একদা যার জীবনের লক্ষ্য ছিল ডাকাত হওয়ার, সেই মিলখা সিং হয়ে উঠেছিলেন ভারতের গর্ব | হ্যাঁ, জীবনযুদ্ধে ধাক্কা খেতে খেতে ভেবেছিলেন ডাকাত হবেন | চোখের সামনে রক্তের হোলিখেলায় লুটিয়ে পড়তে দেখেছিলেন বাবা, মা, এক ভাই এবং দুই বোনকে ৷ প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে শুরু করেছিলেন | ১৯২৯ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন গোবিন্দপুর এখন পঞ্জাবের মুজঃফরগড়ে |
দিল্লিতে তার দিদির কাছে ঠাঁই হয়েছিল অনাথ মিলখার | কিন্তু, বিনা টিকিটে রেলসফরে মিলখাকে যেতে হল তিহাড় কারাগারে ৷ গয়না বেচে ভাইয়ের মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন দিদি তবে, দিদির শশুরবাড়িতে তার আর জায়গা হয়নি | তখনই ভেবেছিলেন, তিনি ডাকাত হবেন ৷ সে ইচ্ছে পূর্ণ হল না দাদা মলখনের দৌলতে ৷ ভাইকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে পরামর্শ দিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদানের ৷
১৯৫১ সালে, চতুর্থ বারের প্রচেষ্টায় ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রবেশাধিকার পেলেন মিলখা ৷ সেকেন্দরাবাদে ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টারে শুরু হল কাজ ৷ জীবনের অভিধানে প্রথম বার পা রাখল ‘অ্যাথলেটিক্স (Legendary athlete) শব্দ৷ নতুন নিযুক্তদের মধ্যে বাধ্যতামূলক দৌড়ের ইভেন্টে তিনি ষষ্ঠ স্থান পেলেন ৷ শুরু হল তার জীবনের দৌড় | ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিক্সের সুযোগ ৷ ফিরেছিলেন পদকশূন্য কণ্ঠ এবং অভিজ্ঞতায় ভরপুর হৃদয় নিয়ে ৷
মিলখা সিং-র প্রাপ্তি (Achievements of Milkha Singh):
১৯৫৮-য় টোকিয়ো এশিয়ান গেমসে দু’টি সোনা ৷ স্বর্ণপদক এল ১৯৫৮ কমনওয়েলথ গেমসেও ৷ দেশবাসীর স্বপ্ন জমাট হচ্ছিল ১৯৬০-এর রোম অলিম্পক ঘিরে৷ কিন্তু ৪০০ মিটার ফাইনালের শেষে মিলখার নামের পাশে ‘ট্র্যাজিক নায়ক’-বিশেষণ ৷ সেকেন্ডের ভগ্নাংশের অমোঘ হিসেবে অধরাই থেকে গেল পদক | পাঞ্জাব সরকারের ক্রীড়া দফতরের অধিকর্তা হয়েছিলেন মিলখা |
মিলখা সিং-র সমাজ-সেবামূলক কাজ (Social works):
১৯৯৯ সালে দত্তক নেন কার্গিল যুদ্ধে নিহত শহিদের ৭ বছর বয়সি এক সন্তানকে ৷ দান করে দিয়েছেন অর্জিত পদক ৷ এখন সে সব সাজানো আছে পাতিয়ালা স্পোর্টস মিউজিয়ামে ৷ ১৯৬০ সালের অলিম্পিক্সে ব্যবহৃত জুতোও তিনি দিয়ে দিয়েছিলেন চ্যারিটি শো-এ ৷ নিজের বায়োপিকের জন্যেও মাত্র ১ টাকা সাম্মানিক নিয়েছিলেন মিলখা ৷ শর্ত দিয়েছিলেন ছবি থেকে লভ্যাংশের বড় অংশ দিতে হবে মিলখা সিং চ্যারিটেবল ট্রাস্টে ৷ যে ট্রাস্টের উদ্দেশ্য দরিদ্র ও অভাবী খেলোয়াড়দের সাহায্য করা ৷
আরও পড়ুন - Corona 3rd Wave: আগামী ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যেই দেশে আসছে করোনার তৃতীয় ঢেউ
বাড়ির এক পরিচারকের মাধ্যমে সংক্রমিত হন মিলখা এবং তাঁর স্ত্রী | গত ২০ মে কোভিডে আক্রান্ত হন। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর ৩০ দিনের মাথায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন কিংবদন্তি এই দৌড়বিদ। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর | স্ত্রী নির্মল কৌর পাঁচ দিন আগে প্রয়াত হন। তিনিও কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন |
নিবন্ধ: রায়না ঘোষ
আরও পড়ুন - PM on 7th international yoga day 2021: আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে বার্তা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর
Share your comments