লংকা একটি গ্রীষ্মকালীন ফসল, যা পাকা ও শুকনো অবস্থায় ঝাল ও লাল রঙের জন্য এবং কাঁচা অবস্থায় গন্ধ ও ঝালের জন্য বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়। ভারত লংকা উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানিতে বিশ্বে বিশেষ স্থানাধিকারী। পশ্চিমবঙ্গের সব জেলাতেই কম বেশী লংকা চাষ করা হয়। কাঁচা ও পাকা লংকা আচার, সস ও পেস্ট তৈরীতে ব্যবহৃত হয়।
জলবায়ু: লংকা সাধারণত উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ু পছন্দ করে, যদিও ফল পাকার সময় শুষ্ক আবহাওয়াই আদর্শ। ৭৫-১০০ সেমি বার্ষিক বৃষ্টিপাত আদর্শ, যদিও বৃদ্ধির সময় অতিরিক্তি বৃষ্টিপাত পাতাঝরা এবং গাছ পচার মত বিপদ ডেকে আনে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০-৩০ ডিগ্রি সে: ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সে: হওয়া বাঞ্ছনীয়। গ্রীষ্মকালে অধিক তাপমাত্রায় ফুল-ফল ঝরে যায়।
রপ্তানিযোগ্য জাত:
কাশি আর্লি, সি.এইচ-১, সি.এইচ-৩, অর্ক মেঘনা, অর্ক শ্বেতা, অর্ক হরিতা, কাশি অনমল, পুসা সদাবাহার, পাঞ্জাব লাল, অর্ক লোহিত, আজাদ মির্চ-১, ভাগ্যলক্ষ্মী, ফুলে সূর্যমুখী, ভাস্কর।
আজ আমরা এই প্রবন্ধে লঙ্কা ফসলে রোগ পোকা সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি -
রোগ-পোকা ও তার নিয়ন্ত্রণ:
মুখ্য পোকা-মাকড়:
১) হলদে মাকড়:
ছোট ও পূর্ণাঙ্গ উভয় মাকড়ই পাতা থেকে রস চুষে খেয়ে নেয় ফলে পাতা নিচের দিকে মুড়ে যায় এবং উল্টানো নৌকার আকৃতি ধারণ করে।
প্রতিকার: বিউপ্রফেজিন ২৫ এস.সি. @ ১.২ মিলি/লি অথবা ক্লোরফেনপাইরি ১০ এস.সি @ ২ মিলি/লি অথবা ডায়াফেনথিউরোন ৫ ডব্লিউ.পি. @ ১.২ গ্রা/লি অথবা ডাইমিথোয়েট ৩০ ই.সি. @২ মিলি/লি ১০-১৫ দিন অন্তর পর্যায়ক্রমে পাতায় স্প্রে করতে হবে।
২) থ্রিপস বা চুষি পোকা:
পাতা ও গাছের কচি অংশ থেকে রস চুষে খেয়ে নেয়, আক্রান্ত পাতা ছোট হয়ে, কুঁকড়ে উপরের দিকে মুড়ে যায় এবং শেষমেষ ঝরে পড়ে।
প্রতিকার: ইমিডাক্লোপ্রিড ৭০ ডব্লিউ.এস @ ৫-১০ গ্রা/কেজি দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। মাঠে নীল আঠালো ফাঁদ পাততে হবে, সেক্ষত্রে একর প্রতি ৮০-১০০ টা ফাঁদ প্রয়োজন। এসিটামেপ্রিড ২০ এস.সি. @ ০.২ মিলি/লি অথবা কার্বফিউরন ৩জি @ ৩৩.৩ কেজি/হে অথবা ডাইমিথয়েট ৩০ ই.সি. @ ১.৫ মিলি/লি অথবা ইথিওন ৫ ই.সি.@ ৩-৪ মিলি/লি অথবা থায়োক্লোপ্রিড ২১.৭ এস.সি.@ ০.৬ মিলি/লি ১০-১৫ দিন অন্তর পর্যায়ক্রমে পাতায় স্প্রে করতে হবে।
৩) সাদামাছি:
ছোট ও পূর্ণাঙ্গ উভয় মাছিই গাছের রস খায় এবং গাছের বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। চরম পর্যায়ে গাছের পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে যায়। এরা লংকার পাতা কুঁকড়ে যাওয়ার ভাইরাসের বাহক হিসাবে কাজ করে।
প্রতিকার: ইমিডাক্লোপ্রিড ৭০ ডব্লিউ.এস @ ৩-৫ গ্রা/কেজি দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। মাঠে হলুদ আঠালো ফাঁদ পাততে হবে, সেক্ষত্রে একর প্রতি ৮০-১০০ টা ফাঁদ প্রয়োজন। চারাগাছকে বীজতলায় ৪০-৬০ মেসের মশারির আচ্ছাদনে লাগাতে হবে। নিমযুক্ত কীটনাশক যেমন সায়ানট্রানিলিপ্রল ১০ ও.ডি. @ ১.২ মিলি/লি অথবা ইমিডাক্লোপ্রিড ১৭.৮ এস.এল @ ০.৩৫ মিলি/লি অথবা কার্বোসালফান ২৫ ই.সি.@ ২ মিলি/লি ১০-১৫ দিন অন্তর পর্যায়ক্রমে পাতায় স্প্রে করতে হবে।
মুখ্য রোগ:
১) ফলপচা ও ডগা শুকনো:
কচি ডগা ও নরম পাতা কালো হয়ে শুকিয়ে যায়। পচন উপর থেকে নিচে নামে। ছালের উপর লম্বাটে কালচে দাগ পড়ে। পাকা ফলের উপর কালো দাগ হয়। ছত্রাক মূলত বীজবাহিত।
প্রতিকার: রোগমুক্ত ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। ০.২৫% কার্বেন্ডাজিম দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। টেবুকোনাজল ২৫% ডব্লিউ.জি @০.৫-০.৭৫ কেজি/হে অথবা কপার সালফেট ২.৬৭% এস.সি. ১.০ লি/হে স্প্রে করতে হবে।
২) চারা ঢলে পড়া:
কচি চারা মাটির ওপরে আসার আগে মারা যায়। আবার জন্মানো চারার মাটি সংলগ্ন গোড়ায় জলে ভেজা বাদামি দাগ দেখা যায় এবং চারার রং হালকা সবুজ হয়।
প্রতিকার: প্রতি কেজি বীজের সঙ্গে ৩ গ্রাম থাইরাম বা ৪ গ্রাম ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি মিশিয়ে শোধন করতে হবে। ফসলের অবশিষ্ট অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। শস্য চক্র অনুসরণ করতে হবে।
আরও পড়ুন - চাহিদা বাড়ছে লাভজনক গ্রীষ্মের ফুলকপি চাষে, রইলো চাষ পদ্ধতি ও জাতসমূহ
৩) পাতা কোঁকড়ানো:
গাছের পাতা কুঁকড়ে গাছ ছোট হয়ে যায়। গাছে ফুল ফল কম ধরে। সাদামাছি এই রোগের বাহক।
প্রতিকার: সাদামাছি দমন করলে এই রোগ থেকে কিছুটা প্রতিকার পাওয়া যায়। ইমিডাক্লোপ্রিড ৭০ ডব্লিউ.এস @ ৩-৫ গ্রা/কেজি দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। মাঠে হলুদ আঠালো ফাঁদ পাততে হবে, সেক্ষত্রে একর প্রতি ৮০-১০০ টা ফাঁদ প্রয়োজন। চারাগাছকে বীজতলায় ৪০-৬০ মেসের মশারির আচ্ছাদনে লাগাতে হবে। ভুট্টাকে সীমান্ত ফসল হিসাবে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন - আত্মনির্ভরতার স্থায়ী সমাধান, গোষ্ঠী নির্ভর উন্নয়নের মাধ্যমে
Share your comments