উচ্ছে খেতে তেতো হলেও, এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর একটি সবজি। ভারতীয় উপমহাদেশে এই সবজির জন্ম। তেতো স্বাদযুক্ত সবজি হিসাবে উচ্ছের প্রচুর পরিমানে চাহিদা রয়েছে। বাজারে উচ্ছের প্রচুর পরিমানে চাহিদা থাকায়, বহু কৃষক উচ্ছের চাষ করেন। গোটা বছরই উচ্ছে মানুষ খেয়ে থাকেন। তাই ঘরে ঘরে উচ্ছে কেনার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এই সবজির স্বাস্থ্যগুণ প্রচুর। তেতো হলেও উচ্ছের বহু ওষধি গুণ রয়েছে। নিয়মিত উচ্ছে খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। রক্তের কোনো সমস্যা থাকলে উচ্ছে খুব ভালো কাজে দেয়। এছাড়াও খাবারের সমস্যায়, অরুচি, ডায়াবেটিস প্রতিরোধেও উচ্ছে খুব ভালো কাজে দেয়। অনেকে উচ্ছে তিক্ত থাকার জন্য খেতে চান না, কিন্তু স্বাস্থ্যের কথা ভেবে উচ্ছে আমাদের সকলের খাওয়া উচিত। মূলত জানুয়ারি থেকে মার্চ এবং অক্টবর থেকে ডিসেম্বর উচ্ছে চাষের উপযুক্ত সময় হিসাবে বিবেচিত হয়।
উচ্ছের স্বাস্থ্যগুণ (Nutrition)
উচ্ছের মধ্যে অনেক ধরণের খাদ্যগুন বিদ্যমান। এতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান আছে যা শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় আছে জলীয় অংশ ৯২.২ গ্রাম, আমিষ ২.৫ গ্রাম, শর্করা ৪.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, আয়রণ ১.৮ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ১৪৫০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি ১- ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২- ০.০২ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ পদার্থ ০.৯ গ্রাম ও খাদ্যশক্তি ২৮ ক্যালরি।
উচ্ছে চাষ পদ্ধতি (Farming Process)
উচ্ছের জন্য যদিও বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ বিশেষ উপযোগী। এছাড়াও এঁটেল দোআঁশ মাটিতেও ভালো জন্মে। করলার জন্য প্রথমে মাটির সাথে গোবর সার, খৈল, সুপার ফসফেট ও ছাই মিশাতে হয়। পরে জল দিতে হবে। সার প্রয়োগের ৭-১০ দিন পরে উঁচু জায়গায় ৩-৪ টি বীজ বপন করতে হয়।উচ্ছের বীজের বীজত্বক পুরু হওয়ার কারণে বীজ ২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে বপণ করতে হয়। একদিন পর জল সেচন করলে ছয় সাত দিনে বীজ জার্মিনেট হয়। চারা গজানোর মাস খানেক পরে ইউরিয়া ও পটাস সার মিশাতে হবে। চারা বড় হওয়া শুরু করলে খুঁটি বা বাউনি দেয়া প্রয়োজন যাতে ভালোভাবে অঙ্গজ বৃদ্ধি হয়। উচ্ছে লতানো উদ্ভিদ তাই মাচা তৈরী করে দিতে হবে।
আরও পড়ুন: Poultry farming - পোল্ট্রি পালন ব্যবসাকে লাভজনক কিভাবে করে তুলবেন, জেনে নিন পদ্ধতি
সার (Fertilizer)
বেলে দো-আঁশ মাটিতে উচ্ছে ভাল হয়। উচ্ছে চাষ করার জন্য প্রথমে ২ ভাগ দোআঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ২০-৩০ গ্রাম টি,এস,পি সার, ২০-৩০ গ্রাম পটাশ সার, একত্রে মিশিয়ে ড্রাম ভরে জলে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ১০-১২ দিন। অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে।
পোকামাকড় দমন (Pest Control)
উচ্ছের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ফল ছিদ্রকারী পোকা। এই পোকার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে মাঝে মাঝে করলা গাছে ভাল কীটনাশক স্প্রে করতে হবে । এছাড়াও ছাদ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে । তাহলে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
এছাড়াও পোকার মধ্যে কয়েক প্রকারের কাঁটালে পোকা, ফলের মাছি,লাল কুমড়া পোকা প্রধান। পোকা দমনের জন্য সেভিন কিংবা নেক্সিয়ন এবং ডায়াজিনন এর স্প্রে করা হয়।
উচ্ছে সংগ্রহ (Harvest)
মার্চ থেকে মে অথবা জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায়ই উচ্ছে সংগ্রহ করা হয়। একটি গাছ থেকে বেশ কয়েকটা সবজি পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: Arabian jasmine Farming Process: বেল ফুল চাষ করে কি আদৌ প্রচুর লাভ সম্ভব? জেনে নিন
Share your comments