কলা, সারাবছরই পাওয়া যায় স্বাস্থ্যকর এই ফলটি৷ কাঁচা এবং পাকা, দু অবস্থাতেই এটি খাওয়া হয়৷ কাঁচা কলা সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়, পাকা কলা বিভিন্ন ভাবে খাওয়া হয়৷ কলা দিয়ে নানান পদও তৈরি করা হয়৷ সারাবছরই আমাদের খাদ্যতালিকায় যে ফলগুলি থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হল কলা৷
কলা মুসাসেই গোত্রীয় ফলের অন্তর্গত। এর বৈজ্ঞানিক নাম হল মুসা অ্যাকিউমিনাটা, মুসা বালবিসিয়ানা৷ কলা (বাংলা), Banana (ইংরেজি), কেলা (হিন্দি), বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন নামে পরিচিত এই ফল৷ কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকা অবস্থায় হলুদ বর্ণের হয় এটি৷ আবার লাল কলাও (বাইরের খোসার রঙ) পাওয়া যায় অনেক জায়গায়৷
কলার বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে৷ কিছু কলাতে আবার বীজ থাকে৷ কিছু কলাতে থাকে না৷ কলার গাছের শুধু ফলই নয়, এর বিভিন্ন অংশ আমরা ব্যবহার করে থাকি৷ তাই কলার চাষও কৃষকদের জন্য যথেষ্ট লাভজনক। ফলের পাশাপাশি কাণ্ড, ফুল, পাতা, কলার খোসা, এসবও আমরা ব্যবহার করি৷
প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায় রয়েছে- জল- ৭০.১%, আমিষ- ১.২%, ফ্যাট- ০.৩%, খনিজ লবণ- ০.৮%, ক্যালসিয়াম- ৮৫মি.গ্রা., ফসফরাস- ৫০মি.গ্রা., আয়রন- ০.৬মি.গ্রা., আঁশ- ০.৪%, শর্করা- ৭.২% প্রভৃতি উপাদান রয়েছে৷
এবার দেখে নেওয়া যাক আমাদের শরীরের জন্য কলা কেন প্রয়োজন (Benefits of Banana)-
১) হার্টের সুরক্ষায়- কলা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, এমন আমাদের হার্টকে সুস্থ রাখতে গেলে অন্যান্য উপাদানের মতো প্রয়োজন রয়েছে পটাশিয়ামেরও৷ যার ফলে আমাদের হৃদযন্ত্র শুধু সুস্থই থাকে না, এর কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়, এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে৷
২) হজমশক্তি বাড়াতে- কলাতে ফাইবার বিদ্যমান, যা আমাদের হজমে খুবই সাহায্য করে এবং পরিপাকক্রিয়াতেও সাহায্য করে৷ গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সমাধানেও এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ৷ এছাড়াও কলার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি আমাদের শরীর থেকে মেদকে দূরে রাখে৷ এপ্রসঙ্গে উল্লেখ্য, কাঁচা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে থাকে৷
৩) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে- পটাশিয়ামের পাশাপাশি কলাতে সোডিয়াম এবং কার্বোহাইড্রেট এই দুটি উপাদানও বিদ্যমান, যা আমাদের শরীরের প্রতিদিনের এই উপাদানের যে চাহিদা তার জোগান দেয়৷ এবং সেই সঙ্গে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ করে৷
৪) ওজন নিয়ন্ত্রণে- কলার মধ্যে বিদ্যমান ফাইবার এক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন৷ প্রতিদিন নিয়ম করে একটি বা দুটি কলা শরীর থেকে বাড়তি মেদ যেমন দূরে রাখে তেমনই ওজনও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে৷
৫) হাড়ের শক্তিবৃদ্ধিতে- কলাতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম হাড়ের গঠন মজবুত করতে খুবই প্রয়োজনীয়৷ আমাদের শরীরকে অস্টিওপোরোসিসের মতো সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে এই উপাদানগুলি৷ তাই খাবারের তালিকায় রোজ একটা করে কলা থাকা আবশ্যক৷
৬) রক্তাল্পতার সমস্যা সমাধানে- অনেকেই এই সমস্যায় ভোগেন৷ কলাতে থাকা ভিটামিন এই সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে৷ কলাতে থাকা তামা এবং লোহাও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷
৭) ডায়েরিয়া নিয়ন্ত্রণে- ছোট থেকে বড় সকলকেই ডায়েরিয়ার মতো সমস্যা থেকে বাঁচাতে কলার জুড়ি মেলা ভার৷ পেটের কোনও সমস্যা, কোষ্ঠাকাঠিন্য দূর করতে কাঁচা কলা, পাকা কলা উভয়ই খুব কার্যকরী৷
৮) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে- কলাতে কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার রয়েছে প্রচুর পরিমাণে, যা, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে৷
৯) ত্বকের সুরক্ষায়- ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে, ব্রণর সমস্যা কমাতে, বলিরেখা পড়া রুখতে, পাকা কলা চটকে, বা তার সঙ্গে কিছুটা মধু মিশিয়ে অনেকে মুখে ২০ মিনিট ফেসপ্যাক হিসেবে মেখে তা ধুয়ে ফেলেন৷
১০) চুলের সুরক্ষায়- চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় অনেকে পাকা কলা ব্যবহার করেন৷ পাকা কলার সঙ্গে দই মিশিয়ে চুলে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে দিলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো হয়৷ মজবুত হয়৷ এছাড়া পাকা কলা, নারকেলের দুধ, অ্যাভোক্যাডো মিশিয়ে, সেই পেস্ট চুলে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে দিলে চুল নরম হয়৷
কলার ব্যবহার (Usage of Banana)- কলার জুস, কলা থেকে বিভিন্ন মিষ্টি, প্যানকেক, কেক এমন অনেক কিছু পদই তৈরি করা হয়৷ দক্ষিণ ভারতে আবার কলা ভাজাও খুবই জনপ্রিয়৷ এছাড়া রূপচর্চায় কলার ব্যবহারও প্রায় সকলেরই জানা৷ তাই প্রতিদিন কলা খেলে বহু সমস্যা থেকেই আমাদের শরীর রক্ষা পাবে৷ তবে কলা বা কোনও ফলে অ্যালার্জি থাকলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই তা খাওয়া উচিত৷
বর্ষা চ্যাটার্জি
Share your comments