১৯৬০-এর দশকে, সবুজ বিপ্লবের অংশ হিসাবে, প্রধানত পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষকদের ধান-গম এই দুটি ফসলের আবর্তন অনুসরণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছিল যাতে খাদ্যশস্য উৎপাদনে ভারতকে স্বনির্ভর করা যায়। এরই ফলস্বরূপ কৃষকদের কাছে থাকা একমাত্র সহজ এবং সস্তা বিকল্পটি হল জমিতে পড়ে থাকা ফসলের অবশিষ্টাংশগুলি পুড়িয়ে ফেলা কারণ খরিফ মৌসুমের (Kharif season) শেষে ধান কাটা ও গম বপনের মধ্যে খুব অল্প সময়কাল থাকে এবং অপরদিকে ধানের খড় যা মাঠে থেকে যায় তা অপসারণ করাও অত্যন্ত শ্রম নিবিড় প্রক্রিয়া।
আমাদের দেশের কৃষিতে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষকদের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম অনেকটাই কমিয়েছে। সম্প্রতি ফসল সংগ্রহে ব্যবহৃত হয় হার্ভেস্টর। কম্বাইন হারভেস্টর মেশিন -এর ব্যবহার সারা দেশের কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় অনেক রাজ্যে শুরু হয়েছে সমান তালে নাড়া পোড়ানো, যা একেবারেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক এবং আইন বিরুদ্ধ। ভারতীয় কৃষি গবেষণা সংস্থার হিসেব অনুযায়ী জানা গেছে যে, দেশে ফসল তুলতে হারভেস্টর যন্ত্র ব্যবহার করার দরুন প্রায় ১৫ কোটি মেট্রিক টন নাড়া মাঠেই থেকে যাচ্ছে।
পুসা কম্পোস্ট বা ডিকম্পোসার প্রযুক্তি হল একটি তরল গঠনের বা ক্যাপসুল আকারের জীবাণু ভিত্তিক কৌশল যা বর্জ্যগুলিকে পচিয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ কম্পোস্টে রূপান্তরিত করে।
সুবিধাদি -
-
ক্যাপসুলগুলির কোনও ক্ষতিকারক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
-
ক্যাপসুলগুলি ব্যাবহারের ফলে খামারপ্রাপ্ত বর্জ্যগুলি পচে যায় এবং মূল্যবান কম্পোস্ট উপকরণগুলিতে পরিণত হয়।
-
এটি জমির আর্দ্রতা আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য বজায় রাখে ।
-
এই ক্যাপসুলটি আগুনের আশ্রয় না নিয়েই খড়ের অবশিষ্টাংশগুলিকে কেবল পচিয়ে দিতে পারে না উপরন্তু জমির উর্বরতাও বাড়ায়।
-
মাটি বা বায়ু দূষণ না করেই কৃষকরা পরবর্তী ফসল চাষের জন্য ক্ষেতগুলি প্রস্তুত করে তোলে।
-
ক্যাপসুলগুলি ছোট এবং প্রান্তিক কৃষকদের পক্ষেও বেশ সাশ্রয়ী ।
-
একটি ক্যাপসুলের দাম মাত্র ৫ টাকা ।
-
এই ক্যাপসুলটি অন্যান্য ফসলের অবশিষ্টাংশের পাশাপাশি নারকেলের কুঁচিতেও কার্যকর, যা দক্ষিণ ভারতের কৃষকদের পক্ষে পচন ঘটানো বেশ অসুবিধেজনক।
-
প্রায় ৫ গ্রাম ওজনের এই আই আর আই ক্যাপসুল থেকে তৈরি দ্রবণ ১০ টন ধানের খড়ের ওপর স্প্রে করার জন্য যথেষ্ট এবং এটি ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সেই অবশিষ্টাংশ পচিয়ে দিতে পারে।
-
ক্যাপসুলগুলি মাটিতে বসবাসকারী উপকারী অণুজীব এবং অণুখাদ্যগুলিকে রক্ষা করতে, পরিবেশ বান্ধব উপায়ে খড়গুলি পচিয়ে দিতে এবং মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণে সহায়তা করে ।
-
চারটি ক্যাপসুল এর জন্য ব্যয় হবে মাত্র ২০ টাকা যা এক হেক্টর জমির জন্য ২৫ লিটার কার্যকারী দ্রবণ তৈরি করতে ব্যবহৃত হতে পারে ।
-
পুসা কম্পোস্ট বা ডিকম্পোসার ধানের খড়ের পচে যাওয়ার সময় অনেকটাই কমিয়ে দেয় ।
-
এই ক্যাপসুলটি কৃষকদের দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরতা হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে ।
-
পুসা ডিকম্পোসার ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোর অভ্যাসটি নিয়ন্ত্রণে এনে পরিবেশ দূষণ হ্রাস করবে এবং মাটি সমৃদ্ধ করে কৃষকদের সহায়তা করবে ।
-
পুসা ডিকম্পোসার বা পুসা ট্যাবলেট সম্পূর্ণ জৈব, রাসায়নিক মুক্ত এবং অ-বিষাক্ত যা সব ধরণের বায়োমাসের ওপর কার্যকরী ।
আরও পড়ুন - Pusa Decomposer - খড় পোড়ানোর বিরুদ্ধে রূপান্তরকারী উদ্ভাবন হিসাবে অভিনব একটি মাইক্রোবিয়াল ককটেল
ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্যাটেলাইট রিমোট সংবেদনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের একই তারিখের তুলনায় এই বছর অক্টোবরের প্রথম ছয় দিনের মধ্যে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের কৃষি জমিতে আগুন লাগানোর সংখ্যা পাঁচগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ।
ফসল কাটার পরে জমিতে পড়ে থাকা ধানের খড় পুড়িয়ে ফেলা বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি উত্তর গঙ্গাজগতের সমভূমিতে এবং দিল্লির মতো দূষিত শহরগুলিতে প্রবল হারে বায়ু দূষণে অবদান রাখে। সমস্যাটি মোকাবিলায় বেশ কয়েকটি সমাধান প্রস্তাব করা হয়েছে কিন্তু সর্বাধিক সাম্প্রতিক হল আই আর আই দ্বারা নির্মিত এই ‘পুসা ডিকম্পোসার’ ক্যাপসুল।
আরও পড়ুন - Aquaponics - মাছ ও শাকসব্জি চাষ এখন গৃহকর্মেরই অঙ্গ
Share your comments