মঙ্গলবার ভোর-রাত থেকে শুরু হয়েছে রাজ্যের একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি | হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান-সহ একাধিক জেলায় হয়েছে ঝোড়ো হাওয়ার সাথে মুষলধারে বৃষ্টি | নিম্নচাপের এই বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মালদহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার জমির ফসল। চাঁচোল, মালতিপুর, গাজোল, পুরনো মালদহ-সহ একাধিক ব্লকে বিঘার পর বিঘা জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। হাওয়ার দাপটে নষ্ট হয়েছে প্রায় কয়েক'শো আমগাছ | চাষীদের আশঙ্কা নষ্ট হয়েছে প্রায় কয়েক কোটি টাকার ফসল |
একদিকে করোনা, অন্যদিকে লকডাউনের জেরে অসংখ্য খেটে খাওয়া চাষীরা কাজ হারিয়েছেন | এর মধ্যেও বহু কৃষক মহাজনের থেকে ঋণ নিয়ে অর্থকরী ফসল পাট চাষ করে লাভের আশা করেছিলেন | কিন্তু, শিলাবৃষ্টির দাপট এক লহমায় নিঃস্ব করে দিয়েছে চাষীদের | ধ্বংস হয়েছে পাট চাষ, এমনকি উপরে গেছে ধানও | বৃষ্টির কারণে ধানকাটা মেশিন নামানো যাবেনা জমিতে | তাই, যে সমস্ত জমিতে ধান কেটে রাখা হয়েছিল সেই ধানও ভিজে গেছে | কিভাবে বাঁচবে চাষীরা? চাষীদের মাথায় হাত |
একনজরে জেলাভিত্তিক আলু চাষে ক্ষতির পরিমান:
কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চ্যাটার্জি জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমানের মেমারি ১ ও ২, বর্ধমান সদর এবং কালনায় ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে। কৃষি দপ্তরের আশঙ্কা, পূর্ব বর্ধমান জেলাজুড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আলু ও সবজি চাষে | একাধিক ব্লকে শিলাবৃষ্টির ব্যাপক প্রভাবে আলু, সরষে, পিয়াজ ও আমের ফলনে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আলু চাষিরা। খেটে জল জমে রয়েছে। জল বার করে দিতে না পারলে আলুর আরও ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
একই অবস্থা আরামবাগে | আরামবাগ মহকুমা সহঅধিকর্তা সজল ঘোষ বলেন, ‘এই মরসুমে আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকে ৩০ হাজার হেক্টর আলু চাষ হয়েছিল। বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১৮ হাজার ৩৭২ হেক্টর জমির আলু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল থেকে বুধবার পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা সমস্যায় পড়েছেন। বিশেষ করে আলু চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
ঝড়–বৃষ্টিতে হাওড়াতেও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষত আমতা ও উদয়নারায়ণপুর ব্লকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
গ্রীষ্মকালীন সব্জি ও অন্যান্য ফসলের ক্ষতি:
মুগ চাষের বীজ ফেলার কাজ শুরু হয়েছিল। সেই বীজের বেশিরভাগ প্রায় জলের তলায় চলে গেছে। জল জমে থাকায় পচন ধরবে বীজে। অন্যদিকে খেসারির ডাল প্রায় পেকে এসেছিল। কিছুদিনের মধ্যে জমি থেকে তোলার কাজও শুরু হত। কিন্তু জল জমে থাকায় পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে। এছাড়া সূর্যমুখী, সর্ষেরও ক্ষতি হয়েছে। গ্রীষ্মের সবজি উচ্ছে, ঢেঁড়শের জমিতেও জল জমেছে । জল জমে থাকলে ক্ষতি হতে পারে এইসব ফসলেরও |
ফলনে ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা বীরভূমের চাষীদের | কৃষকদের মতে, এই বৃষ্টিভেজা খড় আর কোনো কাজেই লাগবেনা, প্রায় পচে গেছে | ভিজে যাওয়া ধানও ইতিমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে | ফসলের এই ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলেছে কৃষকদের | মহাজনদের ঋণের টাকা শোধ করবে নাকি পেটের ভাত জোগাবে? অসহায় কৃষকরা শুধুই এখন সাহায্যের আশায় প্রহর গুনছে |
নিবন্ধ:- রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - কৃষকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ করা হল ১,৫০০ কোটি টাকা
Share your comments