Fish Farming: বাংলাদেশে তেলাপিয়ার সাথে পাংগাস মাছের লাভজনক মিশ্র চাষে ব্যাপক সাফল্য মিলছে

বাংলাদেশে থাই পাংগাসের আমদানি এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটেছে । পাংগাস মাছের (Pangasius farming) সাথে তেলাপিয়া, কৈ, গলদা চিংড়ি এবং শিং-মাগুর প্রভৃতি মাছচাষ করা হচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরে। চাষের পুকুর অবশ্যই প্রথমে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুর শুকানোর পর চুন প্রয়োগ করতে হবে শতকে এক কেজি হারে।

KJ Staff
KJ Staff
Fish farming
Aquaculture (Image Credit - Google)

বাংলাদেশে থাই পাংগাসের আমদানি এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষের দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটেছে । পাংগাস মাছের (Pangasius farming) সাথে তেলাপিয়া, কৈ, গলদা চিংড়ি এবং শিং-মাগুর প্রভৃতি মাছচাষ করা হচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরে। নানা বিকল্প মাছ চাষ ব্যবস্থাপনার মধ্যে বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে বিশেষ করে ব্যাপকভাবে মাছ চাষের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লা অঞ্চলে অত্যন্ত সফলতার সাথে পাংগাস মাছের সাথে তেলাপিয়া এবং শিং মাছ একত্রে চাষ করা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। এ পদ্ধতিতে একক আয়তনের জলাশয়ে মাছের উৎপাদন এবং আর্থিক লাভও অনেক বেশি।

জলাশয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি জলাশয়ের তলদেশের পরিবেশ জৈবিক উপায়ে সংরক্ষিত হওয়ায় এ পদ্ধতি বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ (Fish cultivation) করে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন |

চাষের স্থান নির্বাচন (Place selection):

বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে সফলভাবে মাছ চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  যে সকল জলাশয় সহজে শুকানো যায়, প্রয়োজনমত জল সরবরাহের ব্যবস্থা আছে, উৎপাদিত মাছ ও খাদ্য উপকরণ সহজে পুকুর পাড়ে পরিবহন করার মতো যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে এবং সর্বোপরি পর্যাপ্ত সূর্যের আলো দীর্ঘ সময় পুকুরে পড়ে এরূপ পুকুর নির্বাচন করতে হবে।

পুকুর প্রস্তুতি (Pond preparation):

চাষের পুকুর অবশ্যই প্রথমে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুর শুকানোর পর চুন প্রয়োগ করতে হবে শতকে এক কেজি হারে। পুকুরের তলদেশে যদি কাদা থেকে যায়, তবে চুন কাদার সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। পুকুরে যদি পূর্বে অধিক ঘনত্বে মাছ চাষ করা হয়ে থাকে তবে চুনের পাশাপাশি শতকে ৫০০ গ্রাম হারে পটাশ সার দিতে হবে। চুন প্রয়োগের ৪-৫ দিন পর জল দিতে হবে। পুকুরের জলের গভীরতা এক মিটার হওয়া উত্তম। পুকুরে কোনো প্রকার জৈব সার দেওয়া যাবেনা |

পোনা মজুদ (Fries):

পোনা মজুদের জন্য পরিচিত মৎস্য খামার থেকে ভালোমানের পাংগাস (১৮-২০ সেমি), তেলাপিয়া (৬-৮ সেমি) এবং শিং মাছের (৭-৮ সেমি) পোনা সংগ্রহ করতে হবে। সাথে কার্প জাতীয় মাছের পোনা ছাড়তে হবে ১৪-১৬ সেমি আকারের।  চাষের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে ভালোমানের উপযুক্ত আকারের পোনার ওপর। একটি ১ একর পুকুরে পাংগাসের পোনা ছাড়তে হবে ১০০০০টি, তেলাপিয়া পোনা ছাড়তে হবে ৭০০০টি , শিং-র পোনা ছাড়তে হবে ৪০০০টি  এছাড়া মৃগেল পোনা ও রুই পোনা ১০০ টি করে ২০০ টি ছাড়তে হবে |

খাদ্য (Food):

মাছের খাদ্য প্রদানের মূল নীতি হলো, মাছ যে পরিমাণ খাবার খেতে পারে ঠিক সেই পরিমাণ খাদ্য প্রতিদিন সময়মত নির্ধারিত স্থানে প্রদান করা। সে উদ্দেশ্যে পোনা ছাড়ার পর থেকে নিয়মিতভাবে দিনে ২ বার মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ১০-৩ ভাগ হারে খাদ্য দিতে হবে। খাদ্যে আমিষের ভাগ ৩০% হতে হবে। খাদ্য প্রয়োগের সময় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাছ সবটুকু খাবার খেয়ে ফেলে। কারণ অভুক্ত খাদ্য পচে পরিবেশ নষ্ট করে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। খাদ্যের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ফিড ট্রে (Feeding Tray) পদ্ধতি উত্তম। এক একর পুকুরে ১ মি. × ১ মি. মাপের ২০টি ট্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। ট্রেসমূহ জল থেকে ০.৫ মি. গভীরতায় ঝুলিয়ে দিতে হবে। বাঁশের চাটাই দ্বারা মাচা (Platform) তৈরি করেও তার উপর খাবার দেওয়া যেতে পারে। খাবার দেবার ১ ঘন্টা পরে ফিড ট্রে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে মাছ সব খাবার খাচ্ছে কি না। সব খাবার গ্রহণ না করলে খাবারের পরিমান কমাতে হবে |

পরিচর্যা:

পুকুরে জলের মান ভালো রাখার জন্য জল আংশিক পরিবর্তন করতে হবে এবং প্রতি ১৫ দিন অন্তর শতকে ২৫০ গ্রাম হারে চুন ও খাদ্য লবণ একত্রে বা পর্যায়ক্রমে প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়াও অবস্থা বুঝে শতকে ২৫০ গ্রাম হারে পটাশ সারও প্রয়োগ করতে হতে পারে। পুকুরে গ্যাস সৃষ্টির প্রধান কারণ খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশ জমা হওয়া। খাদ্য প্রয়োগের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য কোনো ভাবেই প্রয়োগ করা না হয়।পুকুরের সার্বিক পরিবেশ ভালো রাখার জন্য জিওলাইট, একুয়াম্যাজিক এবং ক্ষতিকর গ্যাস হতে মাছ রক্ষার জন্য গ্যাসনেক্স ব্যবহার করা যেতে পারে। অক্সিজেনের অভাব হলে পুকুরে জল দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। পুকুরের জল অধিক সবুজ হয়ে গেলে পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ কমিয়ে দিতে হবে।  পুকুরে অধিক ঘনত্বে মাছ থাকলে খাবার দিলে মাছ জলের  উপরের স্তরে চলে আসে বিধায় শিকারী পাখি দ্বারা মাছ ধরে নেবার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য পুকুরের উপর নেট দ্বারা আবৃত করে দেওয়া যেতে পারে। এভাবে ৮-৯ মাস চাষের পর পাংগাস মাছ গড়ে প্রায় ১০০০-১১০০ গ্রাম ওজনের হয়। এসময় পাংগাস মাছসহ অন্যান্য মাছ বাজারে পাঠানোর উপযুক্ত হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন - আয় বৃদ্ধির জন্য কোন জাতের গো - পালন করবেন কৃষকবন্ধুরা?

পাংগাস মাছের চাহিদা বাজারে ভালোই থাকে | তাই এই মাছ চাষে, কৃষকরা ভালো লাভ ঘরে তুলতে পারেন|

নিবন্ধ: রায়না ঘোষ

আরও পড়ুন - Micro Livestock Farming - কৃষিকাজের সাথে বেশী আয় করতে চান? মাইক্রোলাইভ স্টক ফার্মিং-এ রয়েছে সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

Published On: 30 May 2021, 05:19 PM English Summary: Fish Farming: Profitable mixed farming of pangasius with tilapia in Bangladesh is getting huge success

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters