রূপে কালো, কিন্তু গুনে ১০০ ভাগ। তাই রঙে কালো হয়েও ঝরঝরে সাদা চাল কে সে অনায়াসে টেক্কা দিয়েছে। পাল্লা টানছে সুবাসেও। কালো চালের ভাতের উপকারিতা দেখে পুষ্টি-বিজ্ঞানীরা বেজায় সন্তুষ্ট।
কুচকুচে ওই কালো চাল ফুটিয়ে যে ভাত হয়, আপাতদৃষ্টিতে তা-ও যেন কৃষ্ণবর্ণ। তবে ভাল ভাবে দেখলে বোঝা যাবে, ভাত ঠিক কালো নয়। বরং গাঢ় বেগুনি। যা কি না সাদা ভাতের তুলনায় পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধক উপাদানে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। বিশেষত, ক্যানসার প্রতিরোধে কালো ভাত যথেষ্ট সহায়ক বলে পুষ্টি-বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি। তাই সরকারি উদ্যোগে সুগন্ধী কালো চালের খরিফ চাষ পশ্চিমবঙ্গে অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে।কালো চালে উপস্থিত পুষ্টি উপাদানগুলি হল- ফ্যাট ১.৫ গ্রাম (৩%), কার্বোহাইড্রেট ১১%, আঁশ ৫%, ভিটামিন এ ২%, আয়রণ ৬%। উপকারীতার জন্য পশ্চিমবঙ্গে কালো চালের চাষ (Black rice cultivation) দিন দিন বাড়ছে।
চাষের সময় (Time):
শুধুমাত্র আমনের মরশুমেই ব্ল্যাক রাইস চাষ করা যাবে। বোরো মরশুমে চাষ হয় না । কারণ এর ফুল ফোটার সময় যদি তাপমাত্রা বেশি থাকে তাহলে ফুল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই শ্রাবণের মাঝামাঝি ধান লাগানো হয়। ১৩৮-১৪০ দিনের ফসল।
কালো চালের চাহিদা ঠিক কতটা?
এরাজ্য থেকে কর্ণাটক ও তামিলনাডু যাচ্ছে কালো চাল। বাংলার কালো চালের ভালো বাজার তৈরি হচ্ছে ইউরোপের দেশে। চাষের এলাকা বাড়াতে কৃষি দপ্তর থেকে বীজ দেওয়া হয়। সঙ্গে প্রযুক্তিও দেওয়া হয়। মূলত এ রাজ্যে কালো চাল "ঔষধি চাল" হিসাবেই উৎপাদন হচ্ছে | বেঙ্গালুরুতে কালো ভাতের চাল অন্তত ১৬০ টাকা কেজি দরে বিকোচ্ছে, ফলাচ্ছেন কর্নাটকের চাষিরাই।
চাষীদের কি মত?
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার বনশ্যামনগর গ্রামের দেবাশিস ঘড়ুই বলেন, “খরিফ মৌসুমে তারা কালো ধান চাষ করবে ।” দেবাশিসবাবু জানান, কালো চালে ফলন পেতে সময় লাগে ১০০-১১০ দিন। বিঘে-পিছু সাড়ে পাঁচ কুইন্টাল ধান ওঠে, ভাতের গন্ধ অনেকটা গোবিন্দভোগের মতো। বর্ধমানের আউশগ্রামের চাষি অভ্র চক্রবর্তীর কথায়, “বিঘে-পিছু সাড়ে পাঁচ কুইন্টাল আসবেই। আমি দু’কেজি ধান রেখে দিয়েছি। এই খরিফে পুরোটা বীজ হিসেবে লাগাব।”
মূলত অ্যান্থোসায়ানিন নামে এক বিশেষ যৌগের উপস্থিতির সুবাদে চাল কালো হয়।” অ্যান্থোসায়ানিন-ই ক্যানসার ঠেকাতে বিশেষ ভূমিকা নেয় বলে গবেষণায় প্রকাশ। “উপরন্তু বার্ধক্য, স্নায়ুরোগ, ডায়াবেটিস, এমনকী ব্যাক্টেরিয়া-সংক্রমণ প্রতিহত করতেও অ্যান্থোসায়ানিনের জুড়ি মেলা ভার। এই চালে আয়রন ও ফাইবার বেশি, অথচ শর্করা কম।
রোগ ও প্রতিকার (Disease management system):
মূলত কালো চালে মাজরা পোকা ও দানের পাতা মোড়া রোগ দেখা দেয় | এই রোগ দমনে মহুয়া খোল ও নিম খোলের নির্যাস ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি দপ্তরের বিষশষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন - Almond Farming: এই বর্ষায় বাড়িতেই করুন পুষ্টিকর আমন্ডের চাষ
দেশের এক প্রথম সারির রেস্তোরাঁ গোষ্ঠীর কর্ণধার বলেছেন, “চিনের কুনমিং প্রদেশে দাই সম্প্রদায়ের মানুষ মূলত এই কালো চালেরই ভাত খান। কিন্তু এখানে আচমকা কালো ভাত যত্রতত্র চালু করলে লোকে ভয় পেয়ে যাবে। তাই বিশেষ বিশেষ পদের মাধ্যমে এর প্রসার ঘটাতে হবে।” উদাহরণও দিচ্ছেন তিনি “আমাদের চিনে খাবারের রেস্তোরাঁয় কালো চাল দিয়ে পাইনঅ্যাপল রাইস নামে একটা বিশেষ পদ উৎসবের মরসুমে তৈরি হয়। এ বার কালো চালে চিংড়ি পোলাও করার কথা ভাবছি। এই ধরণের বিভিন্ন খাবারের জন্য বাজারে কালো চালের চাহিদা বাড়ছে ক্রমাগত | তাই এই কালো চাল চাষ করে কৃষকরা বেশ আর্থিকদিক থেকে স্বচ্ছল হতে পারেন |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - বর্ষায় আপেল ফসলে সহজ পদ্ধতিতে রোগ নিয়ন্ত্রন
Share your comments