তিল খুবই জনপ্রিয় এক তৈলবীজ | খাবারের তেল হিসাবে সর্ষের তেলের থেকেও তিলের তেল কিন্তু বেশ স্বাস্থ্য উপকারী | পশ্চিমবঙ্গে যে সমস্ত তৈল বীজের চাষ হয় তাদের মধ্যে সরিষা, তিল , বাদাম, সুর্যমূখী অন্যতম। এদের মধ্যে তিল সারা বছর সব ধরনের মাটিতে অতি সহজে চাষ করা যায়। তিল থেকে তৈরি নাড়ু, খাজা ও নানান মুখরোচক খাবারও যথেষ্ট জনপ্রিয়। পাশাপাশি প্রসাধনী শিল্পে তিল তেল ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে তিলের কদর বাড়ছে দিন দিন।
তাই তিল চাষে (Sesame farming) কৃষকদের আগ্রহও বাড়ছে সমানতালে । এতে একদিকে যেমন বাড়তি আয় হয় তেমনই ফসলের আচ্ছাদনে মাটির রস ও জৈব কার্বন সংরক্ষিত থাকায় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকে।
জাত:
তিলের কিছু উন্নত বীজগুলির মধ্যে অন্যতম হলো তিলোত্তমা—৭০-৭৫ দিনের, তেলের পরিমাণ ৪০%, কালচে বাদামি। রমা— ৮৫-৯০ দিনের, তেলের পরিমাণ ৪৫%, বাদামি রঙের বীজ। কৃষ্ণা— ৭৫-৮৫ দিনের, তেলের পরিমাণ ৪২%, কালচে বীজ |
মাটি(Soil):
সাধারণত, এ রাজ্যের প্রায় সব ধরণের মাটিতেই তিল চাষ করা যায় | তবে, ভারী মাটি বাদ দিলে, জল নিকাশের সুবিধাযুক্ত জমিতে তিল চাষ ভালো হয় | বেলে-দোঁয়াশ ও পলি-দোঁয়াশ মাটি তিল চাষের জন্য উত্তম |
আরও পড়ুন - White Gourd Farming: জেনে নিন বাড়ির ছাদে চালকুমড়ার সহজ চাষ পদ্ধতি
জমি তৈরি :
সাধারণত পলি দোঁয়াশ বা বেলে মাটিতে সাদা তিল চাষ হয়। ৩-৪ বার চাষ দিয়ে মাটি আগাছা মুক্ত ও ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। এরপর সুসম সার ও রাসায়নিক সার দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। আলু চাষের পর তিল বুনলে কোন রাসায়নিক সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না।
চাষের সময়:
বীজ বোনার উপযুক্ত সময় হলো ফাল্গুন মাস | চৈত্রের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে বোনা শেষ করলে ভাল হয়। কারণ দেরিতে বীজ বুনলে ফলন কমে যায়।
বীজের পরিমান(Seeds):
ছিটিয়ে বুনলে একর প্রতি ৩ কেজি আর লাইনে বুনলে ২.৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয় । বীজ বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের জন্য ২ গ্রাম কারবেন্ডাজিম ৫০% বা ৩ গ্রাম ম্যানকোজেব ৭৫% বা ৩ গ্রাম থাইরাম ৭৫% জাতীয় ছত্রাকনাশক মিশিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
রোপণ পদ্ধতি(Planting method):
সারিতে বুনলে দুই সারির মধ্যে দূরত্ব থাকবে ১০-১২ ইঞ্চি এবং বীজ থেকে বীজ ৪ ইঞ্চি। ছিটিয়ে বুনলে মই দিয়ে বীজকে ভাল ভাবে মাটি চাপা দিতে হবে যাতে তিল বীজের অঙ্কুরোদগম ভাল হয়। দেখতে হবে, নিড়ান দেওয়ার পর প্রতি বর্গমিটারে গড়ে যেন ৪০-৪৫টি গাছ থাকে।
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
মাটির উর্বরতা স্বাভাবিক থাকলে তিল চাষে এইভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে; মূল সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে এন.পি.কে ১০:২৬:২৬ – ৪৬ কেজি বা (শেষ চাষের আগে) এস.এস.পি ৭৫ কেজি + এম.ও.পি ২০ কেজি + ইউরিয়া ২৬ কেজি একর প্রতি। চাপান সার হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে একর প্রতি ২৬ কেজি ইউরিয়া ফুলের কুঁড়ি আসার আগে (বোনার ২৮-৩০ দিনে)।
অসেচ সেবিত জমিতে ইউরিয়া চাপান না দিলেও চলে। একর প্রতি ২.৫ কেজি বোরন (১৪.৬%) অনুখাদ্য প্রয়োগে বাড়তি সুফল পাওয়া যায়। ৩০ দিনের মাথায় ১% হারে ১৮:১৮:১৮ স্প্রে করলে করলে ফলনের বৃদ্ধি ঘটে |
সেচ:
তিল সাধারণত কম জলে চাষের ফসল। একটি সেচের সংস্থান থাকলে ৩০ দিনের মাথায় এবং ২টি সেচের সুযোগ থাকলে দ্বিতীয়টি ৫০-৫৫ দিনের মাথায় দানা বাঁধার সময় দিতে হবে।
রোগ ও প্রতিকার(Disease Management system):
গোড়া পচা, ডাঁটা পচা ও সাদা গুঁড়ো রোগ আক্রান্ত ফসলে কারবেন্ডাজিম ৫০% ১ গ্রাম বা ম্যানকোজেব ৭৫% ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ফাইলোডি আক্রান্ত গাছের উপরভাগ চ্যাপ্টা হয়ে যায়, ফুলগুলো পাতার মতো হয়। ফুল-ফল হয় না। এটা শ্যামা পোকা বাহিত মাইকোপ্লাজমা ঘটিত রোগ। এই রোগ ও পাতা মোড়া রোগ দমনে প্রথমে আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে দিতে হবে। পরে জমিতে বাহক পোকা দমনের জন্য ডাইমিথোরেট ২ মিলি/লিটার জলে স্প্রে করতে হবে। বিছা পোকা, লেদা ও ফলছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে ৩৩% গাছ আক্রান্ত হলে তবেই অ্যাসিফেট ৭৫% (০.৭৫ গ্রাম) বা প্রফেনোফস ৫০%(১.৫ মিলি) প্রতি লিটার জলে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
গাছের মাঝামাঝি অংশের শুঁটি ভেঙে দানা পুষ্ট হয়েছে দেখলে ফসল কেটে কয়েকদিন ঝাড়াই মাড়াই করে ও শুকিয়ে রাখতে হবে। ভাল পরিচর্যা করলে একর প্রতি ৪.৫–৫.৫ কুইন্টাল ফলন মিলতে পারে |
আরও পড়ুন - Breeding process of Koi Fish: জেনে নিন কৈ মাছের কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি
Share your comments