গ্ল্যাডিওলাস একটি খুবই জনপ্রিয় ফুল | এই ফুলের আকর্ষণীয় গঠন বেশ জনপ্রয়ি এবং দীর্ঘ সময় সজীব থাকার জন্য সকলের কাছে এই ফুলটি বেশ জনপ্রিয় | প্রধানত ল্যটিন ভাষায় ‘গ্লাডিওলাস’ মানে তালোয়ার। এই ফুলের পাতার চেহারা অনেকটা তলোয়ারের মত | সুন্দর পুস্পদন্ড ও আকর্ষণীয় রঙিন ফুল, প্রায় সকলেরই নজর কাড়ে | গ্ল্যাডিওলাস ফুলের বাজার চাহিদা আকাশছোঁয়া হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ বেশ লাভজনক | বাড়ির ছাদবাগানে গ্ল্যাডিওলাস ফুলের চাষ (Gladiolus flower farming) খুব সহজেই করা যায় |
আবহাওয়া (Climate):
এই ফুলের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য আর্দ্র ও ঠান্ডা আবহাওয়া দরকার। ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গাছ ভালোভাবে বাড়ে। কিন্তু, চাষের জন্য পূর্ণ সূর্যোলোক দরকার। কারণ ছায়ায় এ ফুল ভালো হয় না। করম রোপণ এবং স্পাইক বের হওয়ার আগে মাটিতে আর্দ্রতার ঘাটতি হলে ফলন হ্রাস পায়। গ্ল্যাডিওলাস প্রতিদিন ৮-১০ ঘন্টা আলো পছন্দ করে | তাই, রৌদ্রজ্জ্বল জায়গা এবং ঝড়ো বাতাস প্রতিরোধের ব্যবস্থা আছে এমন জায়গা এই ফুল চাষের জন্য উত্তম |
মাটি (Soil):
সাধারণত, যে কোন ধরনের উর্বর মাটিতেই গ্ল্যাডিওলাস চাষ করা যায় | তবে, সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ ও বেঁলে দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য উপযোগী। মাটির পি এইচ মান ৬-৭ এর মধ্যে থাকা উচিত। অধিক কাদাযুক্ত এবং কালো মাটির জমিতে চাষ না করাই ভাল। হালকা মাটির ক্ষেত্রে জৈবসার মিশিয়ে মাটির গুণাগুন ভাল করতে হবে। একই জমিতে বারবার গ্ল্যাডিওলাস চাষ করলে মাটি বাহিত রোগের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ফসলও চাষ করতে হবে।
টবে গ্ল্যাডিওলাস চাষের সঠিক সময়:
সারাবছর গ্ল্যাডিওলাস চাষ করা যায়। তবে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস হল এই বীজ বা গুঁড়িকন্দ বসানোর সেরা সময় |
রোপণ:
সম্পূর্ণ রোগমুক্ত বড় (৩০+/-০.৫গ্রাম) মাঝারি (২০+/-০.৫ গ্রাম) ওজনের ৩.৫-৪.৫ সেমি ব্যাসযুক্ত কর্ম ৬-৯ সেমি গভীরতার রোপণ করতে হবে। এগুলি অবশ্যই সুপ্তাবস্থা মুক্ত হতে হবে | সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি হবে। তবে বাণিজ্যক উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১৫*২০ সেমি দূরত্বে রোপণ করা যেতে পারে।
টবের মাটি তৈরী:-
টবে গ্ল্যাডিওলাস চাষের জন্য প্রথমেই পরিমানমতো দো-আঁশ বা বেলে মাটি এর সাথে গোবর, পাতাসার মিশিয়ে সারমাটি তৈরী করতে হবে | যার মধ্যে বীজ বপন করতে হবে |মাটি সবসময় ঝুরঝুরে থাকতে হবে। রপর গেঁড় বসানোর ৪ সপ্তাহ পর থেকে ২১ দিন অন্তর নির্দিষ্ট পরিমান জল নিয়ে তাতে কিছুটা ভি.এ.পি,কিছুটা ম্যাগেশিয়াম সালফেট,কিছুটা মিউরিয়েট অফ পটাশ দিতে হবে। তাতে ফুলের বৃদ্ধি হবে তাড়াতাড়ি। টবের মাটি ভাল থাকবে। তবে এঁটেলমাটির ক্ষেত্রে সার কম লাগবে।এছাড়াও আপনি চারাও বসাতে পারেন।
গাছের পরিচর্যা:
টবের মাটি আগাছামুক্ত রাখতে হবে | কঞ্চি বা শক্ত লাঠি দিয়ে গাছগুলিকে ঠেকনা দিয়ে রাখতে হবে | এরপর সার হিসাবে চাপান বা তরল সার দিতে হবে | গ্ল্যাডিওলাস গাছে জল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গোড়ায় জল না জমে। নিয়ম করে মাটি খুঁচিয়ে দিতে হবে। আড়াই থেকে তিন বছর অন্তর ঝাড় তুলে মোটা বা বড় গুঁড়িকন্দগুলো আবার সারমাটি দিয়ে লাগানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে মঞ্জুরী দন্ডের শেষ জোড়া কুঁড়ি ফুটে গেলে দন্ডের গোড়া থেকে কেটে দেওয়াই ভাল।
আরও পড়ুন - জানুন ব্রাসেল স্প্রাউট বা মিনি বাঁধাকপির চাষাবাদের নিয়ম
রোগ ও প্রতিকার (Disease Management Sytstem):
গ্ল্যাডিওলাস গাছ ফিউজোরিয়াম রট, বট্রাইটিস রট সহ আরো কয়েকটি রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়াও জাবপোকা, শোষক পোকা,ইউপোকা আক্রমণ করতে পারে। গাছের গোড়ার মাটিতে নির্দিষ্ট জলে কুপ্রাভিট অথবা ব্যাভিস্টিন মিশিয়ে দিতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছে ১৫-১৮ দিন পরপর ৩ বার এই মিশ্রণ প্রয়োগ করতে হবে। গাছে ছত্রাক আক্রান্ত হলে, ফুলের বোটা নরম হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রতিমাসে একবার নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করলে ভাল হয়।
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - জেনে নিন এপ্রিকট বা খুবানি ফল চাষের বিবরণ
Share your comments