কৃত্রিম উপায়ে মাছের প্রজনন, লালন ও প্রতিস্থাপনকে বলা হয় Pisciculture, এককথায়, মাছ চাষ। এটি জলজ চাষের মূল পদ্ধতি, অন্য পদ্ধতিগুলি ম্যারিকালচারের আওতায় পড়ে। এটি সাধারণত খাবারের জন্য ট্যাঙ্ক বা ঘেরগুলিতে বাণিজ্যিকভাবে মাছ আহরণের সাথে জড়িত।
Pisciculture -এ কেবল মাছ-পালন জড়িত থাকে, তবে অ্যাকোয়াকালচারে মৎস্যপালনের পাশাপাশি অয়েস্টার, চিংড়ি ইত্যাদির মতো অন্যান্য জলজ জীবও জড়িত রয়েছে। এই সংস্কৃতির মাধ্যমে জলজ উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মিষ্টি জলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে ।
গ্রামবাংলার এমনকি শহরাঞ্চলের পুকুরগুলিকে যতটা সম্ভব সংস্কার করে যদি কিছুটা পরিকল্পিত ভাবে মাছ চাষ করা যায় তাহলে মানুষের আর্থিক লাভের সাথে সাথে পুষ্টির চাহিদা পূরণ, স্বনির্ভরতা লাভ, জল সংরক্ষণ করে পরিবেশ রক্ষা করা যাবে। সরকারি অথবা বেসরকারি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ লাভ করে অনেক মানুষ বিশেষ করে যুবক ও যুবতীরা স্বনির্ভর হতে পারেন।
বর্ষার শুরুতে পুকুর খুঁড়ে সবুজসার ধনচে, মটর প্রভৃতি শিম্বীগোত্রীয় গাছকে পুকুরের তলদেশে লাঙল দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এর পর পুকুরে বর্ষাকালে বৃষ্টির জল জমলেই সহজেই মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যকণা জন্ম নেবে। অল্প দিনেই পুকুরটি মাছ চাষের যোগ্য হয়ে উঠবে।
পুকুরের আকার ও প্রকৃতি (The size and nature of the pond) –
নির্বাচিত পুকুরে ৮-১০ মাস জল থাকা চাই। পুকুরের ক্ষেত্রফল ৫-১৫ কাঠা (৮-২৫ শতক) বা তার বেশী ও গভঅরতা ৬ ফুট হবে। পুকুরের পূর্ব-পশ্চিম পাড় খোলা হলে আলো হাওয়া ভালো খেলবে যা মাছের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। পুকুরের অপ্রয়োজনীয় জলজ উদ্ভিদ ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পুরানো পুকুরে হাইব্রিড / আফ্রিকান মাগুর, শোল, বোয়াল থাকলে অবশ্যই তুলে নিতে হবে, এরা পোনা মাছ খেয়ে ফেলে।পুকুরে মহুয়াখোল ৩০০ কেজি প্রতি বিঘাতে প্রয়োগ করলে তার ২১ দিন (৩ সপ্তাহ) পরে পুকুরে পোনা মজুত করা যাবে। মহুয়া খোল উত্তম সার কিন্তু প্রথম ৩ সপ্তাহ এর বিষ দোষ থাকে। পুকুরে পাড় শক্ত ও উঁচু রাখতে হবে। পাড়ে মরশুমি শাক সবজি লাগলে ভালো।
প্রতি মাসে ১০০ কেজি গোবর সার প্রয়োগ করলে উদ্ভিদ কণা ও প্রাণী কণার ভারসাম্য বজায় থাকে জল রোগজীবানু মুক্ত হয়। সার প্রয়োগের আগে চুন দিয়ে দিলে ভালো হয়। সরাসরি চুন না দিয়ে বিঘা প্রতি ২০ কেজি হিসাবে চুন জলে ভিজিয়ে ঠান্ডা করে চুন গোলা জল সারা পুকুরে সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে।
-
প্রতি ৩ মাস অন্তর পুকুরের তলদেশ একবার আঁচড়ে দিতে হবে।
-
প্রতি ৩ মাস অন্তর পুকুরের তলদেশ একবার আঁচড়ে দিতে হবে এতে মাছের রোগজীবাণু কম হবে।
মাছের প্রজাতি নির্বাচন – বিভিন্ন পোনা মাছ যেমন – কাতলা, রুই, মৃগেল, কালবোস, বাটা ইত্যাদি পুকুরের প্রাকৃতিক পরিবেশে তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে, পুকুরে পুকুরে উৎপন্ন প্রাকৃতিক খাবার নিয়ে কেউ কারো প্রতিযোগী হয না।
মাছের প্রজাতি |
প্রাকৃতিক খাবার |
পুকুরের স্তর |
(১) কাতলা |
প্রানীকণা |
উপরিস্তর |
(২) সিলভার কার্প |
সবুজ কণা |
উপরিস্তর / মধ্যস্তর |
(৩) গ্লাসকার্প |
জলজ উদ্ভিদ |
মধ্যস্তর |
(৪) রুই |
শৈবাল/ প্রানীকণা |
মধ্যস্তর |
(৫) মৃগেল |
প্রণীকণা, পচে যাওয়া জৈব |
তলদেশ |
(৬) কালবোস / বাটা |
প্রাণীকণা, বিভিন্ন লার্ভা, জৈব পদার্থ |
মধ্যস্তর / নিম্নস্তর |
ভালো স্বাস্থ্যবান মাছের চারা সংগ্রহ করতে হবে। তাই সরকারি স্বীকৃত হ্যাচারীর সাথে যোগাযোগ করে সেখান থেকে চারা সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। মাছের দ্রুত বৃদ্ধির সময় হল মে মাস থেকে অক্টোবর মাস। ওই সময়ে জলের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি – ৩১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট থাকলে জলে প্রাণীকণা / সবুজকণার সুন্দর ভারসাম্য থাকে।
আরও পড়ুন - Mola Fish Farming: পুকুরে মলা মাছ চাষ করতে চান? শিখে নিন দারুন পদ্ধতি
আরও পড়ুন - Profitable Goat Rearing - এই প্রজাতির ছাগল পালন আপনাকে দেবে সবচেয়ে বেশী মুনাফা
Share your comments