চাহিদা ও মূল্য যথেষ্ট্য বেশী। এছাড়া সুস্বাদু, সহজপাচ্য ও পুষ্টিগুণ বেশী হওয়ার কারণে সুগন্ধী চালগুলি বিশেষভাবে সমাদৃত। উত্তরবঙ্গে সর্বাধিক চাষ হয় তুলাইপাঁজি, কালোনুনিয়া ও তুলসীভোগ, কালো জিরা, কাতলাভোগ, গন্ধেশ্বরী, চিনিসাক্কর, কাটারীভোগ। আর গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য সুগন্ধী জাতগুলি হল গোবিন্দভোগ, বাদশাভোগ, গোপালভোগ, খাসখানি ও সীতাভোগ ও লোকাল বাসমতী। লাল মাটি অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য জাতগুলি হল রাঁধুনিপাগল, গোবিন্দভোগ, বাদশাভোগ, দানাগুড়ি, মহিষ-লাদান, বাসমতি-আমন, গোলাপসরু। সমুদ্র উপকূলবর্তী লবণাক্ত অঞ্চলে চাষ হয় গন্ধমালতী, কামিনীভোগ, দধিসাল, জামাইনাড়ু, কনকচূড় ইত্যাদি।
সুগন্ধী ধানের গন্ধ তৈরীর জন্য যে রাসায়নিকটি দায়ী তার নাম ২-অ্যাসিটাইল-১ পাইরোলিন, এটি মূলত ঠান্ডা আবহাওয়ায় তৈরি হয়, তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই উদ্বায়ী রাসায়নিকটির পরিমাণ কমতে থাকে। সুগন্ধী ধানের ফুল আসা ও দানা পুষ্ট হওয়ার সময় শীতল আবহাওয়ার প্রয়োজন হয়, দিনে তাপমাত্রা ২২- ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও রাত্রে ১৮-২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে ভালো হয় এবং রাত ও দিনের তাপমাত্রার ব্যবধান কম হতে হবে। তাই নাবিতে রোয়া ধানে ফুল দেরিতে আসে ও ধান দেরিতে পাকে তার ফলে গন্ধ যেমন ভালো থাকে অন্যদিকে ফলন কিছুটা কম হয়। সুগন্ধী ধান চাষ করে অধিক লাভের জন্য ভালো মানের বীজ ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী।
সুগন্ধী ধান বীজের বৈশিষ্ট্য –
- বাহ্যিক চেহারা – বীজের বাহ্যিক চেহারা দেখে গুণাগুণ নির্ধারণ করতে হবে যেমন বীজের মধ্যে ধূলিকণা, বালি, অসদৃশ বীজ, আগাছার বীজ, অপুষ্ট বা রোগগ্রস্ত বীজ যেন না থাকে। বীজে ৯৮% শুদ্ধতা থাকা দরকার।
- বীজের আর্দ্রতা – ধান কাটার পর ধান বীজের মধ্যে আর্দ্রতা বেশী থাকে। এই অবস্থায় গোলাজাত করা সঠিক নয় কারণ এই সময় বীজের মধ্যে ২০ – ২৫% আর্দ্রতা থাকে। ফসল মাড়ার পর সকাল ৮টা থেকে দুপের ১ টা পর্যন্ত উজ্জ্বল সূর্য্যালোকে শুকিয়ে আর্দ্রতা কমিয়ে, বীজ শুকিয়ে ঠান্ডা করে গুদামজাত করতে হবে। গোলাজাত করার সময় ধান বীজের আর্দ্রতা ১২ শতাংশ থাকে।
- নীরোগ বীজ – মাতৃগাছ থেকে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের জীবাণু বীজের গায়ে লেগে থাকতে পারে। বীজের মাধ্যমে রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে, তাই সম্পূর্ণ রোগমুক্ত বীজ চাষের জন্য ব্যবহার একান্ত প্রয়োজন এবং বপনের পূর্বে শস্য অনুযায়ী নির্ধারিত যে কোন রোগ প্রতিরোধক ঔষধ দিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
- অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা – বীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা ১০০ শতাংশ ধে নেওয়া হয় না। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বীজ তার অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা হারায়। এছাড়া বেশি গভীরতায় বীজ বুনলে অতিরিক্ত জল সেচের ফলে বীজ নষ্ট হয়ে যায় বা মাটির উপরিভাগের বীজ পাখীতে খেয়ে ফেলে।
- সুপ্ত অবস্থা – মাঠ থেকে ফসল তোলার পর সব শস্যের বীজ অঙ্কুরিত হয় না। যতদিন পর্যন্ত বীজের স্বাভাবিক অঙ্কুরোদ্গম হয় না সেই সময়কে বীজের সুপ্ত অবস্থা বলে। বীজের সুপ্ত অবস্থা কেটে যাওয়ার পর বীজ অঙ্কুরিত হয়। অনেক সময় বীজের মধ্যে আর্দ্রতা বেশী থাকার কারণে অঙ্কুরোদ্গমে ব্যাঘাত ঘটে। প্রয়োজন অনুসারে যান্ত্রিক, ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বীজের সুপ্ত অবস্থা হ্রাস করা যায়।
রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)
Share your comments