পশ্চিমবঙ্গে শালগম এক সুপরিচিত সব্জি | মূলত, এটি একটি শীতকালীন সব্জি, এর স্ফীত ও রূপান্তরিত মূলই খাওয়া হয় | স্ফীত মূলের যে অংশ মাটির নিচে থাকে তা হলুদাভ বা সাদা হয়ে থাকে, কিন্তু উপরের অংশে জাতভেদে হলুদ, লাল, বেগুনি এমনকি নীলও হয়ে থাকে | এই সালগামী সব্জিটির পুষ্টিগুণ প্রচুর | শালগমে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি, সি ও লৌহ রয়েছে | রোগ-প্রতিরোধ ও অস্থি গঠনে সহায়তা করে |
জলবায়ু ও মাটি:
এটি নতিশীতোষ্ণ জলবায়ুর উপযোগী হওয়ায়, ১৫-২০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালোভাবে জন্মায় | হালকা দো-আঁশ মাটি এই চাষের জন্য উপযোগী | অধিক বৃষ্টিপাত শালগমের জন্য ক্ষতিকর এবং গাছের দ্রুত বেড়ে ওঠার জন্য আলোর প্রাচুর্য প্রয়োজন |
চাষের সঠিক সময়:
আমাদের দেশে, প্রধানত রবি মৌসুমে শালগমের চাষ হয় | বৃষ্টির মৌসুম শেষ হলে, ফসল লাগানো উচিত | আর্শ্বিন-কার্তিক (নভেম্বরের প্রথম ভাগ থেকে ডিসেম্বরের শেষ ভাগ) বীজ বোনার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়৷
চাষের জমি তৈরী:
চাষের আগে জমিতে ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করে নিতে হবে।
বীজ বপন :
সরাসরি বীজ বপন করে শালগম চাষ করা সম্ভব | কিন্তু, আমাদের দেশের কৃষকরা বেশিরভাগ সময়ে চারা রোপণ করে শালগম জন্মিয়ে থাকেন| তবে, চারা রোপণ পদ্ধতি প্রয়োগ না করাই শ্রেয়, কারণ এতে কোনো ভাবে রোপণের সময় প্রধান শিকড় ভেগে যেতে পারে | এছাড়া, আধুনিক কিছু জাতের বীজ বোনার ৪০-৫০ দিন পর সংগ্রহের উপযোগী হয়ে ওঠে | সারিতে বীজ বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার বা ১ ফুট রাখতে হবে এবং চারা রোপণ করলে চারা থেকে চারা ২০ সেন্টিমিটার বা ৮ ইঞ্চি দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
সার প্রয়োগের সঠিক নিয়ম :
শালগম চাষের জন্য প্রতি শতক জমিতে ৬০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৭০০ কেজি এমওপি, ৪০ কেজি গোবর সার এবং ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে | যদি আগাম জাত হয় তবে সব সার ফসল লাগাবার সময় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে, আর নাবি জাতের বেলায় পটাশ ও ইউরিয়ার অর্ধেক উপরি প্রয়োগ করা প্রয়োজন | এছাড়াও, বীজ বপনের ৩০ দিন পর প্রথম কিস্তি হিসাবে ১৫০ গ্রাম এমওপি ও ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার এবং ৪৫ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে আরও ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া এবং ১৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। ভালো ফলনের জন্য শালগম সাহসের জমিতে নিয়মিত সেচ দিতে হবে |
রোগ ও প্রতিকার:
কাটুই পোকা চারা গাছ কেটে নষ্ট করে দেয় | শালগম পাতায় দাগ প্রধান সমস্যা | এই পোকা দমনের জন্য ৫ লিটার জলে দেড় চা-চামচ ডায়াজিনন মিশিয়ে ছিটাতে হবে। এছাড়াও, জাব পোকা ও শুয়ো পোকা গাছের পাতা খেয়ে ফেলে। এই পোকা দমনের জন্য ৫ শতক জমিতে ১০ লিটার জলে ৫ চা-চামচ ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি কীটনাশক মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে |
আরও পড়ুন - দুর্দান্ত সহজ পদ্ধতিতে বাড়ির টবে জবা চাষ, রইলো গুরুত্বপূর্ণ ট্রিকস
গাছের পরিচর্যা:
চারা লাগানোর পর মাটিতে প্রয়োজনমতো সপ্তাহে দুটি সেচ দিতে হবে | পরেদিকে ৭-১০ দিন পর পর সেচ দিলেও চলবে | আগাছা কেটে জমি পরিষ্কার করে রাখতে হবে | দরকার মতো গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে
আরও পড়ুন - বহুগুন সম্পন্ন আতা ফলের চাষাবাদ:- রোগ ও তার সহজ প্রতিকার ব্যবস্থা
Share your comments