চিরাচরিত ও গতানুগতিক চাষ পদ্ধতির বাইরে বেরিয়েও কৃষক বন্ধুরা নতুন, বিকল্প চাষের সন্ধানে লেগে পড়েছেন এবং তার চাষ পদ্ধতি নিয়েও তাদের মধ্যে উৎসাহের কোনো খামতি নেই। প্রথাগত ফসল চাষের পাশাপাশি এখন অনেক কৃষকবন্ধুই ক্যাকটেসি পরিবারের অন্তর্গত ড্রাগন ফলের চাষ করে অতিরিক্ত টাকা রোজগার করছেন। ড্রাগন ফলের চাষপদ্ধতি ইতিমধ্যেই আমরা বর্ণনা করেছি। চলুন দেখে নেওয়া যাক এই উদ্ভিদে সার প্রয়োগ, সেচ ব্যবস্থা এবং রগ-পোকা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে।
ড্রাগন ফ্রুটে সারপ্রয়োগ (Fertilizer application) -
প্রথম বছর ৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া ও সুপার ফসফেট, তিনবার প্রতি স্তম্ভে প্রয়োগ করতে হবে। দ্বিতীয় বছর থেকে ৫০০ গ্রাম করে ইউরিয়া, ফসফেট এবং পটাশ সার + ২০ কেজি জৈব সার, তিনবার প্রতি বছর প্রতি স্তম্ভে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে স্প্রে-এর মাধ্যমে অনুখাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। ফসল তোলার ১০ দিন আগে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।
সেচ পদ্ধতি (Irrigation system) -
ড্রাগন ফল খরা ও জলাবর্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই গরমের দিনেই ১০-১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। এছাড়া ফলন্ত গাছে ৩ বার অর্থাৎ ফুল ফোটা অবস্থায় একবার, ফল মটর দানা অবস্থায় একবার এবং ১৫ দিন পর আরেকবার সেচ দিতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা -
আগাছা অপসারণ করে নিয়মিত সেচ প্রদান এবং প্রয়োজনে চারপাশে বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গাছ লতানো এবং ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হওয়ায় সাপোর্টের জন্য ৪ টি চারার মাঝে ১টি সিমেন্টের ৪ মিটার লম্বা খুঁটি পুততে হবে। চারা বড় হলে খড়ের বা নারিকেলের রশি দিয়ে বেধে দিতে হবে যাতে কাণ্ড বের হলে খুঁটি আঁকড়ে গাছ সহজেই বাড়তে পারে।
ড্রাগন ফল সংগ্রহ ও ফলন -
ড্রাগন ফলের কাটিং থেকে চারা রোপনের পর ১ থেকে ১.৫ বছর বয়সের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল যখন সবুজ থেকে সম্পূর্ণ লাল রঙ ধারণ করে তখন সংগ্রহ করতে হবে। গাছে ফুল ফোঁটার ৩৫-৪০ দিনের মধ্যেই ফল চয়নযোগ্য হয়ে যায়। সম্পূর্ণ পূর্ণতা প্রাপ্ত বাগান থেকে হেক্টর প্রতি ২০-৩০ টন ফল পাওয়া যায়।
রোগ ও পোকা নিয়ন্ত্রণ (Diseases and pest management) -
- কান্ড ও ফল পচা-
কপার অক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম প্রতি লিটার অথবা ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি ৪ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
- অ্যান্থ্রাকনোস-
কার্বেন্ডাজিম ও ম্যানকোজেবের মিশ্রণ ২ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
- ফ্রুট ফ্লাই-
হেক্টর প্রতি ২০-২২ টি ফেরোমন ট্র্যাপ লাগালে উপকার পাওয়া যাবে।
- মিলিবাগ-
১০০০০ পি.পি.এম. নিম তেল ৪ মিলি প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
নিবন্ধ - ডঃ শুভ্রমাল্য দত্ত, বরিষ্ঠ গবেষক, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং
সামিমা সুলতানা, বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ (উদ্যানপালন), কোচবিহার কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র
Image source - Google
Related link - (Ekangi - Kaempheria galanga L.) একাঙ্গী সংরক্ষণ ও রোগ – পোকা নিয়ন্ত্রণ
Share your comments