পাট পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, ওড়িশার একটি গুরুত্বপূর্ণ নগদী ফসল এবং প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাট চাষের উপর নির্ভরশীল । পাটের উচ্চ উৎপাদনশীলতা, পাট চাষের যান্ত্রিকীকরণ, পাটের উন্নত প্রজাতির বিকাশ এবং উন্নত গুণমানের তন্তুর প্রাপ্যতার জন্য গবেষণার উদ্দেশ্যে কর্মরত ব্যারাকপুবের আইসিএআর সেন্ট্রাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর জুট অ্যান্ড অ্যালাইড ফাইবার্স (ICAR - CRIJAF) হল ভারত সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনে কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা বিভাগের অন্তর্গত একটি অন্যতম গবেষণা সংস্থা।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সতর্কীকরণ (Alert for jute farmers) -
আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব - মধ্য বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে যা ২৪-২৫ মে, ২০২১ সালের মধ্যে সুন্দরবনের নিকটবর্তী বঙ্গ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাব বেশিরভাগ দক্ষিণবঙ্গ জেলাগুলিতে পড়বে । ঘূর্ণিঝড়টি দুর্যোগপূর্ণ বাতাস এবং ভারী বৃষ্টিপাতের কারণ হতে পারে। কৃষকদের জমিতে থাকা ফসলগুলির মধ্যে পাটের এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ক্ষয়ক্ষতির সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা কারণ ঘূর্ণিঝড়জনিত বৃষ্টিপাত এবং বাতাসের গতিতে পাটের বৃদ্ধি ও ফসলের অবস্থান বিরূপভাবে প্রভাবিত হতে পারে ।
যদিও পাট ও সমৰগীয় তন্তু ফসলগুলির জন্য আইসিএআর - ক্রাইজাফ, ব্যারাকপুর নিয়মিত চাষীদের সুবিধার্থে কৃষি - পরার্মশ জারি করছে, কৃষকদের অবশ্যই আগে থেকেই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে পাটের জমিতে জল জমা এবং গাছের বৃদ্ধির উপর এর ক্ষতিকারক প্রভাব এড়ানো যায়।
ব্যারাকপুরের আইসিএআর - ক্রাইজাফের নির্দেশক ড : গৌরাঙ্গ কর কৃষকদের উত্পাদনের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে অগ্রিম কয়েকটি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানিয়েছেন । ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন ভারী বৃষ্টির কারণে জমা অতিরিক্ত জল যাতে স্থায়ীভাবে মাঠের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে, সেজন্য চ্যানেল তৈরি করে পাটের ক্ষেত থেকে জলের নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে ( চিত্র ১ ) | মাঠ থেকে তাড়াতাড়ি জল অপসারণের জন্য , মাঠের উপযুক্ত জল নিকাশীর পথটি জমির নীচের ঢালুর দিকে প্রস্তুত করতে হবে।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়কালে ভারী বৃষ্টি হওয়ার পরে, উচ্চ আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রার কারণে কান্ড পচা রোগের সমস্যা পাট ফসলে দেখা দিতে পারে। এইজন্য কৃষকদের অগ্রিম প্রস্তুতি নিতে হবে যাতে মাঠ থেকে সম্পূর্ণভাবে জল বের করে দেওয়ার পরে ৩০-৪০ দিনের পুরনো কম বয়সী চারাগুলিতে কার্বেনডাজিম @ ২ গ্রাম / লিটারের মতো প্রতিরক্ষামূলক ছত্রাকনাশক দিয়ে স্প্রে করা যায় যাতে ব্লাইট ও ডাম্পিং অফ জাতীয় রোগ থেকে ফসলকে বাঁচানো যায় ।
ইন্দো - গাঙ্গেয় সমভূমি এবং অন্যান্য পাট উৎপাদনকারী অঞ্চলে জলবায়ুর প্রবণতা ইঙ্গিত দেয় যে বছরের বেশিরভাগ সময় শস্য ঘূর্ণিঝড় এবং ভারী বৃষ্টিপাতের কবলে পড়ে যা পাটের উত্পাদনশীলতার জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এটি মাথায় রেখে, আইসিএআর ক্রাইজাফের বিজ্ঞানীরা কৃষকদের কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন,যেমন জমির মাটির ধরণ এবং ঢাল অনুসারে যথাযথ সমতলকরণ এবং নিকাশী ব্যবস্থা গ্রহণ, ফসলের উন্নত জাত চয়ন করা, সঠিক সময়ে বীজবপন করা, সারিতে বপন করা, গাছের যথাযথ ঘনত্ব বজায় রাখা, উপযুক্ত মাত্রায় সার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার করা, ফসলের নির্দিষ্ট বৃদ্ধির পৰ্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি রক্ষার জন্য ফসলের যথাযথ রন্ধণাবেক্ষণ করা ইত্যাদি। সর্তকতার সাথে বিবেচনা এবং এই জাতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ পাট উৎপাদনে অবশ্যই এই জাতীয় চরম জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবকে হ্রাস করবে ।
আরও পড়ুন - Black Fungus death - রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে প্রথম মৃত্যু, বাড়ছে উদ্বেগ!
আইসিএআর - ক্রাইজাফের নির্দেশক ডঃ গৌরাঙ্গ কর বলেছেন যে, পাট ফসলের উপর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলার জন্য তার সংস্থা কৃষকদের সাথে সকল প্রকার প্রযুক্তিগত সহায়তা/পরামর্শের জন্য দাঁড়িয়ে আছে । তিনি কৃষকদের পাট শস্য - এর সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য এবং পাট চাষের বিবিধ সমস্যা সমাধান করতে সংস্থা দ্বারা জারি করা পাক্ষিক কৃষি পরামর্শবলী অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন । এই কৃষি পরামর্শবলী সংস্থার ওয়েবসাইটে (https://crijaf.icar.gov.in/) দেওয়া হয়ে থাকে। ঘূর্ণিঝড় এবং ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাট ফসলে যে কোনও সমস্যা দেখা দিতে পারে , সেইজন্যও কৃষকদের আইসিএআর - ক্রাইঙ্গাদের বিজ্ঞানীদের পরামর্শ নিতে বলা হচ্ছে।
(সূত্র: ডঃ গৌরাঙ্গ কর, নির্দেশক, আইসিএআর - সেন্ট্রাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর জুট অ্যান্ড অ্যালাইড ফাইবার্স, ব্যারাকপুর , কলকাতা -৭০০ ১২১)
আরও পড়ুন - White Fungus: Black ফাঙ্গাসের থেকেও নাকি মারাত্মক ক্ষতিকর White ফাঙ্গাস
Share your comments