সাধারণত, আমাদের দেশেই অনেকে নিরামিষ খাবার খান | তারা এই ডাল জাতীয় শস্যের ওপর বেশি নির্ভরশীল | আর এই বিউলির ডাল বা উড়াদ ডাল প্রচুর পরিমান প্রোটিনের আধার | এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো "Vigna Mungo " | দক্ষিণ ভারতীয় বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার যেমন ইডলি, ধোসা তৈরিতে এর ব্যবহার অপরিসীম | তাই, এই বিউলির ডালের বাজার চাহিদাও প্রচুর বেশি | কৃষকরা এই চাষ করে ভালো অর্থ উপার্জনেও সক্ষম | এই ডালের চাষ মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশে ব্যাপকভাবে চাষ হয় | তবেদেখে নিন এই বিউলির ডাল চাষের সম্পূর্ণ পদ্ধতি;
জলবায়ু(Climate):
সাধারণত এই ডালের চাষ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার জন্য বিশেষ উপযোগী | বেশিরভাগ কৃষকবন্ধুরা এই ডালের চাষ গ্রীষ্মকালে বা বর্ষাকালে চাষ করে থাকেন | ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এই চাষের জন্য উত্তম | বার্ষিক ৬০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত প্রয়োজন এই ডাল চাষের জন্য | তবে, অতি ভারী বৃষ্টি ফুলের পক্ষে ক্ষতিকর | সমুদ্র স্তর থেকে ১৮০০ মিটার উঁচুতে বিউলির ডাল চাষ সফলভাবে করা হয়।
মাটি(Soil):
বিউলির ডাল বা উড়াদ ডাল চাষের জন্য বেলে দোআঁশ, দোআঁশ বা ভারী কাদামাটির দোআঁশ মাটি প্রয়োজন। লবনাক্ত, জলাবদ্ধ মাটি ও ক্ষারযুক্ত মাটিতে গাছ জন্মায়না | মাটির প্রাকৃতিক PH প্রয়োজন হয় এর উচ্চ ফলনের জন্য । মাটির অবশ্যই জল ধারণ ক্ষমতা ভালো হওয়া প্রয়োজন এবং উপযুক্ত সেচ ব্যবস্থাও রাখতে হবে |
জমি তৈরী:
এই ডাল চাষের জন্য সঠিকভাবে জমি তৈরী খুবই গুরুত্বপূর্ণ | নির্বাচিত জমিতে খারিফ মৌসুমে ১ ২ টি চাষাবাদ করার পর বিউলির ডালের বীজ বপণ করা যেতে পারে | জমিতে বীজ বপণের আগে অবশ্যই অতিরিক্ত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং নুড়ি-পাথর সরিয়ে ফেলতে হবে | বীজ ফেলার আগে জমিতে ৫ থেকে ৬ টন কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হবে | বীজ বপনের আগে যদি প্রয়োজন হয় তবে সেচও দিতে হবে জমিতে |
আরও পড়ুন - Floating Farming Technique: জলা জমিতে ধাপ পদ্ধতিতে চাষের উন্নত উপায়
বীজ শোধন:
বীজ কেনার আগে লক্ষ্য রাখতে হবে, বীজগুলি যেন সতেজ ও পরিষ্কার হয় | প্রথমে এক কেজি বীজের উপর আড়াই গ্রাম থাইরাম প্রয়োগ করে শোধন করতে হবে । এছাড়াও, এই নির্বাচিত বীজগুলিকে রাইবোজিয়াম এবং নাইট্রোজেন দিয়ে শোধন করে নিতে হবে |
রোপণ পদ্ধতি:
খরিফ মৌসুমে বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হ'ল 15 থেকে 30 জুন। গ্রীষ্মকালীন এই ফসল লাগানো যেতে পারে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে | বপণ করা বীজের গভীরতা হতে হবে ৫ থেকে ৬ সেন্টিমিটার | ভালো করে জমি তৈরী করে নিয়ে নিয়ে বীজ রোপণ করতে হবে |
সার প্রয়োগ(Fertilizer):
প্রথম সার প্রয়োগ করতে হবে বীজ বপণের ২৫ থেকে ৩৫ দিনের পরে এবং দ্বিতীয় সার ৪০ থেকে ৫০ দিন পরে প্রয়োগ করতে হবে | ৪৪ কেজি ইউরিয়া, ৬৭ কেজি এমওপি , ২৫০ কেজি এসএসপি বীজ বপণের শুরুতে মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে |
আগাছা দমন(Weed management):
বীজ বপনের ৪০ দিনের পরে ক্ষেত থেকে অতিরিক্ত আগাছা দূর করতে হবে। তবে, হাত ব্যবহার করে আগাসিয়াহ পরিষ্কার করলে ভালো । তবে, প্রয়োজনে রাসায়নিক সার ব্যবহার করা যেতে পারে | এক হেক্টর জমির জন্য এক কেজি বেসালিন ৮০০-১০০০ লিটার জলে মিশিয়ে জমিতে স্প্রে করতে হবে |
ফসল সংগ্রহ:
সঠিক ভাবে চাষে করলে এক হেক্টর জমি থেকে ৪৫০ কেজি ডাল পাওয়া যেতে পারে | বাজারে এই ডালের দামও ভালো, তাই ডাল বিক্রি করে ভালো লাভ পাওয়া যায় |
আরও পড়ুন - Agriculture pest management: ক্ষতিকর কীটনাশক নয়, জেনে নিন শাক-সবজির পোকা দূর করার সহজ উপায়
Share your comments