তুলোর ইংরেজি প্রতিশব্দ কটন যা আরবি (আল) কুতন্ থেকে উদ্ভূত। আনুমানিক ১৪০০ খ্রীষ্টাব্দে এ শব্দের প্রচলন ঘটে। অনেক অনেক বছর পূর্বে তুলার আবিষ্কার হয়েছে। তুলা মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রাচীনতম ফসলরূপে পরিগণিত। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক জানা যায় যে প্রায় সাত হাজার বছর পূর্বে তুলার ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে এর ব্যবহার অব্যাহত আছে। পৃথিবীর সকল দেশের, সকল শ্রেণীর মানুষ তুলা দিয়ে তৈরী কাপড় ও তুলাজাত অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করে আসছেন।
কার্পাস বয়ন শিল্প হলো ভারতের একটি অতি প্রাচীন শিল্প। কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে বিদেশি মুদ্রা অর্জন সহ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্প বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
নিম্নে ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পের সেই সমস্যা গুলো আলোচনা করা হলো-
১) কাঁচামাল বন্টনের সীমাবদ্ধতা ও মূল্য বৃদ্ধি:-ভারতের সর্বত্র কার্পাস চাষ হয় না। তাই বিদেশ থেকে ভারতকে কার্পাস তুলা আমদানি করতে হয়। আবার এদেশে যে অল্প পরিমাণে কার্পাস চাষ হয় তারও মূল্য দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ কার্পাস বস্ত্র উৎপাদনে ব্যয় বেশি হচ্ছে।
২) পুরানো যন্ত্রপাতির ব্যবহার:-ভারতের অধিকাংশ কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্রে এখনো পুরানো ও বাতিল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বস্ত্র উৎপাদন করা হয়। এর ফলে একদিকে যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে তেমনি কার্পাস বস্ত্রের উৎকর্ষতা কমে।
৩) অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ:-বিদ্যুতের অনিয়মিত সরবরাহ অন্যান্য শিল্পের ন্যায় ভারতের কার্পাস বস্ত্র বয়ন শিল্পেরও একটি গুরুতর সমস্যা। মাঝে মধ্যেই এদেশের কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্রগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে।ফলে উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।
৪) আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা:-আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে ভারতকে চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশের উৎপাদিত উৎকৃষ্টমানের ও সুলভ মূল্যের কার্পাস বস্ত্রের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববাজারে ভারতের কার্পাস বস্ত্রের চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।
৫) উৎকৃষ্ট কাঁচামালের অভাব:-কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হলো কাঁচা তুলো বা কার্পাস। ভারতে উৎপাদিত কার্পাস প্রধানত ক্ষুদ্র ও মাঝারি আঁশ বিশিষ্ট। এছাড়া এ দেশের চাহিদার তুলনায় কার্পাস উৎপাদনের পরিমাণও বেশ কম। তাই কাঁচামালের অভাবে এ দেশের কার্পাস বয়ন শিল্প ব্যাহত হচ্ছে।
৬) শ্রমিক অসন্তোষ:-ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পকে শ্রমিক অসন্তোষ সমস্যা জর্জরিত করে রেখেছে। ধর্মঘট, লকআউট,কর্মী ছাঁটাই ইত্যাদি এদেশের কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্রগুলির নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হওয়ায় মাঝে মধ্যেই কার্পাস বস্ত্র উৎপাদন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
৭) অন্যান্য সমস্যা:-
উপরিল্লিখিত বিষয়গুলি ছাড়াও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব, সুদক্ষ পরিচালন ব্যবস্থার অভাব, কার্পাস বস্ত্র পর সরকারের শুল্ক বৃদ্ধি, রুগ্ন শিল্পের সংখ্যা বৃদ্ধি, শিব অতীতের মূলধন বিনিয়োগ অনীহা ইত্যাদি বিষয়গুলো ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পের সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়।
Share your comments