২০১৫-১৬ সাল থেকে ৩২৯.৭০ মিলিয়ন কিলোগ্রাম চা উত্পাদন (Tea Farming) করে চা উৎপাদনকারী রাজ্যের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, যা জাতীয় উত্পাদনের প্রায় ২৬%। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আসাম – এই জেলাগুলি এই রাজ্যের প্রধান চা উত্পাদক অঞ্চল।
আজ আমরা এই প্রবন্ধে চা চাষে রোগ প্রতিকার পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাদের তথ্য দিতে চলেছি। চলুন জেনে নেওয়া যাক, চা চাষে কোন কোন রোগ দেখা যায় এবং তা প্রতিকার কীভাবে করবেন।
চা গাছের রোগ ও প্রতিকার (Disease Management) -
কান্ডের রোগ :
(ক) ডাই ব্যাক (Die back)
রোগের কারণ ছত্রাক : নেকট্রিয়া প্রজাতি (Nectria sp)।
লক্ষণ : গাছের শাখাগুলো আগার দিক থেকে শুকিয়ে যায় (Die back)। দূর্বল ও অসুস্থ গাছে এই রোগের প্রকোপ বেশি হয়। এই ছত্রাক আক্রমণ করলে কান্ডের মধ্যে ফাটল বা গহ্বর তৈরী হয়।
বিস্তার : গাছে কোন ক্ষত সৃষ্টি হলে সেখান দিয়ে এই ছত্রাক প্রবেশ করে। বাতাস বাহিত স্পোর রোগের বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা নেয়।
প্রতিকার :
যতটা ডাই ব্যক তার চেয়ে ১৫ ইঞ্চি বেশি কেটে ফেলা উচিত। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কাটতে হবে। গাছ কাটার পর ০.৫% কপার অক্সিক্লোরাইড ৪-৫ গ্রাম দিয়ে পেইন্ট করা উচিত। চা গাছ ছাঁটার আগে ছায়া গাছের নেট্রিয়া আক্রান্ত ডাল কেটে ফেলতে হবে।
(খ) শাখার ক্যাঙ্কার (Branch canker)
রোগের কারণ ছত্রাক : পোরিয়া হাইপোব্রুনিয়া (Poria hypobrunea)
লক্ষণ : এই ছত্রাক গাছের ক্ষতস্থান দিয়ে উপরের দিকে আক্রমণ করে। পরে তলার দিকে নামতে থাকে। শিকড়েও আক্রমণ করে। আক্রান্ত শাখা গুলোকে ক্রমশ মেরে ফেলে। শিকড়ে আক্রমণ করলে পুরো গাছের মৃত্যু হয়। কান্ডের কাঠ হলুদ ও নরম হয়ে পচে যায় এবং কাঠের মধ্যে সরু সরু বদামী দাগ দেখা যায়। গাছের গোড়ার ছালের উপর শক্ত চটা তৈরী হয়।
বিস্তার : বাতাস বাহিত স্পোর ক্ষতস্থান দিয়ে প্রবেশ করে গাছকে আক্রমণ করে। পরে এই সমস্ত গাছে উই পোকার আক্রমণ দেখা যায়।
প্রতিকার :
আক্রান্ত কান্ডের মৃত কাঠ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নষ্ট করে ফেলতে হবে। চারা অবস্থায় যাতে গাছ রোদে না জ্বলে যায় তাই ছায়া গাছের সাহায্যে ছায়া দিতে হবে। গাছের কাটা ডাল বিটুমেন পেইন্ট করে দিতে হবে যাতে রোগ জীবানুর আক্রমণ কম হয়। উইপোকার জন্য ক্লোরোপাইরিফস ২ মিলি/ লি জলে ড্রেন্চিং করে দিন।
(গ) সুতো ধ্বসা রোগ (Thread blight)
রোগের কারণ ছত্রাক : পরজীবি এবং উপপরজীবী দু রকম ছত্রাকের দ্বারা এই রোগ হয়। পরজীবী ছত্রাককে এখনও জানা না গেলেও উপপরজীবী থাকে ম্যারাসমিয়াস পালচার (Marasmius pulcher)
লক্ষণ : কান্ডের উপর গোছা গোছা সাদা সুতোর মতো ছত্রাক সুতো দেখা যায়। এগুলো গাছের তলার দিক থেকে ক্রমশ গাছের উপরের দিকে এমনকি পাতার তলার পিঠেও ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে ঝুলতে থাকে।
বিস্তার : সাদা ছত্রাক সুতোর সাহায্যে রোগ ছড়ায়।
প্রতিকার :
পরিচ্ছন্ন পদ্ধতিতে চাষ করতে হবে। ছায়া গাছ বা চা গাছের ঘনত্ব বেড়ে গেলে গাছের ডাল কেটে বা গাছ কেটে হালকা করে দিতে হবে।
এপ্রিল-মে মাসে কপার ছত্রাক নাশক (০.৫%) ২ সপ্তাহের ব্যবধানে স্প্রে করতে হবে।
(ঘ) গোলাপী রোগ (Pink disease)
রোগের কারণ ছত্রাক : পেলিকুলারিয়া সালমোনিকোলার ( Pellicularia salmonicolor)
পশ্চিমবঙ্গে ও আসামে এই রোগ বিশেষ দেখা যায় না ।
লক্ষণ : চকচকে সাদা ছত্রাক সুতারস্তর কান্ডের গায়ে দেখা যায়। গাছের যে দিকে ছায়া পড়ে, সেইদিকে রোগের আক্রম/ন বেশী হয়।
আরও পড়ুন - Orchid Farming: আধুনিক পদ্ধতিতে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে অর্কিডের চাষ
প্রতিকার :
আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কপার ছত্রাক নাশক (ব্লাইটক্স বা ফাইটোলান) স্প্রে করা এবং ছায়াগাছ গুলি আক্রান্ত হলে পুড়িয়ে ফেলা জরুরী। চা গাছ ছোট থাকতেই ছায়া গাছগুলিতে কপার ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
আরও পড়ুন - Kiwi Farming - বিদেশী ফল কিউয়ি চাষ করে উপার্জন করুন অতিরিক্ত অর্থ
Share your comments