ক্রমবর্ধমান বৃহৎ জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য সুরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতবর্ষে বাণিজ্যিকভাবে ভেড়া পালন (Commercial Sheep Rearing) করে অনেকেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। ভৌগোলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে ভারতে অনেক ভেড়ার জাত পাওয়া যায়। আজ এখানে আমরা জনপ্রিয় ভেড়ার জাত, তাদের বৈশিষ্ট্য এবং কর্মক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
ভেড়ার কয়েকটি উন্নত প্রজাতি (Sheep breed)–
মেরিনো, লিসিস্টার লং উল শিপ, টুরকানা, ডরসেট শিপ, লিনকন শিপ, সিগাই, ডরপার শিপ, ইস্ট ফ্রিসিয়ান, হ্যাম্পশায়ার শিপ, সাফক শিপ ইত্যাদি।
পশ্চিমবঙ্গের বাইরে পালন করা হয় এমন ভেড়ার জাত -
১) গাদ্দী ভেড়া (Gaddi breed) :
এগুলি আকারে ছোট হয় এবং জম্মুর বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই জাতের ভেড়া পালনের মূল উদ্দেশ্য হল পশম। এই জাতের ভেড়ার পুরুষগুলির শিং আছে এবং মেয়ে ভেড়া শিংহীন। এদের পশম সূক্ষ্ম ও উজ্জ্বল এবং প্রতি মেষের পশমের হার গড় বার্ষিক ১.১৫ কেজি আশা করা যায়, যা সাধারণত বছরে তিনবার কাটা হয়। এই ভেড়ার জাতের পশম কুল্লু শাল ও কম্বল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
২) ডেকানি (Deccani Sheep) -
অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং তামিলনাড়ু রাজ্যের সাধারণত এই জাতটি পাওয়া যায়। এই জাতের পালন পশম এবং মাংস উভয়ের জন্যই করা হয়। এই প্রজাতিটি মূলত মুম্বই ডেকান অঞ্চল এবং অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং তেলেঙ্গানার কিছু অংশে পাওয়া যায়। ভেড়ার এই জাতটি ধূসর ও কালো বর্ণের হয়ে থাকে। এরা আকৃতিতে ছোট এবং যে কোন পরিস্থিতিতে পালনের জন্য উপযুক্ত। তবে এদের পশমের বার্ষিক হার ভালো হলেও গুনমান ভালো না হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কম্বল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
তবে পশ্চিমবঙ্গে মূলত ৪ প্রজাতির ভেড়া পালন করা হয়। গ্যারল, বেঙ্গল, শাহাবাদী এবং দুমকা। এদের মধ্যে গ্যারল মাংস উদপাদনের জন্য সেরা জাত।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, ভেড়ার পালন পদ্ধতি সম্পর্কে –
খামার তৈরী (Sheep Farm):
ভেড়া পালনে লাভের জন্য সবার প্রথমে সঠিক বাসস্থান নির্মাণ খুবই জরুরি | ভেড়ার খামার তৈরির জন্য এমন একটি ঘর নির্বাচন করতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত পরিমানে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে।| তবে খেয়াল রাখবেওন ঘর খলামেলা হলেও বৃষ্টির সময় ঘরে যেন জল না ঢোকে অথবা মেঝেতে জল যেন না জমে। প্রয়োজনে মাচা তৈরি করেও ভেড়া পালন করতে পারেন।
ভেড়ার খাদ্য –
ভেড়া মাঠে চরার সময় প্রচুর সবুজ ঘাস, লতাগুল্ম, বরই, কাঁঠাল, আম, মেহগনি, নেপিয়ার, ভুট্টা ও সূর্যমুখী গাছের পাতা ও কচি ডগা খায়। এরা গাছের মূলও খেয়ে থাকে। ভেড়া তার নরম মুখ দিয়ে অতি ছোট ছোট ঘাস লতাপাতা খেয়ে কৃষি জমির আগাছা কমাতে পারে। এছাড়াও উপজাত হিসেবে ভাতের মাড়, শাক, ফলের খোসাও তাদের উপাদেয় খাদ্য। তবে পানীয় জলের ক্ষেত্রে পরিষ্কার জল খাওয়ানোই শ্রেয়।
ভেড়ার রোগ (Disease) -
ভেড়ার রোগের মধ্যে স্ট্রাক, এন্টেরোটক্সিমিয়া বা পাল্পি, কিডনী ডিজিজ, ব্রাক্সি, ব্লাক ডিজিজ, ভেড়ার বাচ্চার আমাশয় ও ওলান পাকা বা ম্যাসটাইটিস, নিউমোনিয়া, ভিবরিওসিস, ব্রুসেলোসিস, ধনুষ্টংকার, ফুটরট, সালমোনেলোসিস, বর্ডার ডিজিজ, বসন্ত, প্লেগ বা পিপিআর, ক্ষুরা রোগ, একযাইমা, কক্সিডিওসিস, টক্সোপ্লাসমোসিস, কলিজা কৃমি, হিমোনকোসিস মেনুজ, উঁকুন, আঁঠালী, প্রেগনেন্সি টক্সিমিয়া, নিয়োনেটাল হাইপোগ্লাইসেমিয়া অন্যতম।
রোগ প্রতিরোধ (Disease management) -
১. ভেড়ার খামারে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায় হলো ভেড়ার বাচ্চা অবস্থায় যত্ন নেওয়া। বাচ্চা হওয়ার পর যদি সঠিকভাবে যত্ন করা যায় তাহলে অনেকাংশেই রোগ বালাই হয় না। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় না।
২. জন্মের সাথে সাথে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের তেমন কোন ক্ষমতা থাকে না। তাই মায়ের উৎপাদিত শাল দুধ বাচ্চাকে এন্টিবডির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করতে পারে। ভেড়ার বাচ্চার অন্ত্রে ১২ ঘন্টা পর থেকে শাল দুধে বিদ্যমান এন্টিবডি শোষণের হার কমতে থাকে। এ কারণে জন্মের পর ১২ ঘন্টা পর্যন্ত বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়াতেই হবে।
মনে রাখবেন, মায়ের শাল দুধের প্রদত্ত রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। ভেড়ার বাচ্চার ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার সাথে রক্তও আসতে পারে। এমতাবস্থায় বাচ্চাকে দিনে বারবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে এবং দূর্বল বাচ্চাকে বোতলের মাধ্যমে দুধ না খাইয়ে ফিডারে দুধ খাওয়াতে হবে।
আরও পড়ুন - Livestock Management – ছাগলের গলগণ্ড রোগের চিকিৎসা এবং বর্ষায় ছাগলের পরিচর্যা পদ্ধতি
Share your comments