চরম আর্থিক সংকটের মুখোমুখি প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা। মূল্যবৃদ্ধির ফলে তীব্র হাহাকার ও অরাজকতা চলছে শ্রীলঙ্কায়। বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন খাদ্য (rice), ওষুধ (Medicine), দুধের গুঁড়ো (Milk powder), রান্নার গ্যাস (LPG) এবং জ্বালানীর দাম ইতিমধ্যেই ছুঁয়েছে আকাশ। জ্বালানির অভাবে দিনে ৭ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পরিষেবা পাচ্ছেন না শ্রীলঙ্কা বাসীরা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যে, কেজি প্রতি চালের দাম ৫০০ টাকা। এক কেজি দুধের দাম ১৯৮০ টাকা। চিনি প্রতি কেজির দাম ২৯৪ টাকা। ইতিমধ্যেই ১৬ জন শ্রীলঙ্কান সমুদ্রপথে ভারতে এসে পৌঁছেছেন। এই ভাবে চলতে থাকলে ১৯৮৯ সালের গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার অশনি সংকেত পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশটি যে বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তার জন্য কোন জিনিসটি দায়ি এই নিয়ে বিভিন্ন সমীক্ষা চলেছে। তারমধ্যে অনেকেই মনে করেছেন জৈব চাষে স্থানান্তরিত হওয়ার জন্য এই চরম খাদ্য সংকট এই দেশে। তবে সত্যিই কি শ্রীলঙ্কার এই অবস্থার জন্য জৈব চাষ দায়ি নাকি বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা ভুলের কারণে অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে? এই প্রসঙ্গে কৃষি-অর্থনীতিবিদ এবং ICRIER-এর এক অধ্যাপক বলেন, “রাসায়নিক ছাড়া ৪ বিলিয়নের বেশি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব নয়। এখন আমরা 7.9 বিলিয়ন, আমরা কীভাবে বিশ্বকে খাওয়াব? জৈব কৃষি বিশ্বকে খাওয়াতে পারে না। জৈব কৃষিতে, বেশিরভাগ ফসলের ফলন সার দেওয়া ফসলের তুলনায় কম উৎপাদন হয়। জৈব পণ্যের মাধ্যমে সমগ্র দেশে সরবরাহ করতে হলে আমদানি এবং রপ্তানির পরিকাঠামো সঠিক ভাবে প্রস্তুত করতে হবে। এটাই শ্রীলঙ্কার সমস্যা। আমদানি করার মতো পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা তাদের নেই।
শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোতাবায়া রাজাপক্ষ 2019 সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় জৈব চাষ নিয়ে কৃষকদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেন। তারপরই 29শে এপ্রিল, 2021-এ, তিনি দেশের দুই মিলিয়ন কৃষককে রাতারাতি জৈব চাষে স্থানান্তরিত হওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি যখন ঘোষণা করেন, তখন শ্রীলঙ্কার তিন শতাংশেরও কম কৃষিজমি রাসায়নিক ছাড়াই চাষ করা হচ্ছিল । দেশের জৈব পদ্ধতিতে পরিবর্তন ও খাপ খাওয়ানোর জন্য সময়ের প্রয়োজন। সময়ের অভাবে সমস্যার সম্মুখীন হন কৃষকরা। বিশেষজ্ঞদের মতে দুর্বল অর্থনৈতিক নীতি, নিছক অদূরদর্শিতা এবং বিদেশি তহবিলের উপর অত্যধিক নির্ভরতার প্রভাব আগামী বছরগুলিতে শ্রীলঙ্কার 20.1 মিলিয়ন জনসংখ্যাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
আরও পড়ুনঃ “কৃষকরা ভিখারি নয়, ওদের আবেগ নিয়ে খেলবেন না”, ধান সংগ্রহ নিয়ে মোদীকে হুঁশিয়ারি কেসিআরের
প্রসঙ্গত, জৈব চাষও মোদী সরকারের একটি প্রকল্প। আমরাও কি ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছি? শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি দেখে সেই প্রশ্নই উঠে আসছে বার বার।
আরও পড়ুনঃ সার ব্যয়বহুল, ডিজেল ব্যয়বহুল, তাই চাষাবাদ করা অসম্ভব
Share your comments