ঐতিহ্যের বোঝা নিজেদের কাঁধে নিয়ে আজও ছুটে চলেছে হাতে টানা রিকশা

আপনাকে যদি একফ্রেমে গোটা কলকাতার ছবি আঁকতে বলা হয়, তবে আমি নিশ্চিত, সেই ফ্রেমে ভিক্টোরিয়া,ট্রাম,বই পড়ার পাশাপাশি অবশ্যই থাকবে হাতে টানা কাঠের রিকশা।

Saikat Majumder
Saikat Majumder
ছবিঃ সংগৃহীত।

আপনাকে যদি একফ্রেমে গোটা কলকাতার ছবি আঁকতে বলা হয়, তবে আমি নিশ্চিত, সেই ফ্রেমে ভিক্টোরিয়া,ট্রাম,বই পড়ার পাশাপাশি অবশ্যই থাকবে হাতে টানা কাঠের রিকশা। ৩০০ বছরের পুরনো এই শহরে, বদলে গিয়েছে অনেক কিছু।বদলে গিয়েছে শাসন থেকে প্রশাসন।বদলে গিয়েছে ভালোবাসার রঙ। বদলে গিয়েছে কথা বলার ঢং।

গঙ্গার গা ঘেষে জন্ম নেওয়া এই শহর যেমন ১০০ বছর আগে বাঁচতে জানে। অদ্ভুদভাবে ১০০ বছর পেছনেও বাঁচতে জানে।আধুনিকতার ছোঁয়া এখনও বদলাতে পারেনি শহরের ঐতিহ্য। আর কি নিষ্ঠুরভাবে এই ঐতিহ্যকে নিজের কাঁধে বয়ে নিয়ে চলেছে হাতে টানা রিক্সাওয়ালাগুলো। ঘণ্টির ঠুং ঠুং শব্দে একজন মানুষ অন্য একজনকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে!

ষোড়শ শতকের শেষের দিকে জাপানের বিভিন্ন শহরে দেখা যেত এই হাতে টানা কাঠের রিকশা। সেখানে এই রিক্সার নাম ছিল ‘জিন-রিকি-শ’ অর্থাৎ, মানুষে টানা গাড়ি। কলকাতায় হাতে টানা রিক্সার আগমন ঘটে ১৯০০ সালে। সেই থেকে মিশে গেছে কলকাতার ঐতিহ্যর সঙ্গে। দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে ১৩০ টা বছর। ১৯ শতকে ব্রিটিশদের সঙ্গে সমানতালে কলকাতাকে শাসন করছিল এই হাতে টানা কাঠের রিকশা।

আরও পড়ুনঃ মৎস্যজীবিদের প্রশিক্ষন দিতে অভিনব উদ্দ্যোগ নন্দীগ্রাম-১ ব্লক মৎস্য বিভাগের

তবে এবার বোধহয় দিন ফুরিয়ে আসছে, কলকাতার এই ঐতিহ্যের।একসময় বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশ, ছত্তিশগড় থেকে হাজারো কৃষক কলকাতায় এসেছিলেন রুজির টানে।কিন্তু শহরবাসী তাঁদের কাঁধে চাপিয়ে দিলো বাড়তি এক ঐতিহ্যের বোঝা।

বিমল রায় তাঁর ‘দো বিঘা জমিন’ ছবিটিতে দেখিয়েছিলেন কিভাবে একজন কৃষক জমিদারের হাত থেকে নিজের জমিকে বাঁচাতে কলকাতায় হাতে টানা রিক্সাকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন । ছবিতে বিমল রায়, বলরাজ সাহানিকে দিয়ে কলকাতার রাস্তায় হাতে টানা রিকশা টানিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ মৎস্যমন্ত্রীর নিরলস পরিশ্রমে সুরক্ষিত হতে চলেছে ১৫ লক্ষ মৎস্যজীবীর জীবন

হাতে টানা রিকশার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ সালে ‘ক্যালকাটা হ্যাকনি ক্যারেজ অ্যাক্ট’ আইন চালু করেছিল। তখন থেকেই কলকাতায় লাইসেন্স করে হাতে টানা রিকশার চল শুরু হয়।

২০০৫ সালে ততকালিন সরকার বাতিল করে দেয় ‘ক্যালকাটা হ্যাকনি ক্যারেজ অ্যাক্ট’। ২০০৬ সালে স্বাধীনতা দিবসের দিন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হাতে টানা রিকশা তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।

তবে আইনে নিষিদ্ধ হলেও মানবিকতার খাতিরে এখনও বন্ধ করা যায়নি হাতে টানা রিক্সা!

তবে আর কয়েকটা বছর। একজন আরেক জনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে; এমন দৃশ্য আর হয়ত দেখা যাবে না ।কালের চাকায় বিলীন হয়ে যাবে মানুষে টানা রিকশার যাত্রা।ঠিক যেমনটা কয়েক দশক আগে হারিয়ে গিয়েছে ‘হুমনা হুমনা’ শব্দে কাঁধে বয়ে নিয়ে যাওয়া কাঠের পালকি।

১৯৫০ সালের পর থেকে নতুন করে কোনও রিকশাচালককে লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। ১৯৭২ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে অন্তত ১২,০০০ রিকশা বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। তারপরেও ১৯৯২ সাল নাগাদ কলকাতায় টানা রিকশার সংখ্যা ছিল অন্তত ৩০,০০০। এই সংখ্যা এখন চার হাজারের কাছা কাছি।

আরও পড়ুনঃ সত্যিকারের কৃষক বন্ধু হয়ত ভার্গিস কুরিয়েনই ছিলেন

কল্লোলিনী তিলোত্তমাকে ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে কতশত স্মৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য। ভিক্টোরিয়া, হাওড়া ব্রিজ , ট্রাম, হলুদ ট্যাক্সি কি নেই সেই তালিকায়। ! আধুনিকতা আর বনেদিয়ানা সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা এই শহরে গত কয়েক বছরে শহরে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু । তবে আজও বেঁচে আছে শহরের  ঐতিহ্যরা।

প্রবাল দাশগুপ্ত লিখেছিলেন ওহে ভাই রিক্সা ,আর কত ছুটবে,সকলে একদিন তোমারে ভুলিবে,রয়ে যাবে কোলাহল,আসবে নতুন একদল।

বিলুপ্ত হওয়ার অপেক্ষায় ধুঁকছে তিলোত্তমার এই নস্টালজিয়া।তবে আমার বিশ্বাস ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে হাতে টানা রিকশার কাহিনী।

Published On: 04 December 2022, 05:39 PM English Summary: Hand-drawn rickshaws are still running with the burden of tradition on their shoulders

Like this article?

Hey! I am Saikat Majumder. Did you liked this article and have suggestions to improve this article? Mail me your suggestions and feedback.

Share your comments

আমাদের নিউজলেটার অপশনটি সাবস্ক্রাইব করুন আর আপনার আগ্রহের বিষয়গুলি বেছে নিন। আমরা আপনার পছন্দ অনুসারে খবর এবং সর্বশেষ আপডেটগুলি প্রেরণ করব।

Subscribe Newsletters