আপেল এক অতি জনপ্রিয় মিষ্টি সুস্বাদু ফল | এটি রোসাসি (Rosaceae) পরিবারের ম্যালিয়াস ডমেস্টিকা (Malus domestica) প্রজাতিভুক্ত | সারা পৃথিবীব্যাপী সাধারণত আপেলের চাষ হয়ে থাকে | তবে, যেহেতু এটি শীতকালীন ফল, তাই অনেকেই ভাবেন আমাদের দেশের এই গরম আবহাওয়ায় কিভাবে এই মিষ্টি ফলের চাষ করবেন |
আপনার বাড়িতেই কিন্তু সহজ উপায়ে এই ফলের চাষ (Apple cultivation) করে তাকে লাগিয়ে দিতে পারেন | তার জন্য, এই নিবন্ধটি পুরোটা আপনাকে পড়তে হবে, তবে দেখে নিন কি কি করনীয় এই আপেল চাষের জন্য;
জাত নির্বাচন:
সাধারণত, আমাদের আবহাওয়ায় আপেল গাছে ফুল আছে ফেব্রুয়ারী মাসে এবং ফল পাকে অগাস্ট সেপ্টেম্বর মাসে | বছরের এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশে আনুমানিক ৩০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস | এই প্রচন্ড গরমে কোনো সাধারণ আপেল হওয়া সম্ভব না, তাই তার জন্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জাত হল, হরিমন ৯৯ (hrmn 99 ) আপেল, গোল্ডেন ডরসেট আপেল (Golder dorset) এবং আনা আপেল | অন্যান্য আপেল গাছে ফুল আসার জন্য যেখানে কড়া ঠান্ডার প্রয়োজন হয়, সেখানে এই জাতিগুলির জন্য প্রয়োজন হয়না | এই জাতিগুলির জন্য মাত্র ৩০০ ঘন্টা ঠান্ডা আবহাওয়া হলেই চলে | অর্থাৎ শীতকালে ১২-১৩ দিন কড়া শীত পড়লেই গাছে ফুল আসবে |
মাটি তৈরী (Soil preparation):
আপেল গাছ করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিকভাবে মাটি তৈরী | ৩০ শতাংশ বাগানের মাটি, ৩০ শতাংশ কম্পোস্ট, ২০ শতাংশ কোকোপিট্, ১০ শতাংশ সাদা বালি এবং নিতে হবে ১০ শতাংশ বালি চলা পাথর | এরপর প্রতি ১ বস্তা মাটির জন্য নিতে হবে ৪০০ গ্রাম হার গুঁড়ো, ২০০ গ্রাম নিম খোল এবং ১০ গ্রাম যেকোনো ফাঙ্গিসাইড পাউডার | এবার আপনাকে সবকিছু উপাদান একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে এবং এই মিশ্রণটি হলো আপেল গাছের পুষ্টি | এভাবে মাটিকে মিশিয়ে জল দিয়ে ভিজিয়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে বা বস্তার মধ্যে ভরে ১০ থেকে ১৫ দিন রাখতে হবে | তারপর সেই মাটিকে বার করে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করতে হবে | গাছ বসানোর সময় মাথায় রাখতে হবে, টবটিকে সম্পূর্ণ মাটি দিয়ে ভর্তি করবেননা |
গাছের পরিচর্যা (Crop care) :
গাছ বসানোর পরে খেয়াল রাখতে হবে, গাছে যেন জল ধরে না রাখে | টবের নিচে গর্ত দিয়ে জল বেরিয়ে যায় | গাছে নিয়মিত পেস্টিসাইড স্প্রে করতে হবে | যাতে ছত্রাক ঘটিত রোগ না হয় | ফেব্রুয়ারী মাসের গাছের ফুল আসার জন্য বিশেষ যত্ন নিতে হয় | অনেক সময় দেখা যায় ফুলের বদলে পাতা বের হয় | তাই ফুলের সম্ভাবনা বাড়ার জন্য এই মাসে প্লানোফিক্স PGR প্রতি লিটার জলে ৫ ফোটা গুলে গাছে স্প্রে করতে হবে | মার্চ মাসে সপ্তাহে ১ বার মানকোজেব যুক্ত যেকোনো ছত্রাকনাশক গাছে স্প্রে করতে হবে | গাছে ফল ধরলে ৭-১০ দিন ছাড়া নিম তেল ও ফাঙ্গিসাইড মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে |
সার প্রয়োগ (fertilizer):
আপেল গাছের ক্ষেত্রে ২ মাস অন্তর মিশ্র জৈব সার ব্যবহার করা যেতে পারে | ২৫ শতাংশ সর্ষে খোলের গুঁড়ো, ২৫ শতাংশ নিম খোল, ২৫ শতাংশ হার গুঁড়ো এবং ২৫ শতাংশ সিমকুচি নিতে হবে | এই পুরো মিশ্রনের মধ্যে ৫ গ্রাম SOP বা সালফেট অফ পটাস দিতে হবে | টব যদি ১০-১২ ইঞ্চির হয় এই উপাদানের ২ মুঠো গাছে ২ মাস অন্তর অন্তর প্রয়োগ করতে হবে | এবং প্রতি মাসে অনুখাদ্য হিসাবে Agromin Max ২ গ্রাম হরে দিতে হবে |
আরও পড়ুন - এই গ্রীষ্মে মৌমাছি পালনের ব্যবসা করে কীভাবে আয় করতে পারবেন প্রচুর অর্থ, জানুন বিস্তারিত
রোগবালাই ও দমন (Disease management system):
আপেল গাছ মাঝে মাঝে লাল মাকড়ের আক্রমণের শিকার হয় | এর আক্রমণে পাতা বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যায় | এর জন্য PROFX SUPER মাকড়নাশক ব্যবহার করতে হবে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Organic Farming: অর্গ্যানিক ফার্মিং বা জৈব কৃষিকাজে ফলছে সোনার ফসল
Share your comments