মাছ ও জলজ পরিবেশের ওপর ভারীধাতুর প্রভাব

ভারীধাতু বলতে সামগ্রিকভাবে বলা যেতে পারে, যেকোনো ধাতব রাসায়নিক পদার্থ যাদের ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে বেশী, কিন্তু কম ঘনত্বে উপস্থিত থেকে যারা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। উদাহরণঃ পারদ, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, লেড, ক্রোমিয়াম, নিকেল, সেলেনিয়াম ইত্যাদি । মাছের বৃদ্ধিকে কমে যা্ওয়া, মাছের লার্ভার বৃদ্ধির হ্রাস পাওয়া ভারীধাতুর বিষক্রিয়ার অন্যতম প্রধাণ কারন হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।

KJ Staff
KJ Staff

ভারীধাতু বলতে সামগ্রিকভাবে বলা যেতে পারে, যেকোনো ধাতব রাসায়নিক পদার্থ যাদের ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে বেশী, কিন্তু কম ঘনত্বে উপস্থিত থেকে যারা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। উদাহরণঃ পারদ, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম, লেড, ক্রোমিয়াম, নিকেল, সেলেনিয়াম ইত্যাদি । মাছের বৃদ্ধিকে কমে যা্ওয়া, মাছের লার্ভার বৃদ্ধির হ্রাস পাওয়া ভারীধাতুর বিষক্রিয়ার অন্যতম প্রধাণ কারন হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।

গবেষণার ফলে জানা গেছে, মাছের বৃক্ক ও যকৃতে ভারীধাতুর সবছেয়ে বেশি ঘনত্ব দেখা যায়। জলজ পরিবেশের তলদেশে থাকা এর ভিতর  বেশ কিছু ক্ষতিকর ধাতব একটি বিশেষ পদ্ধতির দ্বারা বেনথিক প্রাণীদের দ্বারা গৃহীত হয়, যেটি জৈব-সঞ্চয় নামে পরিচিত। আবার যখন জলে বসবাসকারী বৃহৎ মাছগুলি এই ক্ষুদ্রাকার মাছগুলিকে খেয়ে নেয়, তখন এই ছোট প্রাণীদের দেহে জমা বিষাক্ত ধাতুগুলি খাদ্য-জালের পরবর্তী ধাপে প্রবাহিত হয় এবং আরও বেশি ঘনত্ব নিয়ে তাদের দেহে জমতে থাকে। এই ঘটনাটি জৈব-বিবর্ধন নামে পরিচিত। তাই বলা যেতে পারে যে, এই ভারীধাতুগুলি জৈব-সঞ্চয় ও জৈব-বিবর্ধন এর জন্য অতিসক্রিয় ও উপযুক্ত। জলের উপরিভাগে থাকা কিছু উপাদান (কার্বোনেট, সালফেট, জৈব পদার্থ সমুহ –হিউমিক, ফুল্ভিক অ্যাসিড) ভারীধাতুগুলিকে খুব প্রভাবিত করে ও লঘুতাপ্রাপ্ত করে। এর ফলে কিছু অদ্রাব্য লবণ তৈরি হয়। এই লবণ ও জটিল পদারথগুলিক জলজ প্রাণীদের জন্য কম ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। এদের ভিতর বেশকিছু অংশ জলে ডুবে গিয়ে নিম্নতলে অবক্ষেপণ তৈরি করে। কিন্তু যখন অম্লবৃষ্টি বা অন্য কোন কারণের জন্য জলের পি এইচ হ্রাস পায়, তখন এই ধাতুগুলি আবার গতিশীল হয়ে ওঠে এবং জলের স্তম্ভের ভিতর ছড়িয়ে পড়ে এবং জলজ পরিবেশে বিষ ক্রিয়া সৃষ্টি করে। এছাড়াও এই ধাতুগুলি যখন খুব অল্প ঘনত্বে উপস্থিত থাকে, তখন তা স্থায়ী ভাবে ক্ষতি করে, যা মাছের মৃত্যু না ঘটালেও , তাদের শরীরের আকৃতি ও গঠনগত বৃদ্ধি এবং খাবার ও বাসস্থানের জন্য প্রতিযোগিতা করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

ভারীধাতু যুক্ত রাসায়নিক সারের ব্যাবহারের ফলে মাছ এই ধাতুগুলির দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এদের বিষক্রিয়ার প্রভাব মাছের ডিএনএ এর কার্যক্ষমতা এবং গঠনগত আকৃতির ওপর নিরীক্ষণ করা হয়েছে। বিষক্রিয়ার জিনগত প্রভাবগুলিকে চেনার জন্য বিভিন্ন জৈব- নির্ধারক বাব্যহার করা হয়। মাছের ক্ষেত্রে রক্তের লোহিতকণিকাকে  জিনগত বিষক্রিয়ার নির্ণায়ক হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। ভারী ধাতুগুলি প্রাধানত মাছের লার্ভা ও জুভেনাইলের জন্য বেশীমাত্রায় ক্ষতিকারক এবং এটি একটি মাছের দৈহিক বৃদ্ধিকে কমিয়ে দেয় এমনকি সম্পূর্ণ প্রজাতিটিকে অবলুপ্ত করতে পারে।

আরও কিছু তথ্য থেকে জানা যায় যে, ধাতুসমূহ মাছের লার্ভার আয়ু ও বৃদ্ধিকে কমিয়ে দেয় এবং আচরণগত পরিবর্তন ঘটায় ও গঠনগত ক্ষতিসাধন করে।বিশেষত, কপারের প্রভাবে মেরুদন্দের গঠন ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এবং লেড মাছে স্কলিওসিস ঘটায়। আরও গবেষণার ফলে জানা গেছে যে, কমন কার্পের ভারীধাতুর প্রভাবে রক্তে লহিতকণিকা,  কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। রক্তে লোহা ও কপারের পরিমাণ বর্ধিত হয়। আবার স্থায়ীভাবে ক্ষতিকারক ভারীধাতু সমূহে উন্মুক্ত হওয়ার ফলে, ভিটামিন-সি এর কর্ম-ক্ষমতা হ্রাস পায়। এই গবেষণা আরও বলেছে যে, ক্ষতিকারক ভারী ধাতুসমূহ জলজপ্রাণীদের রক্তের বিভিন্ন প্যারামিটারের ওপর তীব্র প্রভাববিস্তার করে।

বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মাছের ভারীধাতুসমূহের সঞ্চয়-স্থানগুলিকে চিহ্নিত করেছেন।

ক্যাডমিয়ামঃ প্রধাণত কোশীয়ও অঙ্গগুলিতে যেমন লিভার, ফুলকা ও পাকস্থলীতে জমা হয়।

কোবাল্টঃ কোবাল্টের সবথেকে বেশী ঘনত্ব ফুলকাতে এবং পাকস্থলীতে দেখা যায় ও যকৃতে তুলনামূলক ভাবে কম থাকে।

কপারঃ  পেশীকোষে তুলনামূলকভাবে কম পরিমাণে দেখা যায়, ফুলকা , যকৃত, পাকস্থলী ও ডিম্বাশয়ের তুলনায়।

আয়রনঃ যকৃতে বেশীমাত্রায় এবং পেশীকোষে অল্পমাত্রায় দেখা যায়।

ম্যাঙ্গানীজঃ পেশীকোষে সবথেকে কম পরিমাণে থাকে।

নিকেল ও লেডঃ সব থেকে বেশী ঘনত্ব দেখা যায় ফুলকাতে।

যেহেতু মাছ মানুষের একটি প্রধাণ খাদ্য তাই এই ধাতূ সমুহের প্রভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। এই ভারী ধাতুর প্রভাব থেকে মানুষের স্বাস্থ্যকে  কিছুটা হলেও সুরক্ষিত রাখা সম্ভব, যদি আমরা এই জলজ প্রানী প্রাধানত মাছ খাবার  সময়ে কিছু বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকি। বিভিন্ন গবেষণার ফলে জানা গেছে যে এই ভারীধাতুগুলি প্রধাণত মাছের পেশির তুলনায় অন্য অংশগুলিতে মানে যে অংশগুলি আমরা খাই না যেমন ফুলকা, যকৃৎ, বৃক্ক, বায়ুথলি ইত্যাদিতে বেশী পরিমাণে জমে। কিন্তু অনেক সময়ে গ্রামে গঞ্জে মানুষকে এই গুলিকে ভেজে খেতে দেখা যায়। এর ফলে শরীরে বেশী পরিমাণে ধাতব সঞ্চয়ের সম্ভবনা বেড়ে যায়। তাই ভারী ধাতুর ক্ষতি থেকে শরীরকে সুরক্ষিত রাখতে গেলে এগুলি যত সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। 

তথ্য সূত্র : শতরূপা ঘোষ,  অ্যাকোয়াটিক এনভারমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট, পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়,  কলকাতা,  পশ্চিমবঙ্গ

রুনা নাথ(runa@krishijagran.com)

Published On: 17 July 2019, 06:22 PM English Summary: effect-of-heavy-metals-on-aquaculture

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters