জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের খাদ্যের চাহিদাও বেড়ে চলেছে ক্রমশঃ, কিন্তু সেই তুলনায় ইদানীং আমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ছে না, বরং বলা যেতে পারে বেশ কিছু জায়গায় তা স্থিতিশীল বা নিম্নমুখী।
এরকম একটা সময় খাদ্যের চাহিদার যোগান দিতে হলে ও উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে লভ্যাংশের পরিমাণ বাড়াতে গেলে মাটির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যেগুলির প্রতি আরও যত্নশীল হতে হবে।
সাম্প্রতিক কালের (Sixth National Agrochemicals Conference-2016) তথ্য অনুযায়ী। ভারতবর্ষে ফসলের মোট সম্ভাব্য উৎপাদনের ১৫-২৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় কীটশত্রুর কারণে। আর সাধারণভাবে আমরা কীটশত্রু বলতে রোগ এবং পোকাকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকি কারণ তার আক্রমণের স্পষ্ট চিহ্ন আমরা খালি চোখে দেখতে পাই আক্রান্ত গাছের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু কীটশত্রুর মধ্যে আরো একটি বিরাট শত্রু রয়েছে, যার ক্ষতির কোন তাৎক্ষণিক ছাপ আমরা দেখতে পাই না বলে যথাযথ পরিকল্পনা সহকারে সেই আগাছা দমনে তৎপর হই না যদিও এখন কিছুটা হলেও চিত্র বদলাচ্ছে বা বদলেছে, কৃষক আগাছার সমস্যা নিয়ে সচেতন হচ্ছে। কীটশত্রুর দ্বারা আমাদের ফসলের মোট যে ক্ষতিসাধন হয়, তার বেশীরভাগটাই সংঘটিত হয় আগাছার দ্বারা প্রায় ৩৩ শতাংশ, যেখানে পোকার দ্বারা ২৬ শতাংশ, রোগের জন্য ২০ শতাংশ এবং অন্যান্যর জন্য ২১ শতাংশ - Directorate of Weed Science Research (DWSR) এর এই তথ্যই স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, আগাছা নিয়ন্ত্রণ কে আমাদের কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আগাছা ফসলের সাথে সাথে জমিতেই বাড়তে থাকে এবং সমস্ত খাদ্যউপাদান সহ প্রাকৃতিক উপাদানেও ভাগ বসাতে থাকে ফলস্বরূপ ফসল তার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম খাদ্য ও অন্যান্য উপাদান কম পেয়ে তুলনামূলক ভাবে কম পুষ্ট হয়, যার ফলে শুরুর দিকে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার প্রভাব স্পষ্টতই পরিলক্ষিত হয় ফলনে। তাই যথোপযুক্ত ব্যবস্থা আমাদের গ্রহণ করতেই হবে। আগাছা কোন ফসলে কোন সময়ে সর্বাধিক ক্ষতি করে তা কিন্তু সকলের সঠিক ভাবে জানা নেই আর তেমনি কোন ফসলে কিভাবে আগাছা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত তাও আমাদের জানতে হবে। তাই সঠিকভাবে সঠিক সময়ে আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং আমাদের যে মূল লক্ষ্য, ‘উৎপাদনশীলতা বাড়ানো’ সেই বিষয়টাকে সুনিশ্চিত করতে হবে।
আগাছার জন্য যে পরিমাণ খাদ্যশস্যের উৎপাদন ব্যহত হয় তা প্রতি বছর ৮২ মিলিয়ন টন, ডাল শস্য ১৪ মিলিয়ন টন, তৈলবীজ ফসল ১২ মিলিয়ন টন ও বাণিজ্যিক ফসল ৫২ মিলিয়ন টন, সব মিলিয়ে ১৬০ মিলিয়ন টন প্রায় আর আমাদের মোট ফলন ৫৬৬ মিলিয়ন টন।
আরও পড়ুন - Food Security - খাদ্যসুরক্ষায় কৃষকবন্ধুদের অবদান, জয় জওয়ান জয় কিষাণ
অর্থাৎ ঠিকভাবে আগাছা দমন করতে পারলে আরো ফলন বাড়ানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদের মনে রাখতে হবে, কৃষিকাজে প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে ফসল সমৃদ্ধ অথবা পতিত যে কোন জমি হোক না কেন, আগাছাকে অবশ্যই বীজ ধারণের আগেই শেষ করে দিতে হবে।
আরও পড়ুন - Soil Test - ফসলে ভালো ফলন পেতে হলে কৃষকবন্ধুরা অবশ্যই মাটি পরীক্ষা করান
Share your comments