সুস্থায়ী পদ্ধতিতে ফসলের সাদা মাছি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

হেমিপটেরা’ পর্বের এই মাছির সাথে শ্রেণীবিন্যাস গত ভাবে ‘দয়ে পোকা (Mealy Bug)’ এবং ‘জাব পোকা (Aphid)’ এর মিল রয়েছে। এই মাছিও গাছের পাতার নিম্নভাগের রস শুষে খেয়ে থাকে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন, ২৭° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় এই মাছি ৩০ দিনের মধ্যে নিজেদের জীবনচক্র সম্পন্ন করে ফেলে। এদের পলিফেগাস প্রবৃত্তির জন্যে এরা প্রায় যেকোনো ধরনের ফসলের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে পারে।

KJ Staff
KJ Staff
Crop white fly control
White fly (Image Credit - Google)

আমাদের রাজ্যে তথা পূর্ব ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে নারিকেল চাষের (Coconut Cultivation) ক্ষেত্রে একটি নবতম সংযোজন হল একটি নতুন প্রজাতির সাদা মাছি। যারা কৃষি কাজের সাথে যুক্ত অথবা যারা এ বিষয়ে খবরাখবর রাখেন, তাদের কাছে সাদা মাছি একটি অত্যন্ত পরিচিত নাম। প্রায় সব সবজিতেই কম বেশি সাদা মাছির (White Fly) প্রকোপ দেখা যায়। প্রতিবছর এই সাদা মাছির প্রকোপে সবজি চাষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।

‘হেমিপটেরা’ পর্বের এই মাছির সাথে শ্রেণীবিন্যাস গত ভাবে ‘দয়ে পোকা (Mealy Bug)’ এবং ‘জাব পোকা (Aphid)’ এর মিল রয়েছে। এই মাছিও গাছের পাতার নিম্নভাগের রস শুষে খেয়ে থাকে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন, ২৭° সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় এই মাছি ৩০ দিনের মধ্যে নিজেদের জীবনচক্র সম্পন্ন করে ফেলে। এদের পলিফেগাস প্রবৃত্তির জন্যে এরা প্রায় যেকোনো ধরনের ফসলের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে পারে। তাই দক্ষিণভারতে প্রথম দেখা যাওয়ার পর থেকে খুব দ্রুত এরা বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। উপরন্তু, খুব সহজেই বিপুল পরিমাণ পছন্দের খাবারের জোগান এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে খুব সহজেই এরা আমাদের দেশে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। পাতার নিচের অংশ থেকে রস শুষে খেয়ে ফসলের প্রভূত ক্ষতিসাধন ছাড়াও এরা অনর্গল ‘হানি ডিউ’ অথবা আঠাল মধুর ন্যায় মিষ্ট তরল নিঃসরণ করতে থাকে। এই ‘হানি ডিউ’ আশেপাশের এবং নিচের পাতায় পড়ার পর তার উপর ‘ব্ল্যাক শুটি মোলড’ বা কালো রঙের ছোপ বিশিষ্ট ছত্রাক বাসা বাঁধে। এর ফলে গাছের পাতার উপরিভাগ সম্পূর্ণ কালো আস্তরণে ঢেকে যায় এবং তা গাছের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় বাঁধা প্রদান করে।  

নিয়ন্ত্রণ কৌশল:  

বন্ধু পোকা (Natural Enemy – Predator):  

দেখা গেছে, আমাদের দেশীয় অনেক পোকা রয়েছে, যারা প্রাকৃতিক ভাবেই এই সাদা মাছি গুলিকে খেয়ে ফেলে। এইভাবে পরোক্ষভাবে এরা আমাদের উপকার করে। আপনি কৃত্রিমভাবে আপনার বাগানে এই ধরনের বন্ধু পোকাদের আমদানি করে এই সাদা মাছির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এটি একটি অত্যন্ত সফল পরিবেশ-বান্ধব প্রক্রিয়া। কেন্দ্রীয় আবাদি ফসল গবেষণাগার (CPCRI) - কেরালা, জাতীয় কলা গবেষণাগার (NRCB) - কেরালা এবং জাতীয় কৃষিজ কীট সম্পদ কার্যালয় (NBAIR) - নয়া দিল্লি, এদের সকলের মিলিত প্রয়াসে জানা গিয়েছে, আমাদের দেশীয় বন্ধু পোকার প্রজাতি যেমন, Pseudomallada sp., Cybocephalus sp., Diadiplosis sp., Jauravia pallidula, Scymnus nubilus ইত্যাদি এই সাদা মাছিদের খেয়ে ফেলে। তবে দেখা গিয়েছে Encarsia guadeloupae নামক বোলতার একটি প্রজাতি একাই এই সাদা মাছির ৬০-৭০% জনসংখ্যা খেয়ে ফেলে। এই বোলতার প্রজাতিটি ইতিমধ্যেই প্রাকৃতিক ভাবে দক্ষিণভারতের বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে এবং সাদা মাছির প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। কৃত্রিমভাবে বাগানে বন্ধু পোকা আমদানি করার জন্যে উপরের গবেষণাগার এবং কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।  

এছাড়া যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা হল -

১. যেসব পাতায় কালো ছোপ বা ‘Black Sooty Mould’ রয়েছে, সেখানে ১% স্টার্চের দ্রবণ স্প্রে করুন। স্টার্চ শুকিয়ে গেলে তা পাঁপড়ের মত কালো ছোপ গুলি সমেত উঠে আসবে।  

২. বাগানে প্রতি নারিকেল গাছে হলুদ রঙের আঠালো ফাঁদ/Sticker ব্যবহার করুন। যেকোনো নিকটবর্তী সার-কীটনাশকের দোকানে এটি পাওয়া যায়।  

৩. বাগানে বন্ধু পোকা/natural predator নিয়ে আসুন।  

৪. অযাচিত ভাবে রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ করুন। প্রকোপ খুব বেশি হলে পাতায় এবং গাছের কাণ্ডে ০.৫% নিম তেলের মিশ্রণ স্প্রে করতে পারেন।  

৫. যেহেতু, এটি নতুন ধরনের একটি কীট, তাই কোনভাবেই একই কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না। একই রাসায়নিক বারংবার ব্যবহার করলে এরা সহজেই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। তার ফলে পরবর্তীকালে তাদের নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়তে পারে। যদি, নিম তেল প্রয়োগে একান্তই সুফল না পাওয়া যায়, তবে এই নিম্নলিখিত, রাসায়নিকের মিশ্রণ যেমন,  Acephate ৫০ + Imidacloprid ১.৮ SP (১ মিলিলিটার/লিটার জলে), Buprofezin ১৫ + Acephate ৩৫ WP (১ মিলিলিটার/ লিটার জলে) অথবা Thiamethoxam ১২.৬ + Lambda cyhalothrin ৯.৫ ZC (০.৫ মিলিলিটার/ লিটার জলে) আঠা সহযোগে ব্যবহার করতে পারেন।  

আরও পড়ুন - কাশী লালিমা - দেশি ঢ্যাঁড়স-এর এই প্রজাতি কৃষককে দেবে দ্বিগুণ লাভ

এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত এবং সাহায্য পেতে যোগাযোগ করুন -

১) আপনার নিকটবর্তী কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে। সেখানে ঊদ্যানবিদ্যা এবং কীটতত্ত্ব বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে এই বিষয়ে সচেতনতামূলক শিবির আয়োজন করা হয়েছে। 

২) জেলা কৃষি আধিকারিক এবং কৃষি দপ্তর। 

৩) কীটতত্ত্ব বিভাগ, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মোহনপুর, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ, পিন- ৭৪১২৪৬ ।

৪) বাগান এবং আবাদি ফসল বিভাগ, উদ্যান বিদ্যা অনুষদ, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মোহনপুর, নদীয়া, পশ্চিমবঙ্গ, পিন- ৭৪১২৪৬।

আরও পড়ুন - শস্য আবর্তন কেন আবশ্যক? এর মাধ্যমে কৃষকরা কতটা লাভবান হবেন, জানুন বিস্তারিত

Published On: 13 March 2021, 03:56 PM English Summary: Crop white fly control in Sustainable method

Like this article?

Hey! I am KJ Staff. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters