গ্যানোডার্মার বিজ্ঞান সম্মত নাম Ganoderma lucidum যা পৃথিবীজুড়ে অমরত্বের মাশরুম নামে পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে জাপান কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও চীনে হার্বাল ওষুধ হিসেবে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এইডস, ক্যান্সার ও হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগের নিয়ন্ত্রণে গ্যানোডার্মা মাশরুম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এর চাষ নিয়ে মানুষ খুব একটা জানে না ।
এই চাষের করণীয় নিম্নে বর্ণনা করা হলো -
গ্যানোডার্মা মাশরুম চাষ (Ganoderma Mushrooms) -
গ্যানোডার্মা মাশরুমের বীজ উৎপাদনঃ
মাশরুমের স্পন তৈরির জন্য প্রধান উপাদান হিসেবে ভুট্টার খড়, কাঠের গুঁড়ো, আখের ছোবরা ব্যবহার করা যায়। এর সাথে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গমের ভূষি, চালের কুঁড়া, ভুট্টার গুঁড়ো প্রভৃতি ব্যবহার করা যায়। জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ কেন্দ্র কাঠের গুঁড়ো, গমের ভূষি ও চালের কুঁড়া দিয়ে অত্যন্ত সহজে স্পন তৈরি করছে যাতে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
সাবস্ট্রেট ফরমুলেশন ও স্পন তৈরিঃ
উপাদানঃ
কাঠের গুঁড়ো- ৭০%, গমের ভূষি-২৫%, ধানের তুষ-০৫%, ক্যালসিয়াম কার্বনেট-০.২%, জল - ৫০ থেকে ৬০%।
ফরমুলেশনঃ
ধানের তুষ-২.৫%, ক্যালসিয়াম কার্বনেট-০.২%, কাঠের গুঁড়ো- ৭০%, চালের কুঁড়া ২২.৫%, পানি- ৫০ থেকে ৬০% এসবের মিশ্রণ ব্যবহার করে প্যাকেট তৈরি করতে হবে।তারপর কটনপ্লাগ দিয়ে প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে ব্রাউন পেপার এবং রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।
এরপর অটোক্লেভ মেশিনে ১২০০ সে. তাপমাত্রায় ১.৫ কেজি/ঘন ইঞ্চি বাষ্প চাপে ২ ঘণ্টা রেখে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্যাকেট ঠাণ্ডা হলে ল্যাবরেটরিতে ক্লিনবেঞ্চে জীবাণুমুক্ত অবস্থায় মাদার কালচার দিয়ে উক্ত প্যাকেটে ইনোকুলেশন করতে হবে।
পরে প্যাকেটগুলোকে পরিস্কার করে অন্ধকার ঘরে ২৮-৩৫০ সে. তাপমাত্রায় মাইসেলিয়াল কলোনাইজেশনের জন্য রেখে দিতে হবে। এভাবে ২০-২৫ দিন রাখার পর মাইসেলিয়াম দ্বারা প্যাকেট পূর্ণ হবে যা পরবর্তীতে চাষ ঘরে ব্যবহূত হবে।
পরিচর্যাঃ
প্রয়োজন অনুযায়ী আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য দিনে ৩-৪ বার অল্প পানি দিয়ে স্প্রে করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো অবস্থাতেই আর্দ্রতার পরিমাণ যেন না কমে আসে। এভাবে পরিচর্যা করলে ৫-৭ দিনের মধ্যেই সাদা শক্ত মাসরুমের কুড়ি , আর ৫-১০ দিনের মধ্যে লম্বা হয়ে লালচে বর্ণের এবং ১০-১৫ দিনের মধ্যে অগ্রভাগ হাতের তালুরমত আকৃতি ধারণ করবে। এ অবস্থায় ঘরের আলো ও বায়ু চলাচলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে।
মাশরুম সংগ্রহঃ
মাসরুমের কিনারার বৃদ্ধি থেমে গিয়ে চকচকে লাল বর্ণ ধারণ করলে তা পরিপক্ব হয়। পরিপক্ক ফ্রুটিং বডি তুলে নেওয়ার পরে প্যাকেটের কাটা স্থানে একটু চেঁছে দিলে খুব দ্রুত দ্বিতীয় বার ফলন পাওয়া যায়।
মাশরুম সংরক্ষণঃ
সংরক্ষণের শুরুতে গ্যানোডার্মা মাশরুম সংগ্রহ করে তা ভালকরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে। এরপর তা রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর বোতল বা ব্যাগে ভরে বায়ুরোধী অবস্থাতে কয়েক বছর সংরক্ষণ করা যায়। তাছাড়াও পাউডার করে দীর্ঘ দিন রেখে দেওয়া যায়।
আরও পড়ুন - জেনে নিন সঠিক নিয়মে অ্যাডেনিয়াম ফুলের চাষ (Adenium Flower Cultivation)
Share your comments