মুক্তো একটা প্রাকৃতিক রত্ন এবং এটা মোলাস্ক বা কম্বোজ জাতীয় প্রাণী থেকে উৎপন্ন হয় | মুক্তো সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হলেও বাজারে এর চাহিদা সর্বদা রয়েছে। ভারত সহ বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই মহিলাদের অলঙ্কারে মুক্তোর ব্যবহার দেখা যায়। মুক্তার চাষ থেকে কৃষকরা মোটা টাকা উপার্জন করতে পারে | স্বল্প খরচে মুক্ত ছাসে উপার্জন হয় প্রচুর | কৃষকরা নিকটবর্তী পুকুর, জলাশয় এবং তাদের বাড়ির খালি জমিতে একটি ছোট পুকুর খনন করে মুক্তো চাষ শুরু করতে পারেন।
প্রকৃতিতে একটা মুক্তো তৈরী হয় যখন কোনও বহিরাগত বস্তু যেমন বালির দানা, কীট ইত্যাদি কোনভাবে একটা ঝিনুকের দেহে প্রবেশ করে, এবং ঝিনুক তাকে পরিত্যাগ করতে পারে না ও পরিবর্তে তার উপর স্তরে স্তরে একটি চকচকে আস্তরণ তৈরী করে। সহজ এই পদ্ধতিটি কাজে লাগান হয় মুক্তো চাষে (Pearl cultivation)।
ঝিনুক সংগ্রহ:
মিষ্টি জলের জলাশয় যেমন, পুকুর নদী ইত্যাদি থেকে সুস্থ ঝিনুক সংগ্রহ করা হয়। ওগুলো হাতে করে সংগ্রহ করে বালতিতে বা জলপূর্ণ পাত্রে রাখা হয়। মুক্তো চাষের জন্য ব্যবহৃত আদর্শ ঝিনুকের আকার সামনে থেকে পেছন পর্যন্ত ৮ সেমির বেশি হবে |
পুকুর নির্বাচন:
মুক্তো চাষের জন্য কমপক্ষে ১০ x ১০ ফুট বা আরও বড় পুকুরের প্রয়োজন | বাণিজ্যিক মুক্তো চাষের জন্য, ০.৪ হেক্টর বা কিছুটা বড় আকারের পুকুরে সর্বাধিক ২৫০০০ ঝিনুক থেকে উৎপাদন শুরু করা যেতে পারে |
আরও পড়ুন -Ool farming guide: জেনে নিন সহজ উপায়ে ওল চাষ পদ্ধতি
চাষ পদ্ধতি(Farming process):
এর চাষের অনুকূল মরসুম অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ শরত্কালে মুক্তো চাষ ভাল হয় | ঝিনুকগুলিকে জলাশয়ে ছাড়া হয়৷ ঝিনুকগুলিকে নাইলনের ব্যাগে রাখা হয় (এক-একটা ব্যাগে দুটো করে)এবং বাঁশের বা পিভিসি পাইপ থেকে ঝুলিয়ে জলাশয়ে ১ মি গভীরতায় রাখা হয়। ১ হেক্টরে ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ ঝিনুক রেখে চাষ করা হয়। জলাশয়ে মাঝেমাঝে জৈব ও অজৈব সার দেওয়া হয় যাতে প্ল্যাঙ্কটন উৎপাদন অব্যাহত থাকে। চাষের ১২-১৮ মাস সময়কালের মধ্যে মাঝেমাঝেই ঝিনুকগুলিকে যাচাই করে মরা ঝিনুক বার করে দেওয়া এবং ব্যাগগুলিকে পরিষ্কার করা প্রয়োজন।
মুক্ত সংগ্রহ:
চাষের সময়ের শেষে ঝিনুকের ফসল তোলা হয়। ম্যান্টল কোষকলা বা যৌনগ্রন্থি পদ্ধতিতে জ্যান্ত ঝিনুক থেকে মুক্তো বার করা সম্ভব হলেও ম্যান্টল গহ্বর পদ্ধতিতে ঝিনুকগুলিকে মেরে ফেলতে হয়। বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচার করে স্থাপন করা পদ্ধতির ফলে যে মুক্তোগুলো পাওয়া যায় তা হল ম্যান্টল গহ্বর পদ্ধতিতে খোলের গায়ে লেগে থাকা অর্ধ গোলাকৃতি ও প্রতিকৃতি মুক্তো; ম্যান্টল কোষকলা পদ্ধতিতে না লেগে থাকা ছোট অসমান বা গোল মুক্তো এবং যৌনগ্রন্থি পদ্ধতিতে না লেগে থাকা বড় অসমান বা গোল মুক্তো।
কৃষকরা যদি পুকুর এবং জলাশয় থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করেন, তবে তাদের লাভ বেশি হবে। তবে একেবারে হাজার হাজার ঝিনুক সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। সুতরাং কৃষকরা এটি সামুদ্রিক অঞ্চল থেকে ২০-৩০ টাকা দরে কিনতে পারেন। উত্পাদনের পরে, এক মিমি থেকে ২০ মিমি ঝিনুক মুক্তোর দাম প্রায় ৩০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত হয়। পুঁতি যদি কিছুটা নতুনভাবে ডিজাইন করা হয় তবে বাজারে এর দাম বেড়ে যায়। মুক্ত রপ্তানিতে কৃষকদের আর্থিক লাভও বাড়তে থাকে। মুক্তো প্রস্তুত হওয়ার পরে বাজারে খালি পড়ে থাকা ঝিনুক বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব। স্কেললপ অনেকগুলি সাজসজ্জার আইটেমগুলিতে ব্যবহৃত হয়। কনৌজে সুগন্ধি তেলও ঝিনুক থেকে নিষ্কাশন করা হয়। মুক্তার চাষ পরিবেশের পক্ষেও অনুকূল।
আরও পড়ুন - Budgerigar birds rearing: বদ্রী পাখি পালনে আপনিও হয়ে উঠুন লাভবান
Share your comments