রুবীয়াসি পরিবারের এই ফলের উৎপত্তিস্থল ধরা হয় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া তথা ভারতবর্ষকে। ভারতবর্ষের উপকূলবর্তী রাজ্যগুলি যেমন আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, কর্ণাটক, কেরালা ও তামিনাড়ুতে এর বিস্তারের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। ভারতবর্ষ উৎপত্তিস্থল হওয়াতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ গুলিতে এর স্বাভাবিক বিস্তার লক্ষণীয়, পাশাপাশি এই গাছ দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ও দেখতে পাওয়া যায়।
ঔষধি ও পুষ্টিগুণ (Nutritional value) :
বিজ্ঞানীদের মতে প্রায় ১৫০ টিরও বেশি ঔষধি উপাদান রয়েছে এই ফলে। ভিটামিন এ, সি, ই, বি- ২, বি- ৬, বি- ১২, ক্যালসিয়াম, আয়রন, নিয়াসিন, ফোলিক অ্যাসিড, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, মলিবদেনাম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, অন্টাকনিক অ্যাসিড, উপক্ষার, তেরপিনয়েডস, অন্থ্রা কুইনন, বি-সিটসটেরোল, ক্যারোটিন, লিনোলেইক অ্যাসিড, অ্যালিজারিন ও অ্যামিনো অ্যাসিডের মত মানব দেহের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিপূর্ণ এই ফল। তবে ঔষধি গুনের পাশাপাশি এর পুষ্টি গুণও নেহাত কম নয়। প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে বিভিন্ন প্রকার প্রোটিন ( অ্যামিনো অ্যাসিড, গ্লুটামিক অ্যাসিড, অ্যাসপারটিক অ্যাসিড ও আইসলিয়াসিন ) থাকে প্রায় ১১.৩%, মিনারেল থাকে প্রায় ৮.৪%, এছাড়াও ভিটামিন সি থাকে ৫০-১৫৫ মি গ্রা।
জলবায়ু ও মৃত্তিকা (Climate) :
এটি প্রধানত গ্রীষ্মমণ্ডল এলাকায় ব্যাপক ভাবে জন্মায়। তবে এটি বিভিন্ন প্রকার জলবায়ু ও মৃত্তিকার সাথে সহনশীল। ২০-৩৫ ডিগ্রী সেলসয়াস তাপমাত্রা এবং ২৫০-৪০০০ মিলি বাৎসরিক বৃষ্টিপাত পছন্দ করে। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৩০০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত এর বিস্তার দেখা যায়। তবে এটি মিশ্র চাষের জন্যে খুবই উপযোগী।
বেলে, দোয়াশ, অ্যাসিডিক, অনুর্বর এমন কি বর্ষাকালে জল জমে এমন মাটিতেও খুব সহজেই জন্মাতে পারে, তবে ভালো জলনিকাসি ব্যাবস্থা যুক্ত মাটিই এর জন্যে উপযুক্ত।
বংশবিস্তার:
বীজ দ্বারা এটি খুব সহজেই জন্মায়। এছাড়া এটি কান্ড ও মূলের কাটিং এবং গুটিকলমের মাধ্যমেও বংশবিস্তার সম্ভব।
চারা তৈরি ও প্রতিস্থাপন -
চারা প্রস্তুত করার জন্য বীজ খুব ভালো ভাবে পাকা ফল থেকেই সংগ্রহ করা উচিত। তবে এই বীজের বাইরে একটি শক্ত আবরণ থাকে। যদিও বীজ থেকে চারা উৎপাদনের ক্ষমতা ৯০ এরও বেশী, তবে শক্ত আবরণের জন্যে চারা জন্মাতে প্রায় ৬-১২ মাস সময় লাগে। তাই বীজ লাগানোর আগে যেকোন ভাবে বাইরের শক্ত আবরণটি সরিয়ে ফেলতে হবে। এতে চারা জন্মানোর সময় প্রায় ২০-১২০ দিনে কমে আসবে। যদি শক্ত আবরণহীন বীজ ভাল সূর্যালোক(৩৮ ডিগ্রী সেলসয়াস) ও জল পায় তবে ২০-৩০ দিনেই বেশীর ভাগ চারা জন্মানো সম্ভব। চারা জন্মানোর জন্যে বাগানের মাটি, বলি ও জৈব সার মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিৎ। চারা তৈরির ২ মাস পর থেকে ১২ মাস পর্যন্ত এই গাছ মূল জমিতে রোপণ করা সম্ভব। প্রতিস্থাপনের জন্য গাছটি প্রথম বছরে বৃদ্ধি কিছুটা ব্যাহত হয় যদিও একবার মূল মাটিতে ছড়িয়ে গেলে দ্বিতীয় বছর থেকে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
জলসেচ:
এটি মূলত মাঝারি মাপের বৃষ্টি পছন্দ করে। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক গাছ কম বৃষ্টিপাত ও খরা সহ্য করতে পারে। চারা গাছ এবং শুষ্ক সময়ে জলের ব্যাবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়।
পরিচর্যা:
এই গাছের তেমন কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না তবে বর্ষার কিছু আগে জৈব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। মূলত এটি শীতকালের তুলনায় গরমকালে বেশি ফল দেয় তবে সারা বছরই এতে নতুন পাতা ও ফল দেখতে পাওয়া যায়।
রোগ পোকার আক্রমণ ও উপশম:
এই গাছ বিভিন্ন রকমের পোকা যেমন জাব পোকা, আশ পোকা, চুষি পোকা, পাতা ছিদ্রকারী পোকা, উইভিল, সাদা মাছি, মাকড় ইত্যাদি দ্বারা আক্রান্ত হয়। অতিরিক্ত সার প্রয়োগে গাছের রসালো অংশ বৃদ্ধি পেলে জাব পোকা, আশ পোকা, সাদা মাছি ও কৃমির আক্রমণ বাড়ে তাই সার প্রয়োগের সময় বিশেষ যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। মাত্রাতিরিক্ত পোকার আক্রমণ হলে পেস্টিসাইড ব্যাবহার করা যেতে পারে।
প্রচুর বৃষ্টি ও বন্যা প্রবন অঞ্চল বা গাছের গোড়ায় দীর্ঘ দিন জল জমে থাকলে ছোট গাছের ক্ষেত্রে গোড়া পঁচা ও ধসে যাওয়ার মত সমস্যা এবং বড় গাছের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক জনিত রোগ লিপ স্পট, ব্লাইট ইত্যাদি হতে পারে। এই সমস্ত রোগের প্রাদূর্ভাব ঘটলে ট্রাইকোডারমা ভিরিডি ( ২ কিলো গ্রাম/ হেক্টর) বা সিউডোমনাস ফ্লুরেসেন্স (২ কিলো গ্রাম/ হেক্টর) প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন - দেশের মধু উৎপাদনে বিপুল বৃদ্ধি ঘটানো ও পরাগমিলনে উন্নতি ঘটিয়ে শস্য উৎপাদনে বিপুল অগ্রগতি
ফলন:
যখন ফল পেকে সাদা হতে শুরু করবে এবং বিশেষ গন্ধযুক্ত হবে তখন সংগ্রহ করা উচিত। যদিও এই গাছ ৩ বছর বয়স থেকে ফল দেওয়া শুরু করে তবে ৫ বছরের ঊর্ধের গাছ ভাল ও প্রতি বছর ফল দেয়। প্রতি হেক্টর জমিতে প্রতি বছর ৮০,০০০ কিলো গ্রামের বেশি ফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - সার্টিফায়েড সীড কি? কীভাবে চিনবেন কৃষকবন্ধুরা সার্টিফায়েড সীড, রইল বিস্তারিত
Share your comments