ম্যান্ডারিন হাঁস দেখতে খুবই সুন্দর ও উজ্জ্বল বর্ণের হয় | এটি দেখতে সাধারণ হাঁসের তুলনায় কিছুটা আলাদা | এটি সাধারণত বনাঞ্চলে দেখা যায়, তবে এই প্রজাতির হাঁস পালনও করা যায় | এই প্রজাতির হাঁস পালনে ক্রিসক্র আর্থিক দিক থেকে লাভবান হয়ে থাকে | পুরুষ মান্দারিন হাঁসের সারা শরীর জুড়ে নানান রঙের ছড়াছড়ি। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ হাঁসের ডানা কমলা রঙ ধারণ করে, ডানায় নৌকার পালের মত দু'টি খাড়া পালক থাকে। স্ত্রী মান্দারিনের আবার এত রঙের বাহার নেই, বেশ সাদামাটা। স্ত্রী হাঁসের পিঠ জলপাই-বাদামি, দেহতল সাদা। বগলের উপর সারি সারি সাদা ফুটফুটে দাগ। বুকে অনেকগুলো সাদা রেখা দেখা যায়। ডানার মাথার পালকগুলো নীল, তার উপর সাদা ছোপযুক্ত।
ঘর তৈরী(House):
ঘন বনের মধ্যে জলাশয়ের কাছাকাছি এরা বাসা করে। সাধারণত গুহায়, গর্তে বা গাছের কোটরে ঘাস, উদ্ভিদাংশ ও পালক বিছিয়ে বাসা করে। বাসার উচ্চতা মাটি থেকে কমপক্ষে ৩০ ফুট উঁচুতে হয়।ঘর তৈরিতে বাঁশ, বেত, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ইট দিয়ে মজবুত করে ঘর তৈরি করতে পারলে ভালো হবে। ঘরটি খোলামেলা হতে হবে এবং সাপ ও ইঁদুর থেকে মুক্ত রাখতে হবে। শহরে বিভিন্ন মাপের চৌবাচ্চায় হাঁস পালন করা হচ্ছে । এক্ষেত্রে প্রশস্ত ছাদ থাকলে সুবিধা বেশি। ছাদের একপাশে ঘর অপর পাশে চৌবাচ্চা নির্মাণ করতে হবে।
আরও পড়ুন -Dairy Farming Guidance: ডেয়ারি ফার্ম গড়ে তোলার পদ্ধতি ও আয়-ব্যয়ের হিসাব
প্রজননের জন্য আটটি হাঁসের সঙ্গে একটি পুরুষ হাঁস রাখা দরকার। এরপর দেশি মুরগির সাহায্যে অথবা ইনকিউবেটরে হাঁসের ডিম ফোটানো যায়। হাঁসের ঘরের লিটার যেন কোন অবস্থাতেই ভিজে না যায়। প্রতিদিন একবার করে লিটার ওলট পালট করে দিতে হবে। জল পড়ে লিটার ভিজে গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন করে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বৃষ্টির সময় যেন মেঝেতে জল না ঢুকে যায়, মেঝে শুকনো থাকতে হবে। হাঁসের ঘর যেমনই হোক না কেন ঘরে আলো আধারী খেলা অহেতুক সৃষ্টি করা যাবেনা। রাতের বেলা হাঁসকে অন্ধকারে রাখতে হবে। আর এতে হাঁসের শরীর ও মন ভালো থাকে যার কারণে ডিম ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
খাবার(Food):
মান্দারিন হাঁস অগভীর জলে মাথা ডুবিয়ে ঘাস ও লতাপাতা থেকে খাবার সংগ্রহ করে। এরা রাতেও খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়ায়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদ, শস্যদানা (বিশেষত ধান), ছোট মাছ, শামুক, কেঁচো, জলজ পোকামাকড়, চিংড়ি ও কাঁকড়াজাতীয় প্রাণী এমনকি ছোট সাপ | খাদ্যে আমিষের পরিমাণ ডিম দেয়া হাঁসের ক্ষেত্রে ১৭-১৮ শতাংশ ও বাচ্চা হাঁসের ক্ষেত্রে ২১ শতাংশ রাখা উচিত। হাঁস দানা, খইল, ভূষি, ঝিনুকের গুঁড়ো, ডিমের খোসা, কেঁচোসহ অন্যান্য খাবার বেশি পছন্দ করে।
হাঁসের টিকাকরণ(Vaccination):
১) হাঁসকে রোগ মুক্ত রাখার জন্য টিকা প্রদানের বিকল্প নেই । খেয়াল রাখতে হবে সব সময় সুস্থ হাঁসকে প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
২) যে হাঁস কোন রোগে আক্রান্ত বা কৃমিতে আক্রান্ত হয়েছে তাকে টিকা দেওয়া যাবেনা কারণ তাতে আশানুরুপ ফল পাওয়া যায় না।
৩) প্রতিষেধক কোন অবস্থাতেই সূর্যের আলোতে আনা ঠিক না।
৪) প্রথম টিকা দিতে হবে ২১ দিন বয়সে তার পরের কিস্তি হলো ৩৬ দিন বয়েসে এবং ৭০ দিন বয়সে কলেরা টিকা দিতে হবে।
৫) এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা প্রদান করতে হবে।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন -Camel Farming: জেনে নিন উট প্রতিপালন পদ্ধতি ও পরিচর্যা
Share your comments