মরিচ একটি প্রধান মসলা জাতীয় ফসল। দৈনন্দিন জীবনে মরিচ ছাড়া রন্ধনশালা যেন ভাবাই যায় না। এই অর্থকরী ফসলটি মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি সহ পুষ্টির অনেক উপাদান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদ্যমান। বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। প্রধান ফসলের সাথে সঠিক পদ্ধতি জ্ঞাত হয়ে এই ফসলটি চাষ করলে কৃষক অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনে সক্ষম হবেন।
মরিচ চাষ পদ্ধতি -
চারা রোপণ (Plantation) -
রোপণের আগে জমিকে ৪-৫ বার চাষ দিয়ে আগাছামুক্ত করে সমান করতে হবে। এরপর হেক্টরপ্রতি ২০-২৫ টন গোবর বা কম্পোস্ট সার সমানভাবে জমিতে ছিটিয়ে লাঙ্গল দিয়ে চষে মই এর সাহায্যে সমান করতে হবে। ৩-৪ সপ্তাহের ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা চারা বিকালের দিকে মূল জমিতে লাগানো উচিত এবং অবশ্যই গোড়ায় জল দেওয়া আবশ্যক। সাধারণত এক হেক্টর জমির জন্য ৫০-৬০ হাজার চারা লাগে।
চারা লাগানোর দূরত্ব:
বৃষ্টিনির্ভর ফসলের ক্ষেত্রে- ৬০ সেমি × ৩০ সেমি
সেচ নির্ভর ফসলের ক্ষেত্রে- ৬০ সেমি × ৪৫ সেমি
সারপ্রয়োগ (Fertilizer application) -
হেক্টর প্রতি ৪-৬ টন কেঁচো সার জমিতে শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করা যেতে পারে। সাধারণ জাতের ক্ষেত্রে নাইট্রোজেন: ফসফরাস: পটাশ ঘটিত সার ১০০:৬০:৪০ কেজি ও হাইব্রিডের ক্ষেত্রে নাইট্রোজেন: ফসফরাস: পটাশ ঘটিত সার ১৫০:৮০:৮০ কেজি। এক তৃতীয়াংশ নাইট্রোজেন ঘটিত সার এবং পুরো ফসফরাস ও পটাশ ঘটিত সার জমিতে শেষ চাষ দেওয়ার সময় দিতে হবে। বাকি নাইট্রোজেন ঘটিত সার সমান দুভাগে ভাগ করে ৩০ দিন অন্তর চাপান সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে।
(Green chilli farming) অর্থকরী ফসল মরিচের উন্নত প্রজাতির চাষ ও বীজ বপন পদ্ধতি
জলসেচ (Irrigation) -
ফসলের বৃদ্ধি ও ভালো ফলনের জন্য সঠিক সময়ে সেচ আবশ্যক। লংকা মাটিতে অধিক রস বা জমা জল সহ্য করতে পারে না। ঘন ঘন অধিক সেচ গাছকে দুর্বল করে দেয় ও ফুল ঝরে যায়। গ্রীষ্মকালে ৪-৫ দিন এবং শীতকালে ১০-১২ দিন অন্তর সেচের প্রয়োজন হয়। গাছে ফুল আসার, ফল ধরার ও ফসল তোলার পর সেচ আবশ্যিক।
মাধ্যমিক পরিচর্যা ও আগাছাদমন (Weed management) -
প্রতি সেচের পর হালকা করে মাটি কুপিয়ে দিলে আগাছা দমনের সাথে সাথে মাটির রস ও সংরক্ষিত হয়। তিন থেকে চারটি নিড়ানি আগাছা দমনের পক্ষে যথেষ্ট। চারা রোপনের ৩০দিন পর গোড়ায় মাটি তুলে দিয়ে প্রথম চাপান সার দেওয়া হয়।
ফসল তোলা ও ফলন -
৬০-৭০দিন বয়সের গাছ থেকে সাধারণত কাঁচা লংকা তোলা হয়ে থাকে। ফল পাকতে শুরু করলে এক থেকে দু'সপ্তাহ পর পর পাকা লংকা তোলা হয়। হেক্টর প্রতি কাঁচা লংকার গড় ফলন সাধারণ জাতের ক্ষেত্রে ৭-১০ টন এবং হাইব্রিডের ক্ষেত্রে ১২-১৫ টন।
ড. শুভ্রমাল্য দত্ত (বরিষ্ঠ গবেষক, সবজি বিজ্ঞান বিভাগ, উদ্যানবিদ্যা অনুষদ, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়)
Image source - Google
Related Link - (Kharif onion crop care) বর্ষাকালীন পেঁয়াজের পরিচর্যা ও শস্য সুরক্ষা
Share your comments