আঞ্জির/ডুমুর ফল হিসাবে পরিচিত হলেও এর উপকারিতা অনেকেরই অজানা। এটি প্রোটিন, ফসফরাস, গ্লুকোজ এবং ক্যালসিয়ামের প্রাকৃতিক উত্স। শুকনো আকারে বা সারা রাত জলে ভিজিয়ে, উভয় রূপেই ডুমুর খাওয়া হয়। ভিটামিন এ, সি, ডি এবং বি এর একটি দুর্দান্ত উত্স হল এই আঞ্জির, পুষ্টিতে সমৃদ্ধ এই ফলটি আমাদের হাড় এবং ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে গুণাবলীর কারণে আঞ্জির শুকনো ফলের পরিবর্তে ওষুধ রূপে অনেকের কাছে গ্রহণীয়।
১) স্তন ক্যান্সার নিরাময় (Cure breast cancer)-
মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার এখন সাধারণ একটি ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত মেনোপজের পরে এই সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। আঞ্জিরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে এবং এটি সমস্ত বয়সের মহিলাদের জন্য উপকারী। নিয়মিত ডুমুর খাওয়া স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে। ফ্রি র্যাডিকালগুলি ক্যান্সারের বিকাশের প্রধান কারণ। আঞ্জিরে থাকা ফাইবার এই ফ্রি র্যাডিক্যালগুলি থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
২) অন্ত্রের সমস্যা দূরীকরণ (Eliminating intestinal problems)–
আঞ্জির পেটের যে কোন সমস্যা সমাধানে সহায়ক। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তিলাভ হোক, বা অর্শের সমস্যা, সবেতেই দুর্দান্ত কাজ করে আঞ্জির। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিডনিতে স্টোনের মত সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
৩) ওজন হ্রাসে সহায়ক (Helps in weight loss)-
আঞ্জিরে থাকা ফাইবারের উপাদানগুলি স্থূলতা হ্রাস করতে সহায়তা করে। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে তা গ্রহণ করবেন না। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি গ্রহণের ফলে আপনার ওজন হ্রাসের পরিবর্তে তা বাড়তে পারে। সারা রাত জলে/দুধে ভেজানো ২ টি আঞ্জির খালি পেটে গ্রহণ যথেষ্ট।
৪) প্রজনন স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক -
ডুমুর জিংক, ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজগুলিতে সমৃদ্ধ, যা যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া এগুলি যৌন দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতেও ব্যবহৃত হয়, এটি প্রজনন স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ২-৩ টি আঞ্জির সারা রাত দুধে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে তা খালি পেটে গ্রহণ করুন।
৫) উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় -
আঞ্জির হ'ল কম সোডিয়ামযুক্ত খাবারগুলির মধ্যে একটি, তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এটি একটি আদর্শ খাদ্য।
৬) গলার সমস্যা -
আঞ্জিরের প্রাকৃতিক রস গলার ব্যথা উপশম করতে সহায়ক। বিভিন্ন শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অসুস্থতা যেমন হুপিং কাশি, হাঁপানি ইত্যাদি হ্রাস করার ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকর। গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে জলে শুকনো ডুমুর ও মধু মিশিয়ে তা গ্রহণ করুন।
৭) চোখের সুরক্ষা -
আঞ্জিরে ভিটামিন এ রয়েছে, যা চোখের দৃষ্টি উন্নত করতে এবং ম্যাকুলার অবক্ষয়ের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ২-৩ টি শুকনো ডুমুর গ্রহণ করুন এবং দৃষ্টিশক্তি হ্রাস হওয়ার ঝুঁকি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তিলাভ করুন। এছাড়াও এটি ডার্ক সার্কেল, রিঙ্কেল এবং সূক্ষ্ম রেখা অপসারণেও সহায়ক।
৮) ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উপকারী (Good for diabetic patients)-
আঞ্জির ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর, এতে পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা আমাদের দেহে ইনসুলিন নিঃসরণ স্থিতিশীল করতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
৯) আয়রনের ঘাটতি নিরাময় (Cure iron deficiency)-
শুকনো আঞ্জির আয়রনে সমৃদ্ধ, যা আমাদের দেহে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করে। তাই ডুমুর খেলে শরীরে আয়রনের মাত্রা, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রাকৃতিক উপায়ে বৃদ্ধি পায়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য –
মনে রাখবেন, যে খাদ্যই আপনি স্বাস্থ্যের উপকারের জন্য গ্রহণ করুন না কেন তা পরিমিতরূপে গ্রহণ করা উচিত। অতিরিক্ত পরিমাণে কোন কিছুই খাওয়া উচিৎ নয়। বেশী পরিমাণে কোন ভালো ফলও যদি আপনি সুফল পাবার আশায় গ্রহণ করেন, তবে তা ফলপ্রসূ তো হবেই না, বরং অন্য সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে। সুতরাং, সর্বদা, আপনার জীবনযাত্রায় বা খাওয়ার ধরণে কোনও বড় পরিবর্তন করার আগে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
Share your comments