ভারতের যত প্রাচীন ওষধি বৃক্ষ রয়েছে তার মধ্যে তুলসী অন্যতম। জন্ম থেকে মৃত্যু তুলসী বৃক্ষের আচারগত অবদান অনস্বীকার্য। তুলসী ভীষণভাবেই শরীরের পক্ষে উপকারী। গোটা বছরই পশ্চিমবঙ্গের বাজারে তুলসীর চাহিদা থাকায়, বহু কৃষক বাণিজ্যিক ভাবে তুলসী চাষ করেন। এছাড়াও প্রত্যেক ঘরে ঘরে তুলসীর মণ্ডপ দেখা যায়। বাড়িতেও অনেকে তবে তুলসীর গাছ পোঁতেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক তুলসী গাছ চাষের পদ্ধতি।
বীজ রোপণের সময়কাল (Planting Time)
তুলসী গাছ মূলত এপ্রিল-মে মাসে রোপণ করা হয়। তুলসী বীজ বপনের জন্য এক হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ কেজি বীজ প্রয়োজন। এই উদ্ভিদে কোনও বড় ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা যায় না।
মাটি (Soil)
বেলে দোআঁশ মাটি তুলসী চাষের জন্য উপযুক্ত। উচ্চ ক্ষারীয়, লবণাক্ত এবং জলাবদ্ধ জমি একেবারেই এর জন্য অনুপযুক্ত। উন্নত জৈব পদার্থযুক্ত মাটিতে এই উদ্ভিদের দ্রুত বৃদ্ধি হয়। মনে রাখতে হবে তুলসী চাষের জন্য যাতে উন্নত নিকাশযুক্ত বেলে দোআঁশ মাটি ব্যবহার করা হয়।
চাষের জমি প্রস্তুতি (Land Preparation)
তুলসী চাষের জন্য, শুকনো মাটি প্রয়োজন। জমিতে ভালো করে লাঙল দিয়ে কর্ষণের পরে এফওয়াইএম ভালভাবে মাটিতে মেশাতে হবে। তুলসীর প্রতিস্থাপন সূক্ষ্ম বীজতলায় করা হয়।
বীজ বপন (Planting of Seeds)
ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে নার্সারি বেড প্রস্তুত করতে হবে। এর বৃদ্ধির জন্যে ৪.৫ x ১.০ x ০.২ মিটার আকারের বীজতলা তৈরি করতে হবে। ২ সেমি গভীরতায় এবং ৬০ সেমি. দূরত্বে বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের ৬-৭ সপ্তাহ পরে জমিতে ফসল রোপণ করা উচিত। তুলসী আবাদে একর প্রতি ১২০ গ্রাম হারে বীজ ব্যবহার করলে ভালো। বীজ বপন করার আগে মাটিবাহিত রোগ ও পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য মানকোজেব ৫ গ্রাম/কেজি হারে প্রয়োগ করতে হবে।
উপযুক্ত সার (Fertilizer)
জমি প্রস্তুতির সময়, এফওয়াইএম অর্থাৎ ফার্মমিয়ার সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে এবং ইউরিয়া ১০৪ কেজি, মি.অ.প ৪০ কেজি এবং এসএসপি 1 কেজি / একর হারে নাইট্রোজেন ৪৮ কেজি এবং পটাশ ২৪ কেজি এবং ফসফরাস ২৪ কেজি / একর হারে প্রয়োগ করতে হবে। নাইট্রোজেনের অর্ধেক ডোজ এবং ফসফেট পেন্টক্সাইডের সম্পূর্ণ ডোজ প্রতিস্থাপনের সময় প্রয়োগ করে নেওয়া উচিত। নাইট্রোজেনের অবশিষ্ট ডোজ বিভক্তভাবে ২ টি ভাগে প্রয়োগ করতে হবে।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ (Weed Management)
তুলসী চাষ করার সময় সবসময় মনে রাখতে হবে যাতে জমি আগাছা মুক্ত থাকে। রোপণের এক মাস পরে ক্ষেতের আগাছা নিড়াতে হবে। পরে দুই মাস পর নিড়াতে হবে।
সেচ (Irrigation)
গ্রীষ্মকাল পড়লে প্রতিমাসে ৩ বার সেচ প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষাকালে কোনও সেচের দরকার পড়ে না। কম করে এক বছরে ১২-১৫ সেচ দিতে হবে। চারা রোপণের পরে প্রথম সেচ এবং তারপরে চারা স্থাপনের সময় দ্বিতীয় সেচ দেওয়া উচিত।
কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ (Pest Control)
লিফ রোলার:
শুঁয়োপোকা পাতা, কুঁড়ি আক্রমণ করে। তারা পাতার পৃষ্ঠকে রোল করে দেয়। লিফ রোলার নিয়ন্ত্রণ করতে, প্রতি একরে ১৫০ লিটার জলে ৩০০ মিলি কুইনালফোস দিয়ে স্প্রে করুন।
তুলসী লেস উইং:
এই কীট পাতা ভক্ষণ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে পাতাগুলি কুঁকড়ে যায় এবং তারপরে পুরো গাছটি শুকিয়ে যায়। এর নিয়ন্ত্রণে, আজাদিরচটিন ১০,০০০ পিপিএম ৫ এমএল / লিটার জল- এ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন: Pineapple Health Benefits: জেনে নিন বর্ষায় আনারস খাওয়ার গুনাগুন
রোগ নিয়ন্ত্রণ (Disease Management)
পাউডারি মিলডিউ:
ছত্রাকের সংক্রমণে পাতায় সাদা গুঁড়া দাগ দেখা যায় এবং এটি উদ্ভিদের বিস্তৃত অংশকে প্রভাবিত করে। এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে ম্যানকোজেব গ্রা /লি. জলের সাথে স্প্রে করুন
সিডলিং ব্লাইট :
এটি একটি ছত্রাকের সংক্রমণ, যাতে বীজ বা চারা মারা যায়। এর নিয়ন্ত্রণ করতে, ফাইটো-স্যানিটারি পদ্ধতিটি পরিচালনা করুন।
রুট পচা:
নিকাশী ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে গাছের শিকড় পচে যায়। এটি পরিচালিত ফাইটোস্যান্টারি পদ্ধতি দ্বারাও প্রতিরোধ পেতে পারে। সিভিডিং ব্লাইট এবং রুট পচা উভয়ই বাভিস্টিন ১% দিয়ে নার্সারি বেড ভিজিয়ে প্রতিরোধ করা হয়।
ফসল সংগ্রহ (Harvest)
তুলসী চারা রোপণের ৩ মাস পরে ফলন শুরু হয়। ফুল ফোটার সময়কালে ফসল সংগ্রহ করা হয়। শাখাগুলির পুনর্জন্মের জন্য গাছটি মাটির উপরে কমপক্ষে ১৫ সেমি উপরে থাকতে হবে। সংগ্রহের পর সতেজ পাতাগুলি ব্যবহার করা হয় বা এটি ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য শুকানো হয়।
আরও পড়ুন: Profitable Cattle Farming - গো পালন করে কীভাবে বেশি অর্থ আয় করবেন, জেনে নিন সহজ কিছু টিপস
Share your comments