
শীতকালের অন্যতম প্রধান সব্জি হলো মুলো | মুলো স্যালাড, ভাজা ও অন্যান্য তরকারির সাথে ব্যবহার করে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে | এছাড়াও, মুলোর পাতা অনেকেই শাক হিসাবে খেয়ে থাকে| শাকে প্রচুর পরিমানে ক্যারোটিন, ভিটামিন সি,ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছে। বর্তমানে, চাষীরা আগাম মুলো চাষে বেশি ঝুঁকছেন | বাজারে মুলোর চাহিদা ভালো রকম থাকায়, কৃষকদের পকেটও ভরছে ভালোভাবে | খরিপ মৌসুমের শেষে ও রবি মৌসুমের শুরুতে বাজারে তেমন সব্জি মেলেনা , তাই এই সময় মুলোর চাহিদা থাকে ব্যাপকভাবে |
জাত (Variety) :
বর্তমানে, মুলোর প্রায় ২৫টি জাত চাষ হচ্ছে | এছাড়াও, রয়েছে নিত্য নতুন স্বল্প জীবনকালের অধিক ফলনশীল হাইব্রিড জাত। উল্লেখযোগ্য জাত সমূহ হল বারি মূলা ১, বারি মূলা ২, বারি মূলা ৩, এভারেষ্ট, হোয়াইট প্রিন্স, বিপ্লব ৯৪, হিমালয় এফ১, সুপার ৪০, মুক্তি এফ১, তাসাকী, কুইক ৪০, রকি ৪৫, হোয়াইট রকেট, হোয়াইট ৪০, জি চেটকি, সুফলা ৪০, সিগমা ৪০ ইত্যাদি
মাটি (Soil) :
উঁচু মাঝারি ও মাঝারি নিচু জমিতে মুলো চাষ করা যায়। সুনিস্কাশিত বেলে দোআঁশ মাটি মুলো চাষের জন্য উপযুক্ত। এঁটেল মাটিতে মুলোর বৃদ্ধি কম হয়। প্রধানত, মুলো চাষের জন্য জমি গভীরভাবে ধুলো ধুলো করে চাষ করতে হয়। ছাই ও জৈব সার বেশী ব্যবহারে মুলোর বৃদ্ধি ভালো হয়।
বীজের হার ও বপন:
সাধারণত, আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসের মধ্যেই অধিকাংশ মুলোর বীজ বপন করা হয়। প্রতি হেক্টরে বপনের জন্য ২.৫-৩.০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সাধারণত, ছিটিয়ে বীজ বপন করা হয়। তবে সারিতে বপন করলে ভালোভাবে পরিচর্যা করা হয় । সারিতে চাষ করলে, এক সারি থেকে আর এক সারির দূরত্ব হতে হবে ২৫-৩০ সেমি.।
সার প্রয়োগ:
মুলোর অধিক ফলনের জন্য বিঘা প্রতি গোবর বা আবর্জনা পচা সার ১.৫ থেকে ২ টন জমি তৈরির সময় সবটুকু জৈব সার দিতে হবে | ট্টিপুল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সার ২০ কেজি, ইউরিয়া সার ৪০-৪৫ কেজি ও মিউরেট অব পটাশে (এমওপি) ২৫-৩০ কেজি ব্যবহার করতে হবে। টিএসপি সব ও এমওপি সারের অর্ধেক মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজ বপনের পর তৃতীয় ও পঞ্চম সপ্তাহে ইউরিয়া ও বাকি অর্ধেক এমওপি সার সমান ২ কিস্তিতে ভাগ করতে হবে | তারপর, সেচ দিতে হবে। মুলোর বীজ উৎপাদন করতে হলে জমিতে অবশ্যই বোরন সার হিসেবে বোরিক পাউডার/বোরক্স ব্যবহার করতে হবে। প্রতি বিঘায় ২ কেজি বোরিক এসিড/বোরাক্স দেওয়া বাঞ্চনীয়।
পরিচর্যা:
প্রধানত, বীজ বপনের ৭-১০ দিন পর অতিরিক্ত চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে বেশি জায়গার দরকার হয়। তাই চারা অবস্থায় চারার ঘনত্ব বেশি হলে কয়েক দফায় চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। তুলে নেওয়া চারাগুলো বাজারে বিক্রি করা যেতে পারে। মাটিতে রস কম থাকলে সেচ দিতে হবে। প্রতি কিস্তির সার উপরি প্রয়োগের পর পরই সেচ দিতে হবে। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মাঝে মাঝে নিড়ানী দিয়ে আগাছা পরিস্কার করে দিতে হবে।
পোকামাকড় ও প্রতিকার:
মুলোর পাতায় অল্টারনারিয়ার দাগ একটি প্রধান সমস্যা | মুলো পাতায় বিটল বা ফ্লি বিটল পাতা ছোট ছোট ছিদ্র করে খেয়ে ফেলে। এ ছাড়া করাত মাছি বা মাস্টার্ড স’ ফ্লাই, বিছা পোকা ও ঘোড়া পোকা এরাও মূলার পাতা খেয়ে ক্ষতি করে। বীজ উৎপাদনের সময় জাব পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। তাই, গাছ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে | বেশি পচন ধরলে সেই পাতা কেটে ব্যাড দিয়ে দিতে হবে|
আরও পড়ুন - খারিফ মরসুমে তিলের চাষ করে কৃষক সহজেই উপার্জন করতে পারেন অতিরিক্ত অর্থ
ফসল সংগ্রহ ও ফলন:
মুলো শক্ত হয়ে আঁশ হওয়ার আগেই তুলতে হবে। অবশ্য এখন হাইব্রিড জাতসমূহ আসাতে এ সম্ভাবনা অনেক কমে গেছে। তবুও কচি থাকতেই মূলা তুলে ফেলতে হবে। এতে বাজার দাম ভাল পাওয়া যায় এবং স্বাদও ভাল থাকে। জাতভেদে হেক্টও প্রতি ফলন হয় ৪০-৬০ টন।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - বাড়িতে শিম চাষ করতে চান? রইলো পদ্ধতি
Share your comments