কৃষিজাগরন ডেস্কঃ আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কিংবা স্তূপীকৃত গোবর রাখার স্থানে ছাতার আকৃতির সাদা রংয়ের এক ধরনের ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। একে আমরা ব্যাঙের ছাতা বলে অভিহিত করে থাকি। আগাছার মতো যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা এসব ছত্রাক খাবার উপযোগী নয়। অনুরূপ দেখতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের মাধ্যমে যে ব্যাঙের ছাতা উৎপাদিত হয়, তা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং বিশ্বে সবজি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই ব্যাঙের ছাতাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘মাশরুম’।
সাধারণভাবে মাশরুম হল বিশেষ এক প্রকার প্রজাতির ছত্রাক, বেশ সুস্বাদু মুখরোচক এবং উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ। এদের কোনো ক্লোরোফিল থাকে না। এরা স্যাঁতসেঁতে ও ছায়াযুক্ত জায়গায় এবং মৃত জৈব বস্তুর উপর জন্মায়। যেমন—খড়, পাতা, মরা গাছের ডাল। পচা জৈব বস্তুর খাদ্যসার এরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান হিসাবে ব্যবহার করে নিজেদের অঙ্গজজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজেদের বংশবিস্তার করে।
মাশরুমের খাদ্যগুণ জানলে চমকে যাবেন
১। খাদ্যগুণ বলতে এতে ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও অতি প্রয়োজনীয় ১৮ রকমের অ্যামাইনো অ্যাসিড ও প্রোটিন থাকে।
আরও পড়ুনঃ কেন মাশরুম চাষ লাভজক ? জানুন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন কারন
২। মাশরুমের অনেক ওষুধি গুণ আছে। শর্করা কম থাকায় ডায়াবেটিক রোগীদের আদর্শ খাদ্য। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকায় হাড় ও দাঁতের গঠনে বিশেষ কার্যকরী। ফলিক আ্যসিড থাকায় রক্তাল্পতা রোগে উপকারী।
৩। মাশরুম প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। তাই একে সবজি মাংসও বলা হয়ে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রামে (শুকনো মাশরুম) ২০-৩০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
৪। মাশরুমে ভিটামিন সি, বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস ও কমমাত্রায় ক্যালসিয়াম ও লৌহ রয়েছে। লৌহ কম থাকাতেও সহজলভ্য অবস্থায় থাকে বলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় রাখতে মাশরুম সহায়তা করে।
৫। মাশরুম খুব নিম্নশক্তি সম্পন্ন খাবার (Low calorie) | এতে কোলেষ্টরল নেই, চর্বির পরিমাণ অত্যন্ত কম (২-৮%) কিন্তু শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড লিনোলোয়িক এসিড রয়েছে।
৬। মাশরুম সহজপাচ্য খাদ্য হওয়ার দরুন শিশু, গর্ভবতী মহিলা, বৃদ্ধ এবং হার্টের, বহুমূত্র (ডায়াবেটিস), গ্যাসের সমস্যা, কুষ্টকাঠিন্য, হাইপারটেনশন এবং রক্তাপ্লতা রোগীদের ক্ষেত্রে একটি উত্তম পথ্য হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষি
৭। মাশরুমের পরিমিত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও যথেষ্ট আঁশ (৮-১০%) থাকে। এতে স্টার্চ নেই। শর্করার পরিমাণ কম বিধায় বহুমূত্র রোগীদের জন্য মাশরুম আদর্শ খাবার।
৮। কম চর্বি, কোলোস্টেরকমুক্ত এবং লিনোলেয়িক এসিড সমুদ্ধ হওয়ায় মাশরুম হৃদরোগীদের জন্যও খুব উপকারী।
Share your comments