চাষের ক্ষেত্রে সঠিক প্রজাতি এবং গুনমানের বীজ নির্বাচন করা কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিভিন্ন ফসলের বীজের নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রজাতিটির ফলন, গুনমান এবং ফসলের বাজারের গ্রহণযোগ্যটা বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। তবে কৃষকরা সচরাচর নতুন প্রজাতির বীজের প্রতি আগ্রহ দেখায় এটা ভেবে যে নতুন প্রজাতির বীজ মানেই উচ্চ ফলনশীল।
যে বীজই কৃষকবন্ধুরা চয়ন করুক না কেন, চাষে উন্নত ফলন পেতে বীজবাহিত রোগের হাত থেকে বীজ ও ফসল বাঁচানোর জন্য বীজ শোধন অত্যন্ত জরুরী। চাষের প্রাথমিক পর্যায়ে বীজশোধন করা থাকলে পরিচর্যা কালে খরচ ও শ্রম বাঁচিয়ে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়। নামি সংস্থার বীজ পুরো প্যাকেট শুদ্ধ কিনলে তা শোধন করা থাকে ও প্যাকেটের পিছনে লেখা থাকে। কিন্তু খুচরো কেনা বীজ বা নিজের তৈরি বীজের ক্ষেত্রে বীজ শোধন আবশ্যিক। তিন ভাবে বীজ শোধন করা যায়।
গরম জলে বীজ শোধন (Purify the seeds in hot water) –
কপি জাতীয় ফসলের বীজ, বেগুন, টমেটো, লঙ্কা ইত্যাদি ফসলের বীজ এই পদ্ধতিতে শোধন করে জীবানুঘটিত রোগ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। এই পদ্ধতিতে ৪৮ – ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম জলে ১৫ – ২০ মিনিট বীজ ভিজিয়ে পাত্রের মুখ বন্ধ করে বীজ তুলে রেখে ছায়াতে শুকিয়ে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে জলের তাপমাত্রা যেন ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার বেশী না হয়, বেশী হলে বীজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর জন্য গরম জলের পাত্রে এক টুকরো মোম ফেলে দিলে মোম গলতে শুরু করলে তাপ দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
শুকনো পদ্ধতিতে বীজ শোধন (Purification of seeds by dry method) –
এই পদ্ধতিতে জৈব রোগ নাশক ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ও সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স ৫ গ্রাম করে বা শুধু ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ১০ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ভালোভাবে মেশাতে হবে। রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে যেকোন একটি বীজ শোধনকারী রোগনাশক যেমন - ডায়থেন ২ গ্রাম / কেজি বীজের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। ভালো ভাবে মেশানোর জন্য অল্প বীজ হলে বীজশোধক পাউডার বীজ একটি মুখ বন্ধ পাত্রে নিয়ে ৮ – ১০ মিনিট ভালো ভাবে ঝাঁকিয়ে মেশাতে হবে। বীজের পরিমাণ বেশি হলে পরিষ্কার বড় পাত্রে বীজ ও বীজশোধক রেখে গ্লাভস পরে মাখিয়ে নিতে হবে। জৈব বীজশোধকের বেলায় বীজের গায়ে অল্প জলের ছিটা দিলে ভালো হয়।
ভিজে পদ্ধতিতে বীজ শোধন (Seed purification by wet method) –
৫ গ্রাম ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ও ৫ গ্রাম সিউডোমোনাস ফ্লুরোসেন্স বা শুধু ১০ গ্রাম ট্রাইকোডারমা প্রতি লি. জলে গুলে ১/২ – ১ ঘন্টা বীজ ভিজিয়ে ছায়ায় শুকিয়ে নিতে হবে। রাসায়নিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কার্বেন্ডাজিম / থাইরাম ২ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে ১/২ ঘন্টা বীজ ভিজিয়ে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে বোনার জন্য ব্যবহার করতে হবে। ছোট বীজ যেমন বেগুন, টমেটো, লঙ্কা, কপি ইত্যাদির ক্ষেত্রে একটি সুতির কাপড়ে বীজ বেঁধে পুটুলি করে ওষুধ গোলা জলে বীজ ভেজানো সুবিধাজনক।
আরও পড়ুন - Wetland Farming: জলাভূমিতে কৃষিকাজ ও তার গুরুত্ব
কৃষিজমির জন্য উপযোগী শংসাপত্রযুক্ত বীজ বা উন্নত জাতের ভাল বীজ রোপণ করুন। নজর রাখতে হবে যেন প্রত্যয়িত বা শংসাপত্রযুক্ত বীজগুলি খাঁটি, পরিষ্কার, পূর্ণ, আকারে অভিন্ন এবং তাদের নূন্যতম অঙ্কুরোদগমের হার ৮৫% থাকে। প্রত্যয়িত বীজের ব্যবহারের ফলে চারাগুলি স্বাস্থ্যকর হয়, তাদের বৃদ্ধি দ্রুত এবং অভিন্ন হয় যা জমির সর্বোপরি ফলন ৫-১০% বৃদ্ধি করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। মনে রাখবেন যে স্বাস্থ্যকর চারাগুলিতে বেশি শিকড় থাকে, দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং দুর্বল মানের চারাগুলির চেয়ে বেশি গোছা উৎপাদন করে। সুতরাং, প্রত্যয়িত / ভাল বীজ উচ্চ ফলন নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন - Dry Farming – শুষ্ক অঞ্চলে স্বল্প বিনিয়োগে কীভাবে কৃষিকাজ করবেন কৃষকবন্ধুরা, জেনে নিনি সহজ পদ্ধতি
Share your comments