খারিফ মৌসুমের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল হলো আখ | চিনি, গুড় ইত্যাদি তৈরী করা হয় এই আখ থেকে | এটি সাধারণত একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল যা প্রায় জমিতে ১৩-১৪ মাস থাকে | উচ্চফলনশীল ও স্বল্পসময়ে চাষ করা যায় এমন ফসল চাষ করে বেশি আয় করা যায়। আখের সাথে সাথী ফসল হিসাবে ডাল জাতীয় শস্য, মসলা ও তৈলবীজ জাতীয় ফসল চাষ করা যায় |
আখের সাথে (Sugarcane Cultivation) সাথি ফসল হিসেবে আমরা ডাল জাতীয় ফসলের মধ্যে মটরশুঁটি, ছোলা, মশুর, মুগ ইত্যাদি। মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন ও তেল ফসলের মধ্যে তিল, তিসি, সরিষা, বাদাম ইত্যাদি চাষ করা যায় |
আখের সাথে সাথী ফসল হিসাবে ডাল চাষ (Companion Crop) :
আখের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আখের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে ডাল ফসল চাষ করা খুবই লাভজনক | আখের সাথে ডাল প্রথম এবং দ্বিতীয় সাথি ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। প্রথমবার সাথি ফসল হিসেবে চাষ করার জন্য কার্তিক মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত চাষ করা হয়। আবার দ্বিতীয়বার চাষের জন্য মার্চ/এপ্রিল মাসে অনায়াসে ডাল ফসল চাষ করা যায়। আখের দুই সারির মাঝে ডাল ফসলের বীজ সারি করে বুনে দিতে হয় |
মাটি (Soil):
সাধারণত, দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ ও এঁটেল দো-আঁশ মাটি আখ চাষের জন্য খুবই উপযোগী |
রোপণ:
আখ ফসলের ২ সারির মাঝ খানের মাটি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে ভালো করে আলগা করে নিতে হবে এবং আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। ডাল বীজ ৮-১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে নিতে হবে। ডাল বীজের গায়ের জল ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ডালবীজ নির্ধারিত দূরত্বে বুনে দিতে হবে।
পরিচর্যা:
সাধারণত, ডাল ফসলের বেশি পরিচর্যা করার প্রয়োজন হয় না। তবে আগাছা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে দিতে হবে। ডালের চারা গজানোর পর নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা রেখে বাড়তি ঘন চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। তবে ছোলার ডালপালা যেহেতু বেশি হয়, সেজন্য বীজ একটু পাতলা করে বোনা যেতে পারে |
রোগ ও প্রতিকার (Disease management system):
মসুর ও ছোলার সাধারণত জাব পোকা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। জাব পোকার আক্রমণ হলে কেরোসিন মেশানো ছাই ছিটিয়ে এ পোকা দমন করা যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কেবলমাত্র তখনই অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। তবে ডাল ফসলের ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হলে থিয়ন গ্রুপের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। আবার মুগ ডালে বিছা পোকার আক্রমণ হলে কেরোসিন মেশানো দড়ি ক্ষেতের ওপর দিয়ে টেনে দিলে আক্রমণের মাত্রা অনেকটাই কমে যায়।
আখের সঙ্গে মসলা ফসল চাষ:
আখ চাষ উপযোগী বেলে দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটিতে পেঁয়াজ ও রসুন চাষ ভালো হয়। যেসব মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে এবং রস ধারণ ক্ষমতা বেশি সেসব জমিতে পেঁয়াজ ও রসুন চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যেতে পারে। তবে জমিতে জল সেচ ও নিকাশের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
পরিচর্যা:
পেঁয়াজ ও রসুন লাগানোর পর আগাছা পরিষ্কার, উপরি সার প্রয়োগ, জল সেচ ও নিকাশ এবং রোগবালাই দেখা গেলে সময়মতো সঠিক নিয়মে দমনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আখ, পেঁয়াজ ও রসুন ক্ষেতের যত্ন-পরিচর্যার কাজ এক সঙ্গেই করা সম্ভব। জমিতে রসের অভাব হলেই জল সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে জল নিকাশের ব্যবস্থাও করতে হবে। জল সেচ দেওয়ার পর জমিতে ‘জো’ এলে বিশেষ করে পেঁয়াজ ও রসুন ক্ষেতে নিড়ানি দিয়ে মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে। সাথি ফসল হিসেবে পেঁয়াজ ও রসুন চাষে বাড়তি কোনো সারের প্রয়োজন হয়না। কারণ মূল ফসল আখে যে সারটা ব্যবহার করা হয় তাতেই এ ফসল দুইটির কাজে লাগে। পেঁয়াজ ফসলে থ্রিপস পোকার আক্রমণ হতে পারে। পোকা ও রোগের আক্রমণ হলেই অনুমোদিত কীটনাশক অথবা ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করে দমনের ব্যবস্থা করতে হবে।
মাটি তৈরী (Land preparation):
২ সারি আখের মাঝের খালি জায়গার মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় পরিমাণে গোবর সার এবং অন্যান্য রাসায়নিক সার মিশিয়ে ভালোভাবে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। আখের আগাম জাতের সাথে রসুন ও পেঁয়াজ কন্দ এবং মধ্য নাবি জাতের আখের সঙ্গে চারা পেঁয়াজ লাগানো যাবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১৫ থেকে ২০ সেমি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৮ থেকে ১০ সেমি. থাকতে হবে। ২ সারি আখের মধ্যে ৫ সারি পেঁয়াজ বা রসুন লাগানো যাবে। এছাড়া ধনিয়ার বীজও জমি তৈরির সময় শেষ চাষের আগে ছিটিয়ে বুনতে পারেন। আবার ২ সারির মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় সারি করেও ধনিয়ার বীজ বোনা যেতে পারে |
আরও পড়ুন - Pointed Gourd Farming: কিভাবে করবেন পটল চাষ? জেনে নিন দুর্দান্ত কৌশল
এছাড়া, আখের সঙ্গে তেল ফসল হিসেবে রাই, তিল, তিসি, সূর্যমুখী এগুলোর চাষ করা যেতে পারে | আখ লাগানোর আগে শেষ চাষের সময় পরিমাণ মতো বীজ বুনে দিতে পারেন। আবার আখের দুই সারির মাঝখানের ফাঁকা জায়গাতে সারি করেও বীজ বোনা যেতে পারে। এইভাবে চাষ করলে কৃষকদের আয় বাড়বে |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - Cardamom farming - এলাচ চাষ করে প্রতি বিঘায় আয় করুন ১০ লক্ষ টাকা
Share your comments